v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-06 15:36:50    
পেইচিংএর হুঠন

cri
    বন্ধুরা, পেইচিংএ একটি প্রবাদ আছে। এই প্রবাদ এই যে, ' পেইচিংএর হুঠন অথবা গলিতে না গিয়ে পেইচিং সম্বন্ধে আপনার কোনোজ্ঞান থাকে না , পেইচিংএর গলিতে না গিয়ে পেইচিং সফর ব্যর্থ হয়'। পেইচিং শহরে অনেক ছোট-বড় গলি আছে। এ সব গলি নাড়ীর মতো সারা পেইচিং শহরে ছড়িয়ে পড়ে। গলি হল পেইচিং শহরের স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । চীনের অন্যান্য জায়গা থেকে আসা পযর্টকরা যদি পেইচিং শহরের পুরাতন সংস্কৃতি আর রীতিনীতি অনুভব করতে চান তাহলে তাদেরকে পুরাতন পেইচিংএর গলিগুলোতে যেতেই হবে।

    জানা গেছে, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পেইচিং ইউয়ান রাজবংশের রাজধানী হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার পর গলির আবির্ভাব হয়। তখনকালের শাসক ছিল মংগোলীয় জাতি। মংগোলীয় ভাষায় গলিকে হুঠন বলা হত। মংগোলীয় ভাষায় হুঠংয়ের অর্থ হল ' কুয়ার' । কুয়ার অবস্থানস্থল অনুযায়ী পেইচিংএর প্রথম সময়পর্বের গলিগুলো নির্মিত হয়। কারণ তখনকার মানুষের ধারণা অনুসারে, প্রত্যেক হুঠংয়ে একটি কুয়ার থাকতে হবে। শত শত বছরের পরিবর্তন আর উন্নয়ন ঘটার পর এখন হুঠং উত্তরচীনের শহরগুলোর ছোট রাস্তার নাম । পেইচিংএর হুঠং সাধারণত পূর্ব-পশ্চিম বিস্র্তীণ হয় । প্রন্থ সাধারণত ন'মিটারের কাছাকাছি। অতীতে হুঠংয়ের দু'পাশের স্থাপত্য প্রায়ই চক মেলানো বাড়ী। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, চক মেলানো বাড়ী হল পেইচিংএর সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাসভবন

    আপনি যে আওয়াজ শুনছেন তা হল পেইচিংএর হুঠং থেকে আসা ফেরিওয়ারার হৈচৈ। যারা পেইচিংএর হুঠংএ থেকেন তারা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন যে ফেরিওয়ারা জিনিসপত্র বিক্রি করতে এসেছেন।অতীতে পেইচিংএর হুঠংএ সারা বছর এই হৈচৈ শোনা যেত। এমন কি রাতবেলায়ও এই হৈচৈর অন্ত ছিল না। সে সময় হুঠংএ বসবাসরত লোকেরা যদি কোনো সিনিজপত্র কিনতে চান হাহলে হুঠং থেকে বের না হয়ে ফেরিওয়ারাদের কাছ থেকে জিনিসপত্র পেতে পারতেন। সুতরাং এ কথাও বলা যায় যে হুঠং যেমন পেইচিংবাসীদের বাড়ী থেকে বের হওয়ার পথ তেমনি স্থানীয় রীতিনীতিসম্পন্ন একটি জাদুঘর। এখানে স্থানীয় লোকের জীবনযাবনের রীতিনীতি দেখতে পাওয়া যায়।

    পেইচিংএ অসংখ্য হুঠং আছে। এখানে এমন একটি কথা প্রচলিত হয় যে, " বিখ্যাত হুঠংর সংখ্যা ৩৬০ , সাধারণ হুঠংর সংখ্যা গুরুর লোমের মতো"।এক সময় পেইচিংএ হুঠংর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজারেও বেশী । বাইরের দিকে দেখলে পেইচিংএর হুঠং একই রকমের। মনে হয় এ সব হুঠংর মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। আসলে প্রত্যেক হুঠংর নিজস্ব গল্প আছে। রীতিনীতিবিদ লি মিন ডে বলেছেন, হুঠংগুলোর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নামতে অতীতের জীবন প্রতিফলিত হয়। কোনো কোনো হুঠংর নামতে লোকেদের আশা-আকাংক্ষাও লুকিয়ে থাকে। তিনি বললেন,

    একটি হুঠংর নাম " শত ফল "। নামটা শুনতে খুব সুন্দর। যদি কোনো একটি হুঠংয়ে এক সময় কোনো একজন বিখ্যাত ব্যক্তি বসবাস করতেন, তাহলে এই লোকের নাম দিয়ে হুঠংর নাম দেওয়া হয়।

    লি মিন ডে বলেছেন, একটি হুঠংর আকার দেখতে একটি বাঁশির দন্ডের মতো। সুতরাং এই হুঠংয়ের নাম বাঁশির দন্ড হুঠং। বতর্মানে পেইচিংএর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পুরাতন গলি-- হুঠং পেইচিংএর সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতি বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকেদের আকর্ষণ করেছে। চীনের নাম-করা চিত্রকর খাওয়াং হান যিনি হুঠং আঁকারের বিশেষজ্ঞ তিনি বলেছেন, তিনি দক্ষিণ চীনে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু পেইচিং আসার পর এখানকার হুঠং আমাকে মগ্ধ করেছে।তিনি বলেছেন,

    পেইচিংএর হুঠং স্বয়ং একটি শিল্পকলা। হুঠংএর ইতিহাস শতাধিক বছরের । কষ্ট পোহানো একজন বুড়োর মতো হুঠংয়ে সময়ের পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। এটা ঠিক হুঠংয়ের বৈশিষ্ট্য। হুঠংয়ে উপস্থিত থাকলে ভিতরের বিশাল অবকাশ অনুভব করতে পারি।

    পেইচিংএর হুঠংয়ের মধ্যে শিসা হাই হ্রদের নিকটবর্তী হুঠং দেখার মতো জায়গা। শিসা হাই হ্রদ পেইচিং শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। এই হ্রদ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। দু'টি হ্রদের মাঝখানে একটি ছোট কিন্তু সুক্ষ্ম সেতু । এই সেতুর নাম ইয়েনডিন সেতু। এই সেতুর চারদিকে দৃশ্য খুবই সুন্দর। এই সেতুতে দাঁড়িয়ে দূরের দৃশ্য তাকালে মনোরম লাগে। যখন আকাশে মেঘমুক্ত তখন দূরের পাহাড়ের আকার স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। শিসা হাই হ্রদের চার পাশে অনেক অক্ষতভাবে সংরক্ষিত হুঠং আর চক মেলানো বাড়ী আছে। এ সব স্হাপত্যের মধ্যে কয়েকটি বিখ্যাত ব্যক্তির পুরাতন বাসভবন দেখার মতো জায়গা।

    বিগত বেশী কয়েক বছর ধরে শহরের গঠনকাজের উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেইচিং শহরে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যা উচু উচু অট্রালিকা গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে হুঠংর সংখ্যা আপনাআপনি কমে গেছে। বতর্মানে পেইচিং শহরের মিনিসিপো কয়েকটি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হুঠং রক্ষা করার জন্যে প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা নিয়েছে। সাধারণ লোকেরা যাতে পুরাতন পেইচিংএর জীবন ভালভাবে জেনে ফেলতে পারেন সেই জন্যে পেইচিং শহরের পযর্টন ব্যর্রো " হুঠং ভ্রমণ" প্রকল্প চালু করেছে। যেমন রিকশা নিয়ে পযর্টকদের পেইচিংএর হুঠংয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, চক মেলানো বাড়ীতে ঢুকে চা আস্বাদন করা এবং পুরাতন পেইচিংএর গল্প শুনানো।

    গুনটের ওয়েন একজন জমার্ন । তিনি আগের সঙ্গে সংবাদদাতাকে বলেছেন, রিকশায় বসে পেইচিংএর হুঠংগুলোতে পরিদর্শন করা শুধু সুবিধাসজন তাই নয়, ভালভাবে হুঠং দেখতে পারা যায়। তিনি বলেছেন.

    আমি ভারতে এ ধরনের রিকশা দেখেছি। খুব ভাল। যখন মানুষ রিকশায় বসে হুঠং পরিদর্শন করেন তখন হুঠংয়ের যে কোন দিক দেখতে পারেন। হুঠং হচ্ছে পেইচিংএর বৈশিষ্ট্য। আকাশচম্বি অট্রালিকা আর বাণিজ্যিক এলাকার তুলনায় আমি পেইচিংএর হুঠং আরও পছন্দ করি।

    এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, শিসা হাই এলাকায় পরিদর্শন করার সময় রিকশা হল বিদেশী এবং চীনের অন্যান্য জায়গা থেকে আসা পযর্টকদের প্রধান যানবাহন।