v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-07 11:30:45    
থিয়ান ছাং জে ও তার থু চা জাতির রীতি-নীতি যাদুঘর

cri

 পঞ্চাশাধিক বছর বয়স্ক থিয়ান ছাং জে চীনের হু পেই প্রদেশের থু চা জাতির একজন কৃষক । গত শতাব্দির আশির দশক থেকে তিনি নিজের খরচে নিজ জাতির সংগে সম্পর্কিত পুরাকীর্তি সংগ্রহ করতে শুরু করেন । কয়েক বছর আগে তিনি নিজের লৌকিক আচার যাদুঘর গড়ে তুলেছেন ।

 সংবাদদাতা হু পেই প্রদেশের ই ছাং শহর থেকে গাড়িতে করে তিন ঘন্টা পর ছাং ইয়াং থু চা জাতি স্বায়ত্ত শাসিত জেলায় প্রবেশ করলেন। গাড়ি উঁচু উঁচু পর্বতমালার মধ্যে ঘুরে ঘুরে চলল । সংবাদদাতা পাহাড়ের মাঝখানের দিক থেকে নীচে দেখলেন , উপত্যকায় তিন তলা বিশিষ্ট একটি সাধারণ দালান আছে । দালানের সামনের কৃষি জমিতে শাক-সবজি চাষ করা হয় । কৃষি জমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রস্তর স্তম্ভ । এর শীর্ষস্থলে জড়িয়ে আছে সিমেন্ট দিয়ে তৈরী একটি সাপের স্থাপত্য । এটাই থিয়ান ছাং জে নির্মিত থু চা জাতির লৌকিক আচার যাদুঘর ।

 থিয়ান ছাং জের জন্মস্থল ছাং ইয়াং জেলার চি ছু থানার চি লিয়াং ইউয়ান গ্রাম । যৌবনকালে তিনি কৃষি কাজ করতেন , জেলার মদ কারখানায় প্রযুক্তিবিদ , রাস্তা মেরামতের শ্রমিক , আলোকচিত্র শিল্পী ইত্যাদি পদে চাকরি করেন। তিনি খাটো , কিন্তু তার ধী শক্তি মন্দ নয় এবং তিনি পরিশ্রমী আর কর্মঠ । গত শতাব্দির আশির দশকের প্রথম দিকে চীনে তৃতীয় আদম শুমারী চলছিল । তদন্ত থেকে বোঝা যায় , থিয়ান ছাং জে আর বহু গ্রামবাসী আসলে থু চা জাতির । এর আগে তাদের হান জাতির অধিবাসী বলে ধার্য করা হয়েছিল । এতে তার কৌতূহল বেড়ে গেছে । তিনি বলেছেন , ১৯৮৩ সালের আগে আমরা আদৌ জানতাম না , আমরা নিজেরা থু চা জাতির মানুষ। জন্মকালে আমাদেরকে হান জাতি বলে নির্ধারণ করা হয় । নিজের ইতিহাস আর পরিচিতি স্পষ্টভাবে জানার লক্ষ্যে তিনি পুরাকীর্তি সংগ্রহ করতে শুরু করলেন ।

 তিনি কম দামে একটি পুরানো ক্যামেরা কিনলেন । তিনি অন্যদের জন্য ছবি তোলার ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতেন । তিনি খাবার নিয়ে পাহাড়ী গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন । আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে তিনি যেখানে সেখানে বিভিন্ন জাতির পুরাকীর্তি আর রূপকথা সংগ্রহ করতেন । এই সময়ের মধ্যে তিনি পাহাড়ে দুটো প্রস্তর মূর্তির সন্ধান পেয়েছেন । এই দুটো সাধারণ প্রস্তর মূর্তি নয় , রূপ কথা অনুযায়ী , এই দুটো প্রস্তর মূর্তি থু চা জাতির প্রতিষ্ঠাতা দু'জন দেবতার মূর্তি ।

 বছরের পর বছর থিয়ান ছাং জে নিরলসভাবে পুরাকীর্তি সংগ্রহ করতেন । অন্যদের জন্য ছবি তুলে যে আয় হতো , তিনি তা ব্যবহার করে পুরাকীর্তি কিনতেন । তার সংগৃহীত পুরাকীর্তির রকমারিতাও ধীরে ধীরে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠলো। প্রথমে তিনি প্রধানতঃ ধর্মীয় উপাসনার সামগ্রী সংগ্রহ করতেন । পরে এর ভিত্তিতে তিনি নানা রকম প্রাচীন গ্রন্থ , বংশ বিষয়ক বিবিধ তথ্য ও দলিল , নিত্য জীবনযাপনে ব্যবহার্য পণ্যদ্রব্য, জামা -পোশাক, অলংকার , কৃষি হাতিয়ার ও সরঞ্জাম , প্রাচীনকালের অস্ত্র ইত্যাদি দশাধিক জাতের পুরাকীর্তিও সংগ্রহ করতে শুরু করতেন । ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে জেলার যাদুঘরে থিয়ান ছাং জের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি সংক্রান্ত একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় । এই প্রদর্শনীতে মোট ছ'শোটিরও বেশি পুরাকীর্তি দেখানো হয় । প্রদর্শনী শেষে তিনি এই সব পুরাকীর্তি জেলার যাদুঘরের কাছে উপহার দেন । তিনি বলেছেন , পুরাকীতি সংগ্রহের লক্ষ্য জাতির ইতিহাস দেখানো , এর মাধ্যমে উপকার ও মুনাফা পাওয়া নয় । জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা আর তা সম্প্রসারিত করার জন্য এই সব পুরাকীর্তি বিক্রি করা যাবে না । কারণ এই সব মূল্যবান পুরাকীর্তি আমাদের পুরো থু চা জাতির উত্তরাধিকার ।

 সংগৃহীত ও সংরক্ষিত সব পুরাকীর্তি বিনা পয়সায় জেলার যাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করার পর থিয়ান ছাং জে অভূতপূর্ব কষ্ট পেয়েছেন । তার কথা অনুযায়ী , যেন মায়ের কাছ থেকে তার প্রিয় সন্তান সরিয়ে নেয়া হয়েছে । তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তার স্ত্রী থাং তাও স্যু পুরাকীর্তি সংগ্রহ অব্যাহত রাখতে তাকে উত্সাহ দিলেন ।

 দশাধিক বছর চলে গেছে । থিয়ান ছাং জে আরো সহস্রাধিক পুরাকীর্তি সংগ্রহ করলেন । তিনি সংরক্ষিত আচার ব্যবহার বিষয়ক পুরাকীর্তিভিত্তিক কতকগুলো কাহিনী ও গ্রন্থ রচনা করলেন ।

 ২০০০ সালের বসন্ত উত্সবে থিয়ান ছাং জের সংরক্ষিত থু চা জাতির শতাধিক পোশাক হু পেই প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্ম কমিশনের মনোযোগ আকর্ষণ করল । একই বছরের জুন মাসে তিনি থু চা জাতির পক্ষ থেকে ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিনে অনুষ্ঠিত চীনের সংখ্যালঘু জাতির পোশাক ও অলংকার বিষয়ক প্রথম মেলায় অংশ নেন । এই মেলায় হু পেই প্রদেশের পক্ষ থেকে যে ৭১টি পুরাকীর্তি দেখানো হয় , তার মধ্যে ৬৮টি থিয়ান ছাং জের । মেলা চলাকালে কেউ কেউ চড়া দামে তার যাবতীয় পুরাকীর্তি কিনতে চান । কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন ।

 ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থিয়ান ছাং জের পক্ষে একটি উদযাপনযোগ্য দিবস । স্থানীয় সরকারের আর্থিক সাহায্যে থু চা উপজাতির লৌকিক আচার বিষয়ক পুরাকীর্তি যাদুঘর উদ্বোধন হয় । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লোক শিল্পীরা থু চা জাতির চিত্তাকর্ষক ও বৈচিত্র্যময় নাচ -গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো সুর পরিবেশন করলেন ।

 সংবাদদাতা ঘরোয়া পরিবেশপূর্ণ এই যাদুঘর পরিদর্শন করলেন । এই তিন তলা দালানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার প্রদর্শনীতে দেয়ালে থু চা উপজাতির প্রাচীন পোশাক ,কাচের আলমারিতে প্রাচীন মুদ্রা ও অলংকার ঝলমল করছিল । জায়গার অভাবের কারণে প্রাচীন আসবাব পত্র বিশেষ একটি জায়গায় স্তূপীকৃত রয়েছে । কিন্তু প্রদর্শনীতে প্রতিটি পুরাকীর্তিতে প্রাচীন ও ঐতিহ্যিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হচ্ছিল । তার সংরক্ষিত পুরাকীর্তি প্রসংগে থিয়ান ছাং জে বলেছেন , গত বিশাধিক বছরে বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী থিয়ান ছাং জে তার যাবতীয় আয় পুরাকীর্তি সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন । গত কয়েক বছরে সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক পন্ডিত আর পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞসহ প্রায় দশ হাজারেরও বেশি লোক তার প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন । তাদের প্রশংসায় থিয়ান ছাং জে জীবনযাপনের বাধা-বিঘ্ন ভুলে গেছেন । এখন তিনি তার যাদুঘর জেলা শহরে স্থানান্তর করার একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছেন , যাতে তা পুরাকীর্তির সংরক্ষণের পর্যটকদের পরিদর্শনের সুবিধার অনুকূল হতে পারে ।