v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-30 18:54:24    
বিশেষ বিয়ের অনুষ্ঠান

cri
    ২০০৫ সালের ২৪ অক্টোবর চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের হার্বিনশহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্লাস-রুমে এক বিশেষ বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিল । কেন এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে বিশেষ বিয়ের অনুষ্ঠান বলা হচ্ছে?কারণ বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাবর ও কনে নন । বর কনের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অতিথিদের পরিচয়ও ছিল না ।

    বিয়ের অনুষ্ঠানের বর হলেন ২৬ বছর বয়সী সুন লিয়াং আর কনে হলেন তার চেয়ে ২১ দিন ছোটো লি চিয়েন । ২০০৩ সালে ২৩ বছর বয়সী সুন লিয়াং হার্বিনশিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ক্লাসেভর্তি হন আর লি চিয়েন কলেজের পরীক্ষা পাশ করে উত্তর-পূর্বকৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ।সে বছরের নভেম্বর মাসে দুজনের পরিচয় হয় । প্রফুল্ল ও সুন্দরী লি চিয়েন সুন লিয়াংকে গভীরভাবে আকর্ষণ করেন আর অকপট ও সরল সুন লিয়াং লি চিয়েনের মনে ভাল রেখাপাত করেন । তা সত্ত্বেও লি চিয়েন সুন লিয়াংয়ের সঙ্গে তাদের প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্ক স্থির করতে চান নি । কারণ তিনি হেইলুংচিয়াং প্রদেশের চাওতুং শহরের গ্রামাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার আগে তার বাবামা পরপর মারা যান বলে বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ । সুন লিয়াংয়ের উপস্থিতি লি চিয়েনের মনে যে কী আনন্দ দেয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । কিন্তু দারিদ্র্যেরকারণে সুন লিয়াংকে কষ্ট দিতে চান নি বলে তিনি নানা অজুহাতে সুন লিয়াংয়কে এড়িয়ে যান । অবশেষে কয়েক মাস পরের একদিন লি চিয়েন যখন নিজের ই-মেলে সুন লিয়াংয়ের লেখা শতাধিক চিঠি পড়েন তখন তিনি সুন লিয়াংয়ের গুণাবলীতে গভীরভাবে মুগ্ধ হন ।

    এরপর খুব দ্রুত তিন বছর পার হল । এ সময় সুন লিয়াং হার্বিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রে ডক্টরেট কোর্সে যোগ দেন এবং লি চিয়েনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন । দুজন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন । ঠিক এই সময় এক দুঃসংবাদ তাদের মনে আঘাত করে ।

    ২০০৫ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে অর্থাত তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ১০ দিন আগে ,সুন লিয়াং ও লি চিয়েন দুজন বিয়ের ছবি তোলার পর চাওতুং গ্রামে লি চিয়েনের আত্বিয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবিদের এই সুখবর জানাতে চান । কিন্তু চাওতুংয়ে কিছু দিন হতে না হতেই লি চিয়েন লক্ষ্য করেন নিজের দুপা ফুলে গেছে । সুন লিয়াং ও খালাতো বোনের সঙ্গে লি চিয়েন হাসপাতালে যান । পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে লি চিয়েন ইউরেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষার ফলাফলে সুন লিয়াং ও খালাতো বন অবাক হন । বিশেষজ্ঞরা আর একবার পরীক্ষা চালিয়ে স্থির করেন ,লি চিয়েন চূড়ান্ত পর্যায়েরইউরেমিয়ার শিকার হলেন । সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকতে হবে , নইলে বিপদ্জনক হবে । লি চিয়েনের অবস্থা এত গুরুতর হল যে হেমোডায়ালাইসিস দরকার । একবার করলে চার-পাঁচশ' রেনমিনপি লাগে, আর সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার করতে হয় । শুধু সুন লিয়াংয়ের মাসের সাতশ' ভর্তুকির উপর নির্ভর করলে যথেষ্ট নয় । লি চিয়েনকে পুরোপুরি আরোগ্য করার জন্যে একমাত্র উপায় হল কিড্নি ট্রান্সপ্লান্ট করা , এতেও তিন-চার লক্ষ রেনমিনপি লাগে । বলাবাহুল্য , সুন লিয়াং আর লি চিয়েনের পক্ষে এটা এক অতি বিশাল অংক।

    হাসপাতালে থাকার চার দিনপর,ভাগ্যদেবী বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতিপ্রসন্ন হলেন । লি চিয়েনের অবস্থা আশ্চর্যজনকভাবেভালর দিকে উন্নত হচ্ছে । তার চেহারা ও পায়ের শোথও মিলিয়ে যায় । লি চিয়েনের বারবার অনুরোধে ডাক্তার তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে যেতে অনুমতি দেন । সেই দিনই তারা দুজন অনেক ওষুধ নিয়ে হার্বিনশহর থেকে সুন লিয়াংয়ের জন্মস্থান লিয়াও নিং প্রদেশের আনশান শহরে গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । নিজের রোগ সম্পর্কে লি চিয়েন আর সুন লিয়াংয়ের বাবামা কিছুই জানতেন না । সুন লিয়াং সব দুঃখ মনে রেখে সবাইকে বিয়ের সুখ দেখালেন ।

    বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে লি চিয়েনের খালাতো বোন নানা অজুহাতে ধীরেধীরে লি চিয়েনকে তার রোগের অবস্থা জানাতে শুরু করেন । লি চিয়েন মনে করতো নিজের রক্তাল্পতা হয়েছে । নিজের শেষপর্যায়ের ইউরেমিয়া রোগ হয়েছে কথাটা শুনে লি চিয়েনের অবস্থার অবনতি হয় । বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সুন লিয়াং বাবামার অজান্তে লি চিয়েনকে আবার হার্বিনহাসপাতালে পৌঁছে দেন । তাদের লি চিয়েনের জন্যে কিডনী পরিবর্তনের জন্যে প্রয়োজনীয় উচ্চ ব্যয় তাদের সম্মুখীন হতে হবে ।

    সুন লিয়াং ও লি চিয়েন হার্বিনেপ্রত্যাবর্তনের পর হার্বিনশহরের টেলিভিশন কেন্দ্রের এক সাংবাদিক আকস্মিকভাবে তাদের প্রেমের কাহিনী জানলেন এবং তাদের কাহিনী টিভি অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করেন । অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবার পর হার্বিনশহরের নাগরিকরা লি চিয়েনের জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন । তারা তার জন্যে চাঁদা দেন । তাদের ভালবাসার মাধ্যমে লি চিয়েনের যৌবনের জীবন রক্ষা পাবে বলে তারা আশা করেন । এক মাসের মধ্যে সমাজের বিভিন্ন মহলের দেয়া অর্থ প্রায় দু লক্ষ রেমিনপিতে দাঁড়ায়, এটা কিডনী পরিবর্তনের জন্যে যথেষ্ট । সুন লিয়াং ও লি চিয়েনের প্রেমের কাহিনীতে মুগ্ধ হয়ে অনেক নাগরিক স্বেচ্ছায় হার্বিনশিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দুজন যুব প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যে আর-একবার বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । ২০০৫ সালে "হার্বিন তোমার গুণে মুগ্ধ"নামক শ্রেষ্ঠ লোক নির্বাচনেসুন লিয়াং ও লি চিয়েন নির্বাচিত হন । ১৫ ডিসেম্বর পুরস্কার বিতরণের জন্যে সান্ধ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় । রোগের অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে লি চিয়েন অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত হতে পারেননি ।

    চিকিত্সকদের এক দিনের জরুরী চিকিত্সার পর ১৫ ডিসেম্বর লি চিয়েন অবশেষে আবার চোখ খুললেন । লি চিয়েন শয্যায় শুয়ে সুন লিয়াংয়ের সঙ্গে শেষ পর্যন্তপুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন । বসন্ত উত্সবকালে সুন লিয়াং ও লি চিয়েন পেইচিংয়ে এলেন । পেইচিং স্যুয়েন উ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দশম দিনে লি চিয়েন তার উপযুক্ত এক কিডনী পান । ১৪ ফেব্রুয়ারী দু-ঘন্টাব্যাপী অপারেশন অত্যন্ত সাফল্যমন্ডিত হয়েছে । এই দিনে স্রষ্টাএই দুজন স্বামী-স্ত্রীকে এক সবচেয়ে মূল্যবান উপহার নতুন জীবন দিয়েছে ।