v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-04 14:50:30    
পাহাড়ী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হাত মিলালো সি আর আই কর্মীরা

cri

    গত ১ জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষে ভোর হতে না হতে পেইচিংয়ের থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে অপেক্ষমান জনতার মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির একদল সুন্দর পোশাক পরিহিত ছেলেমেয়ে দেখতে পাওয়া গেল । তারা দশজন ছিল । সবার বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর । তারা পেইচিং থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুয়েচৌ প্রদেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকা থেকে এসেছে । তাদের কাহিনী সম্বন্ধে কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।

    কাকডাকা ভোরে চীনের জাতীয় পতাকা রক্ষী দল সমানতরাল পদক্ষেপে থিয়ান আন মেন মঞ্চ থেকে আস্তে আস্তে মহাচত্বরের দিকে এগুলো ।সেই মুহূর্তে দূরদুরান্ত থেকে আসা ছেলেমেয়েরা তাদের আবেগ দমিয়ে রাখতে না পেরে নিজেদের পা ওঠিয়ে জাতীয় পতাকা রক্ষী দলের অভিযাত্রার দিকে তাকানোর চেষ্টা করে । মিয়াও জাতির মেয়ে লি ছুয়েন মেই তাদের মধ্যে একজন । তার বয়স ১৩ বছর । সে এই প্রথম বাবামাকে ছেড়ে পাহাড়ী এলাকা থেকে তাদের কাছে অচেনা পেইচিংয়ে এসেছে । ছোট ছুয়েন মেই আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে , আগে কেবল পাঠ্যপুস্তক থেকে সে থিয়ান আন মেনের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান সম্বন্ধে জানতে পেরেছে । সে স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি , সে একদিন এখানে এসে নিজের চোখে সেই দৃশ্য দেখতে পারবে । সে বলেছে ,

    আমি থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে আছি । এখানে এসে জাতীয় পতাকা রক্ষী দলের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার দৃশ্য দেখা

 

আমার স্বপ্ন ।

    জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সেই মুহূর্তে ছোট ছুয়েন মেই ও তার সহপাঠীরা মনোযোগের সঙ্গে হাত তুলে সালাম জানালো । তারা সবাই আস্তে আস্তে উত্তোলিত জাতীয় পতাকার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো । সঙ্গে সঙ্গে তারা মৃদুস্বরে জাতীয় সংগীত গাইল ।

    লি ছুয়েন মিই ও তার সহপাঠীরা দক্ষিণ - পশ্চিম চীনের কুয়েচৌ প্রদেশের পাহাড়ী এলাকা - মা ছিয়াং সিয়াং নামক এক জায়গায় বসবাস করে । সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত অসুবিধাজনক এবং অর্থনীতিও পশ্চাত্পদ । সেখানকার ছেলেমেয়েরা প্রায়ই দু এক ঘন্টা ধরে পাহাড়ী পথ দিয়ে স্কুলে যায় । দুপুর বেলায় তারা কেবল কয়েকটি সিদ্ধ আলু খায় । স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে তারা সবসময় রান্নাবান্ন, গম তোলার

    মত কাজ করে থাকে । এসবকিছু হচ্ছে তাদের দৈনন্দিন জীবন । তাদের চোখে বড় বড় পাহাড় হচ্ছে দুনিয়ার সীমানা ।

   

তাহলে কি কারণে লি ছুয়েন মেই ও তার সহপাঠীরা পাহাড়ী এলাকা থেকে বেরিয়ে পেইচিংয়ে আসতে পেরেছে ? সেই এক বছর আগেকার কথা । গত বছরের মার্চ মাসে রিপোর্ট লেখার জন্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতারা কুয়েচৌ প্রদেশের পাহাড়ী এলাকায় গিয়েছেন । সেখানকার ছেলেমেয়েদের অবস্থা দেখে তারা অবাক হয়ে গেলেন । তাই গত বছরের জুলাই মাসে লি ছুয়েন মেই ও অন্য ৯জন গরীব ছেলেমেয়েকে সাহায্য করার জন্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের কিছু সংখ্যক কর্মচারী চাঁদা দিয়েছেন যাতে তারা তাদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে পারে । এ বছর হচ্ছে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ৬৫তম প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকীএকটি ১ জুন স্মরনীয় শিশু দিবস পালনের জন্যে আন্তর্জাতিক বেতার এই দশজন ছেলেমেয়েকে পেইচিংয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল । পাহাড়ী এলাকার এসব দরিদ্র ছেলেমেয়েদের সাহায্য করার জন্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতার নিজের কর্মচারীদের মধ্যে বইপত্র , কলম , খাতা ও টাকা সহ চাঁদা তোলার এক অভিযান চালাল । এই প্রসংগে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের মহাপরিচালক ওয়াং কেং নিয়ান বলেছেন ,

    আমাদের বেতারের এই অভিযান একটি তাত্পর্যপূর্ণ তত্পরতা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ তত্পরতা । এতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, আমাদের বেতার দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গণ মাধ্যম । একটি দায়িত্ববান গণ মাধ্যম হিসেবে আমাদের বেতারের উচিত নিজের প্রভাব সম্প্রসারণের পাশাপাশি সমাজের সেবা করা এবং সমাজের কল্যান সাধন করা । এমন একটি গণ কল্যানমূলক তত্পরতাকে উত্সাহিত করা উচিত ।

    এবারের তত্পরতা পাহাড়ী এলাকার এসব ছেলেমেয়েকে পাহাড় থেকে বেরিয়ে বাইরের পৃথিবী দেখার সুযোগ দিয়েছে । প্রথমবারের মত বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে গেলেও লি ছুয়েন মেইয়ের কোনো দু:খ ছিল না । তিনি আনন্দের সঙ্গে বাবামার কাছ থেকে বিদায় নিল ।

     লি ছুয়েন মেই বলেছে , বাবামা , নেতা ও চাচারা আমাকে পেইচিংয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । বাবামা , বিদায় । পেইচিংয়ে গিয়ে আমি নিশ্চয় তোমাদের কথা ভাববো । তখন আমি চাচাদের মোবাইল দিয়ে তোমাদের ফোন করবো ।

   

লি ছুয়েন মেইয়ের বাবা বলেছেন , পেইচিংয়ে গিয়ে তুমি নেতা ও চাচাদের কথামত কাজ করবে । লজ্জিত হয়ো না বিদায়। পথে সাবধানে থেকো ।

    ৩০ মে বিকেলে ছোট ছুয়েন মেই ও তার সহপাঠীরা পেইচিংয়ে এসে পৌছল । পেইচিংয়ের প্রশস্ত রাজপথ , কর্মব্যস্ত গাড়ির স্রোত , উচুঁ উচুঁ দালানকোঠা , এমন কি লিফটও এসব ছেলেমেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । আশেপাশের সবকিছু তাদের কাছে টাটকা লাগে । যেখানে যায় ,সেখানেই তারা আগ্রহের সঙ্গে নানা রকম প্রশ্ন করে । তারা এই বহুল আকাংক্ষিত জায়গার সবদিক জানতে ইচ্ছুক । চীনের বৃহত্তম যাদুঘর - পুরনো রাজপ্রাসাদ পরিদর্শনের সময়ে ছোট ছুয়েনমেই তার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করল । সে সবসময় গাইড চাং কুয়াং ইয়াওয়ের হাত ধরে অনবরত নানা প্রশ্ন করতে থাকে । সে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে , সে চাচা চাংকে খুবই পছন্দ করে । কারণ তিনি সব ব্যাপার জানেন । বড় হলে সেও তাঁর মত অনেক জ্ঞান অর্জন করবে । পরিদর্শন শেষ হওয়ার পরও ছুয়েন মেই যাদুঘর থেকে চলে যেতে চাইল না ।

    গাইড চাং জিজ্ঞেস করেছেন , তুমি কি আবার আসবে ? উত্তরে সে বলেছে , আবার আসবো ।

    চাং বলেছে, তাহলে তুমি ভালো করে লেখাপড়া করবে । আবার আসলে আমি আবার তোমাকে গল্প বলবো । তখন তুমি আজকের চেয়ে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবে ।

    অথচ এসব ছেলেমেয়েদের কাছে সবচেয়ে আনন্দদায়ক ঘটনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বেতারের চাচা-চাচীদের বাসায় বেড়ানোর অভিজ্ঞতা । ভিন্ন পরিবেশে জীবনযাপন করলেও ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেলামেশার কোনো বাধা ছিল না । দেখামাত্রই তারা হয়ে ওঠলেন অন্তরংগ বন্ধু ।

    পেইচিংয়ের ছোট বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া লি ছুয়েন মেইয়ের কাছে সত্যিই একটি আনন্দের ব্যাপার । সে বলেছে, তারা খুবই বিনয়ী । তাদের সঙ্গে দেখা হলেই আমি তাদের সঙ্গে খেলা করতে চাই । তারা বেশি কথা বলতে চায় ।