পয়লা জুলাই হলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৮৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । এ উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে চীনে নানা ধরনের উদযাপন কমর্সূচী গ্রহন করা হয়েছে ।
চীনের জাতীয় যাদুঘরের এক প্রদর্শনী কক্ষে একটি লাল রংয়ের নৌকা মনোরম হ্রদের পটভূমিকায় রাখা হয়েছে । এই নৌকার দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার , চওড়া তিন মিটার । পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের চিয়া সিং শহরের নান হ্রদে নোঙর করা একটি নৌকার অনুকরণ করে এই নৌকা তৈরী করা হয়েছে । ১৯২১ সালের জুলাই মাসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নান হ্রদের একটি লাল রংয়ের নৌকার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় । ৮৫ বছর পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৮৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী চীনের জাতীয় যাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয়েছে । এই প্রদর্শনীতে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে । এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদশর্নীর দায়িত্বশীল ব্যক্তি সিয়া পাও লুন আবেগের সঙ্গে বলেছেন , ৮৫ বছর আগে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা চীনা বিপ্লবের ইতিহাসে এক বড় ঘটনা । গত ৮৫ বছরে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি নানা ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছোট ও দুর্বল থেকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টি চীনের জনসাধারণকে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় স্বাধীনতা ও মুক্তি অজর্ন করেছে এবং সাফল্যের সঙ্গে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে ।
উনিশ শ' শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে চীন এক সামন্ততান্ত্রিক দেশ থেকে আধা উপনিবেশবাদী আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশে পরিণত হয় । এর পরের শতাধিক বছরে চীন অস্থিরতার মধ্যে ছিল । আফিম যুদ্ধ , চীনের বিরুদ্ধে আটটি দেশের যুক্তবাহিনীর আক্রমণ , দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধবাজদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ আর জাপানের আগ্রাসী যুদ্ধের দরুণ চীনা জনগণ দুঃখদুদর্শায় জর্জরিত ছিলেন । তাই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা অজর্নের নীতি প্রণয়ন করেছে , তা' চীনা জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ , এই নীতি জনসাধারণের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে ।
১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চীনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে । গত শতাব্দীর পঞ্চাম ও ষাটের দশকে চীন কঠিন অবস্থায় নিজের শক্তির উপর নির্ভর করে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার পথ অন্বেষন করেছে । সওরের দশকে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির গুরুতর ভুলের কারনে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল । আশির দশকে চীন সংস্কার নীতি কার্যকরী করতে শুরু করে । তখন থেকে চীন অর্থনীতির উন্নয়নকে নিজের প্রধান কাজ হিসেবে নির্ধারণ করে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে ।
চীনের জাতীয় যাদুঘরের এই প্রদর্শনীতে ২৬০টিরও বেশী আলোকচিত্র ও বস্তু দেখানো হয়েছে । এতে দশর্করা যেমন চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার সময়কার দৃশ্য , তেমনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের ঘটনাগুলোর ছবি দেখতে পারেন । প্রদশর্নীর দশর্কখাতায় দশর্করা প্রদর্শনী দেখে নিজের মনের কথা লিখেছেন । কিছু কিছু দশর্ক আমাদের সাংবাদিকদের বলেছেন , চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি এক ছোট নৌকা থেকে একটি বড় পার্টিতে পরিণত হয়েছে । কমিউনিষ্ট পার্টি ছাড়া নয়া চীনের অস্তিত্ব থাকবে না ।
প্রদশর্নী ছাড়া গত মাস থেকে বিশটিরও বেশী ছায়াছবি দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখানো হয়েছে । এই সব ছবির মধ্যে আছে ' চান সি তে ' , ' রেন ছাং সিয়া ' ' চেন ফেই মিং ' , ' জীবনমরণ নিউ ইয়ু রু ' আর ' ঘোড়ার পীঠের আদালত ' । এই সব ছবিতে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যদের কাহিনী বণর্না করা হয়েছে । এই সব ছবির চরিত্রের মূল মূর্তি দরিদ্র পাহাড়ী অঞ্চলের শিক্ষক , প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদালতের কর্মী ও ডাক্তার । তারা জনগণের স্বার্থের জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসজর্ন করেছেন ।
২৫ জুন থেকে পেইচিংয়ে পিকিং অপেরা , ইউ অপেরা , ফিংচু অপেরা ও নাটকসহ মোট দশটি আধুনিক অপেরা অনুষ্ঠান পেইচিংয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে । চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রচার বিভাগের প্রধান ইয়াং চি চিং বলেছেন , এই সব অপেরায় গত ৮৫ বছরে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির অনন্যসাধারণ অবদানের প্রশংসা করা হয়েছে । এই সব অপেরার মধ্যে আছে নাটক ' হলুদ মাটির প্রশংসা ' , ' নৃত্যনাট্য ' সিল্ক তুলোর ঘটনা ' , পিকিং অপেরা ' হুয়া চি লিয়াং ' ও ' গ্রাম নেতা লি থিয়েন ছেং ' । এই সব অপেরায় বিপ্লবের সময় শত্রুর বিরুদ্ধে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যের বীরত্ব আর সমাজতান্ত্রিক গঠনকাজে তাদের নিস্বার্থ ও নিরলস প্রচেষ্টার কাহিনী বণর্না করা হয়েছে ।
পেইচিং ছাড়া চীনের বিভিন্ন জায়গার জনসাধারণ পার্টির ৮৫তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উপলক্ষে নানা ধরনের কমর্সূচী নিয়েছেন । উওর চীনের অন্তমঙ্গলিয়া স্বায়তশাসিত অঞ্চলের সেন তুং কয়লা খনি একটি সংগীত প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে । শ্রমিক খাং সেন লে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার মা বার বার তাকে বলেছেন , ১৯৪৯ সালের আগে তার পরিবার অত্যন্ত গরীব ছিল । তারা গ্রামে থাকত , জমিদার তাদের অত্যাচার করত । ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর খাং সেন লে ও তার পরিবারের জীবনের আমূল পরিবতর্ন এসেছে । তিনি বলেছেন , কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আমার অনুভুতি গভীর। আমার মা প্রায়ই আমাদেরকে কমিউনিষ্ট পার্টি ও আমার পরিবারের দুঃখজনক ইতিহাস বলেন । এ কথা বলা যায় , কমিউনিষ্ট পার্টি আমার পরিবারকে বাঁচিয়েছে । চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি এক মহান পার্টি , কমিউনিষ্ট পার্টি জনগণের জন্য কাজ করেন । তাই আজ আমি আমার হৃদয় দিয়ে কমিউনিষ্ট পার্টির জয়গান করছি ।
|