v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-28 20:11:32    
চীনের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী লি সুয়াং চিয়াং

cri
    লি সুয়াং চিয়াং চীনের একজন নামকরা কন্ঠশিল্পী । গত কয়েক দশকে তার উদাও কন্ঠ ও বৈশিষ্টময় গায়কী নৈপুন্য দেশবিদেশের প্রচুর দর্শক ও শ্রোতার মন জয় করেছে । তা ছাড়া তিনি চীনের অনেক যুব কন্ঠশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ।

    লি সুয়াং চিয়াংয়ের গাওয়া ' লাল তারকা আমাকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে ' নামে গানটি তার প্রতিনিধিত্বকারী গান বলা যায় । গানটি হচ্ছে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে তৈরী ' ঝলমলে লাল তারকা ' নামে চীনের সামরিক যুদ্ধ কালের একটি চলচ্চিত্রের গান । এই চলচ্চিত্র সমগ্র দেশে দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে গায়ক লি সুয়াং চিয়াংয়ের নাম চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে । এর পরের বিশ-বাইশ বছরে লি সুয়াং চিয়াং অনেক সৈন্যবাহিনীর গান গেয়েছেন ।

    লি সুয়াং চিয়াং ১৯৩৯ সালে উত্তর-পূর্ব চীনের হারবিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন । ছোটবেলা থেকেই তিনি শিল্পকলা পছন্দ করেন , গান করা তার শখ । প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় লি সুয়াং চিয়াং প্রতি বছর শহর ও প্রাদেশিক পর্যায়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন এবং পুরষ্কার পান । উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে স্কুল তাকে পরীক্ষা ছাড়া সোজা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ দিয়েছে । নিজের ছেলেকে একজন ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা লি সুয়াং চিয়াংয়ের বাবার বহু বছরের আকাংখা । কিন্তু লি সুয়াং চিয়াং গান শিখতে চান । নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশুনার সুযোগ ছেড়ে দিয়ে সংগীত ইন্সটিটিউটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন । তার বাবা তীব্রভাবে লি সুয়াং চিয়াংয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন , কিন্তু মার নীরব সমর্থনে লি সুয়াং চিয়াং চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন ।

    চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটে লি সুয়াং চিয়াং চার বছর পড়াশুনা করেছেন । তিনি সংগীতের তত্ত্ব শিখেছেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর গান ও চীনের লোক সংগীত শিখেছেন । লি সুয়াং চিয়াং জনপ্রিয় লোকসংগীত বেশী পছন্দ করেন । ১৯৬৩ সালে কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটের পড়াশুনা শেষ করে তিনি সিনচিয়াং সামরিক অঞ্চলের নৃত্যসংগীত দলে পেশাদার কন্ঠশিল্পী হিসেবে গান করতে শুরু করেন । সিনচিয়াংয়ে লি সুয়াং চিয়াং দশ বছর গান করেছেন । সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এক সংখ্যালঘু জাতি অধুষিত অঞ্চল। তাই সিনচিয়াংয়ের উইগুর জাতির শিল্পকলা তার গান পরিবেশনের শৈলী সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে । এ সম্পর্কে লি সুয়াং চিয়াং বলেছেন , সিনচিয়াংয়ের সৈন্যদলের নৃত্যসংগীত দলে ভর্তির খবর পেয়ে আমি খুব খুশি । কারণ সৈন্যবাহিনীর সদস্য হওয়া আমার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন , তাছাড়া আমি সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও সংস্কৃতি পছন্দ করি । তাই সিনচিয়াংয়ে আমি যে দশ বছর ছিলাম , তাতে আমি দুটি বিদ্যালয় অর্থাত্ সামরিক বিদ্যালয় আর সংখ্যালঘু জাতির বিদ্যালয়ে পড়েছি । এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা আমার গায়কী নৈপুন্য উন্নত করতে সাহায্য করেছে । তাই এই দশ বছর আমি সানন্দে কাটিয়েছি ।

    ১৯৭০ সালে লি সুয়াং চিয়াং চীনের গণ মুক্তি ফৌজের জাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন । তার পরিবেশিত ' পেইচিংয়ের জয়গান ' গানটি শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরষ্কার পেয়েছে এবং চীনের সংগীত জগতের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি কুড়িয়েছে । তার উদাত্ত কণ্ঠ ও মন দিয়ে গান পরিবেশনের শৈলী তখনকার সংগীত জগতে বিরল । তাই তার গাওয়া অনেক গান দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে । ১৯৭৩ সালে লি সুয়াং চিয়াং সিন চিয়াং ত্যাগ করে পেইচিংয়ের গণ মুক্তি ফৌজের অপেরা দলে ভর্তি হন , তিনি তার কন্ঠশিল্পী জীবনের একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছেন ।

    পেইচিংয়ে আসার প্রথম কয়েক বছর ছিল লি সুয়াং চিয়াংয়ের গায়ক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্ব । তিনি নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শৈলি অনুসরণ করে অনেক গান করেছেন । তার ' লাল তারকা আমাকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে 'নামক গানের সি ডির বিক্রি ৩০ লাখের বেশী , এটা গত শতাব্দীর আশির দশকের সর্বোচ্চ রেকর্ড । তার গাওয়া ' আবার দেখা হবে মা ' ও ' সহযোদ্ধার স্মৃতি ' প্রভৃতি গান চীনের শ্রোতারা খুব পছন্দ করেন । শ্রোতারা তাদের প্রিয় গায়ক লি সুয়াং চিয়াংকে সংগীত রাজা বলে ডাকেন । কিন্তু ১৯৯৪ সালে লি সুয়াং চিয়াংয়ের জীবনের আরেকটি পরিবতর্ন আসে । সৈন্যবাহিনীর আরো বেশী যোগ্য কন্ঠশিল্পী প্রশিক্ষণের জন্য তিনি তার প্রিয় গান পরিবেশনের মঞ্চ ছেড়ে গণ মুক্তি ফৌজের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের সংগীত বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন , ১৯৯৪ সালে আমি গণ মুক্তি ফৌজের অপেরা দল থেকে মুক্তি ফৌজের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের সংগীত বিভাগের প্রধান হলাম । আমার পক্ষে এটি একটি নতুন কর্তব্য । আমি আমার বহু বছর ধরে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা দিয়ে নতুন কন্ঠশিল্পী প্রশিক্ষণের চেষ্টা করেছি , যাতে অল্পবয়সী গায়ক গায়িকারা সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারেন ।

    গণ মুক্তি ফৌজের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটে লি সুয়াং চিয়াং শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করেছেন । তিনি ইন্সটিটিউটে ' লাল তারকা সংগীত ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন । সংগীত অনুষ্ঠান আয়োজন আর ফোরামে গান করার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস নেয়া ইত্যাদি উপায়ে ছাত্রদের আরো বেশী মঞ্চাভিনয়ের সুযোগ দেন , ফলে ছাত্রছাত্রীদের গায়কী মান অনেক উন্নত হয়েছে । বাস্তব ঘটনা প্রমাণ করেছে তার শিক্ষা সংস্কার সাফল্যমন্ডিত হয়েছে , এ জন্য তিনি সরকারের দেয়া প্রথম শ্রেণীর পুরষ্কার পেয়েছেন । তার ছাত্রছাত্রীরা দেশবিদেশের সংগীত প্রতিযোগিতায় বার বার পুরষ্কার পেয়েছেন । এ বছর লি সুয়াং চিয়াংয়ের বয়স ৬৭ বছর হয়েছে , তার ছাত্রছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন সংগীত দলে প্রধান গায়ক গায়িক হিসেবে গান করছেন ।

    লি সুয়াং সুন গণ মুক্তি ফৌজের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের একজন সংগীত শিক্ষক , তিনি লি সুয়াং চিয়াংয়ের ছাত্রী ছিলেন । তিনি মনে করেন , তার শিক্ষক লি সুয়াং চিয়াং শুধু চমত্কার গান করেন না , তার শিক্ষা পদ্ধতিও বৈশিষ্টপূর্ণ । তিনি বলেছেন , পরীক্ষার সময় বা সংগীত অনুষ্ঠানে লি সুয়াং চিয়াং আমাদের বার বার বলেছিলেন , মঞ্চে দাড়িয়ে গান করার সময় আপনাদের নিজেকে জ্বালাতে হবে । এর মানে গান করার সময় অবশ্যই মনের ভাবানুভুতি পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে হবে ।

    এখন লি সুয়াং চিয়াং শিক্ষকতা ছাড়া চীনের গণ মুক্তি ফৌজের সংগীত ইতিহাস প্রনয়নের কাজ করছেন এবং বিভিন্ন সংগীত প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে নতুন সংগীত তারকা আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ।