v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-05 14:43:02    
সুরের ভুবন

cri

    তিব্বতী জাতি হচ্ছে চীনের ৫৬টি জাতির অন্যতম । তার লোকসংখ্যা ৪০ লক্ষেরও বেশি, তিব্বতীরা প্রধানত দক্ষিণপশ্চিম চীনের ছিংহাই- তিব্বত মালভূমিতে বসবাস করেন । দীর্ঘকালের ঐতিহাসিক বিকাশে মালভূমির বিশেষ ভৌগোলিক পরিবেশের জন্যে তিব্বতীরা তাঁদের নিজয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতি সৃষ্টি করেন । আজকের অনুষ্ঠানে আমরা কয়েকটি সুন্দর গানের মাধ্যমে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে প্রবেশ করে তিব্বতী জনগণের বর্ণাঢ্যজীবন অনুভব করবো । উদাত্ত তিব্বতী "পশুপালকের গান" আপনাদের বিস্তীর্ণ ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে নিয়ে যাবে । এই গান হচ্ছে পশুপালকদের জীবনের রেকর্ড। তারা গানের মাধ্যমে নিজেদের আনন্দ ও দুঃখ প্রকাশ করেন । আপনারা এখন শুনতে পাচ্ছেন উত্তর তিব্বত অঞ্চলের পশুপালনের সময়ে পশুপালকদের গাওয়া গান । গানের কথা এমনি: "ঘোড়া বেঁধে দেয়ার দীর্ঘ দড়ি হচ্ছে উত্তম যোগসূত্র, চার বছর বয়সী ঘোড়ার বাচ্চা হচ্ছে রত্ন। প্রশস্ত ভেড়ার খোঁয়াড় হচ্ছে উত্তম যোগসূত্র, তিন বছর বয়সী নারী ভেড়ার বাচ্চা হচ্ছে রত্ন।পানি ও ঘাসে সমৃদ্ধ পাহাড় হচ্ছে ভেড়াদের প্রজননের স্থান। তিব্বতীয় লোকেরা প্রাকৃতিক দিক থেকে প্রধানত দুরুহ মালভূমিতে বসবাস করেন । বলে তাঁদের বেঁচের থাকার অদম্য মনোবল, শক্তিশালী স্বাস্থ্য ও বিশেষ উত্পাদন ও জীবনযাত্রার পদ্ধতি রয়েছে । অতীতে তিব্বতী লোকদের বাড়িঘরের ভিত্তিস্তর স্থাপনের সময়ে বিশেষ স্থানীয়আগা মাটি দিয়ে তৈরী করা হতো । এই মাটি দিয়ে তৈরি স্থানীয় ঘরবাড়ি খুব মজবুত এবং গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা হয় এবং শীত্কালে গরম হয় । আগা মাটির ভিত্তিস্তর স্থাপনের সময়ে লোকেরা দুই লাইন দাড়িয়ে বা চক্রাকারে দাঁড়িয়ে হাতে কাঠের হাতুড়ি দিয়ে মাটির ওপর আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে গান করেন । গানের সুর সুন্দর ,ছন্দ স্পষ্ট, লোকদের ভাবভঙ্গী একই এবং সুশৃংখল। দর্শকরা সহজেই বুঝতে পারবে না যে, তাঁরা কি ভারী শ্রম করছেন না সুন্দর নাচ-গান করছেন । এখন আমরা তিব্বতী গায়ক ইয়াতুং'র কন্ঠে "দেয়ালে আঘাত হানার গান"শুনবো । গানের কথা এমনি : " মেয়ে ও ছেলেরা এসো এসো,আমরা একসঙ্গে দেয়াল আঘাত হানি, তুমি আঘাত করো,আমি আঘাত করি ,একটি নতুন বাসঘর তৈরি করবো, নতুন বাড়ি ও নতুন দম্পতিদের জীবন সুখী আছে ।"

    তিব্বতী জাতি একটি গান ও নাচ প্রিয়জাতি । দৈনন্দিন জীবনে ও উত্সবকালে লোকেরা সমসময় নাচ ও গানকে তাদের প্রধান বিনোদনমূলক তত্পরতা হিসেবে গ্রহণ করেন। এই জন্যে তিব্বতী জাতির লোকদের মধ্যে বিপুল সুন্দর লোকসংগীত প্রচলিত হয় । শ্রোতাবন্ধুরা আপনারা এখন শুনতে পাচ্ছেন তিব্বতী জাতির পাহাড়ী গান "ফিরে আসা"। তিব্বতী পাহাড়ী গান উদাত্ত ও নমনীয়, সুর প্রশস্তু এর মালভূমির বৈশিষ্ট্য রয়েছে । "ফিরে আসা" গানটি তিব্বতী জাতির গায়িকা ইয়াংজোংজুওমা তিব্বতীয় ভাষায় গেয়েছেন । গানের অর্থ এমনি : " দূরদুরান্ত থেকে ফিরে আসা একজন ছেলে নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য তাঁর প্রেমিকার জন্যে অনেক মূল্যবান উপহার সঙ্গে নিয়ে আসে । লোকদের কাছে হাদা দেয়াই হচ্ছে তিব্বতী জাতির একটি প্রথা। বিবাহ, উত্সব, আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষাত্ উপলক্ষে হাদা দেয়ার নিয়ম রয়েছে । হাদা হচ্ছে এক ধরনের রেশমী পণ্য । প্রাচীনকাল থেকেই তিব্বতী জাতির লোকেরা মনে করে আসছেন যে, সাদা রং বিশুদ্ধতা ও কল্যানের প্রতীক। তাই হাদা সাধারণত সাদা রংয়ের । হাদা দেয়ার সময়ে লোকেরা মাথা নামিয়ে দুই হাত দিয়ে দেন, যাতে শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা প্রকাশ করা যায় । গৃহীতা লোকরাও মাথা নামিয়ে দুই হাত দিয়ে গ্রহণ করেন এবং ধন্যবাদ জানান । শ্রোতাবন্ধুরা আপনারা এখন শুনতে পাচ্ছেন তিব্বতী জাতির গায়িকা কুওওয়া চিয়ামাওচির কন্ঠে "সুর্যালোরহাদা" । গানের কথা এমনি: " আমি গান গেয়ে গেয়ে হিমালয় আরহণ করি, কল্যানমূলক সূর্যালো দিয়ে একটি সোনালী হাদা বয়ন করি, তা তুলে ধরে প্রিয় মাতৃভূমি ও মার জন্যে উত্সর্গ করবো ।" তিব্বতী জাতির অনেক বিশেষ উত্সব আছে ।

    প্রধানত তিব্বতী পঞ্জিকার বর্ষ, ওয়াংকুও উত্সব সুয়েতুন উত্সব ইত্যাদি । তিব্বতী পঞ্জিকা বর্ষ ছাড়া ওয়াংকুও উত্সব সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য । তিব্বতী ভাষায় ওয়ায়ের অর্থ জমি, তিব্বতী ভাষায় কোওয়ের অর্থ ঘুরা । এটা প্রচুর ফলন কামনার উত্সব। এখন আমরা একসঙ্গে ওয়াকোও উত্সব নামক গানটি শুনবো । গানের কথা এমনি : " ভোরের আলোতে ইয়াংচুওইয়োং হ্রদ উদভাসিত । খামারের লোকেরা আনন্দিত হয়ে গান গাইচ্ছেন, বার্ষিক ওয়াংকুও উত্সবের সময়ে মালভূমি সুন্দর পোশাকে পরিস্থিত। তিব্বতী চমরী গরু তৃণভূমির আনন্দ এনে দিয়েছে ছেলে মেয়েরা নাচ করে ,লোকেরা গান গাইচ্ছেন, ঘোড়া চড়ে স্বপ্ন খুঁজছে ।" তিব্বতী জাতি একটি অতিথিপরায়ণ জাতি । উত্সব বা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গেসমবেতকালে তাঁরা মদ খেতে পছন্দ করেন এবং লোকেরা পারস্পরিকভাবে মদ খাওয়ার গান করেন । মদ খাওয়ার গানের সূর প্রাণচঞ্চল ও আনন্দদায়ক। গানের কথা প্রধানত শুভকামনা ও প্রশংসার বিষয় ।