v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-07 19:17:09    
এক টুকরোছোটো কাগজ এক মেয়ের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে

cri
    চীনের সেনসি প্রদেশের চেনআনজেলা চীনের এক গরিব জেলা,আর ফোংহোছুন চেনআন জেলার সবচেয়ে গরিব গ্রাম । ১৯৯৬ সালের শীতকালে ফোংহোছুন গ্রামের ছেলেমেয়েরা দেশের বিভিন্ন জায়গার দেয়া শীতের কাপড় পেয়েছে । প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ১১ বছর বয়সী মেয়ে ওয়াং ছুই এক তুলোর কাপড় পেয়েছে । যখন সে জ্ঞানেঅজ্ঞানে কাপড়ের পকেটে হাত ঢোকাল তখন সে পকেটে এক টুকরোছোটো কাগজ পেলো ।কাগজে লেখা ছিলো যে,"ছোটো বন্ধু,যখন তুমি এই কাপড় গায়ে পরবে,তখন আমাদের পরিচয় শুরু হবে । লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যদি তোমার কোনো অসুবিধা হয়,তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি । তুমি আমাকে চিঠি লিখে জানাতে পার । আমার নাম লি সিচিয়েন,আমি চীনা কৃষি ব্যাংকের নানচিং ছিংহুয়াই শাখা ব্যাংকে কাজ করি।"

    সেই সময় ওয়াংছুইর পরিবার সত্যি খুব গরিব ছিল ।কিন্তু তার বাবা মনে করেন যে,তাদের সহজে অন্য লোকের সাহায্য চাওয়া উচিত নয় ।তাই ওয়াং ছুই ও তার পরিবার নানচিংয়ের এই মায়ামমতাপূর্ণ লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি এবং ওয়াং ছুই ভাল করে কাগজটা সংরক্ষণ করে।

    ২০০১ সালের এক রাতে ওয়াং ছুইর ছোটো ভাই পাহাড়ের গিরিপথ অতিক্রম করার সময়ে অসাবধানে পাহাড়ের নিচে পড়ে যাওয়ায় তার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয় । গরিব হওয়ার কারণে ছোটো ভাইর জন্যে অপারেশন করার অর্থের অভাবে ছোটো ভাইর অবস্থা দিনদিন গুরুতর হয় । ঠিক এই সময় ওয়াং ছুইর মা পাঁচ বছর আগের ছোটো কাগজের কথা স্মরণ করেছেন। তিনি ভাবেন যে, এই অসুবিধার সময়ে সেই ভাল মানুষের সাহায্য পাওয়ার অনুরোধ করলে কেমন হয় ? কিন্তু ওয়াং ছুইর বাবা মনে করেন যে, কাগজ লেখার সেই ভাল মানুষের উদ্দেশ্য হল লেখাপড়ার ক্ষেত্রে মেয়েকে সাহায্য করা । এখন ছেলের চিকিত্সার জন্যে টাকাপয়সা প্রয়োজন । তাই তিনি মনে করেন যে,এ জন্যে তাদের অনুরোধ করা উচিত নয় । ওয়াং ছুইর পরিবার এবারও দূরের ভাল মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি । ছেলের চিকিত্সার অর্থ সংগ্রহের জন্যে ওয়াং ছুইর বাবা বাধ্য হয়ে বাইরে মজুরি করতে যান । বাবা প্রাণপণ প্রচেষ্টা করলেও ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারেননি ।

    পরিবারের কষ্ট ও অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে ওয়াং ছুই বড় হয়েছে এবং আগের চেয়ে আরও বেশি প্রচেষ্টা করে লেখাপড়া করতে শুরু করেছে । ২০০৫ সালে ওয়াং ছুই ৫৮৭ পয়েন্ট দিয়ে উত্তর-পূর্বকৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রী হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে বছরে কমপক্ষে ৫-৬ হাজার ইউয়ান লাগবে । এটা এই গরিব পরিবারের এক বিরাট বোঝা । এ জন্যে ওয়াং ছুইর বাবামা অত্যন্ত চিন্তিত হন । হঠাত ৯ বছর ধরে সংরক্ষিত ওই ছোটো কাগজের কথা ওয়াং ছুইর মনে পড়ল । তারা বারবার আলোচনা করার পর নানচিংয়ের ওই ভাল মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    ২০০৫ সালের ২২ আগষ্ট সকালে নানচিং কৃষি ব্যাংকের ছেংনান শাখা ব্যাংকেরলি সিচিয়েন সেনসি থেকে পাঠানো এক চিঠি পান । চিঠিতে লেখা ছিলো, লি চাচা, ৯ বছর আগে আপনি এক তুলার কাপড়ের পকেটে এক ছোটো কাগজ রেখে দিয়েছিলেন কথাটা আপনার মনে আছে ?"লি সিচিয়েন ৯ বছর আগে সেই কাগজ লেখার লোক বটে,কিন্তু তিনি একজন চাচা নন তিনি একজন খালাম্মা। ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে কৃষি ব্যাংক দারিদ্র্য পাহাড়ী অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের ভালবাসার তত্পরতা চালায় । লি সিচিয়েন এক বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকার ছেলেমেয়েদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি নিজের ছেলের কয়েকটা কাপড় বেছে নিলেন এবং এক ছোটো কাগজ লিখে তুলার কাপড়ে ঢুকিয়ে দিলেন । তিনি ভাবতে পারেন নি যে, ৯ বছর পর এই কাগজের উত্তর আসবে ।

    সাহায্য পাবার চিঠির জবাবের অপেক্ষায় ওয়াং ছুই অস্থির । যখন ওয়াং ছুইর হতাশ হয় ঠিক সেই সময় ওয়াং ছুই লি সিচিয়েনের ফোন পেলো। কিন্তু ওয়াং ছুই জানতে পারে না যে , লি সিচিয়েনের পরিবারের অবস্থা আর আগের মতো নয় । তার স্বামী কর্মচ্যুত হয়ে মাসে মাত্র ২০০ ইউয়ান ভর্তুকি পান । তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষেপড়ছে । লি সিচিয়েন নিজের বেতন দিয়ে গোটা পরিবারের সংসার চালাছেন। তা সত্বেও ওয়াং ছুইর চিঠি পেয়ে লি সিচিয়েন সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক তাকে পুরস্কৃত করার ২০০০ ইউয়ান ওয়াং ছুইকে পাঠালেন ।

    লি সিচিয়েন আর্থিক দিক থেকে যে পাহাড়ী এলাকার মেয়ে ওয়াং ছুইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে সাহায্য করছে তা কৃষি ব্যাংকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ।লি সিচিয়েনের সহকর্মীরা ছোটো কাগজের গল্পে মুগ্ধ হন এবং স্নেহ ও মায়ামমতাপূর্ণ এমন এক সহকর্মী থাকার কারণে গর্বিতহন । সহকর্মীরা স্বেচ্ছায় ওয়াং ছুইর জন্যে চাঁদা জমা দেন । মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ওয়াং ছুইর প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা সংগ্রহ হল ।

    নানচিংয়ের ভাল মানুষ লি সিচিয়েন ও তার সহকর্মীদের সাহায্যে অবশেষে ওয়াং ছুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারল । যাতে ওয়াং ছুই সুষ্ঠুভাবে পড়াশুনা সম্পন্ন করতে পারে তার জন্যে নানচিং কৃষি ব্যাংক আলোচনার পর ওয়াং ছুইকে তার চার বছরের প্রয়োজনীয় শিক্ষার ফি সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর লি সিচিয়েন ও নানচিং কৃষি ব্যাংকের নেতারা বিশেষভাবে উত্তর-পূর্বকৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াং ছুইকে দেখতে যান এবং এই সুখবর তাকে জানান । অবশেষে ৯ বছর আগের এক ছোটো কাগজের বন্ধনে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দুজনের প্রথম দেখা হয়েছে।

    ওয়াং ছুই অত্যন্ত খুশী ও সুখী । আগে শুধু স্বপ্নে নিজের পুষ্ঠপোষকেরদেখা পেতো , অবশেষে আজ সত্যিকারভাবে তাঁকে পেয়েছে । নিজে যেন স্বপ্নেই আছে বলে ওয়াং ছুই মনে করে । এর পর ওয়াং ছুই লি সিচিয়েনকে মা ডাকে আর লি সিচিয়েন এতে অভিভূত হন । তিনি ভাবতে পারেন নি যে ,৯ বছরের এক ছোটো কাগজ এক মেয়ের ভাগ্য পরিবর্তন করবে ।