সম্প্রতি শ্রীলংকার একটি বিশ্ব বিখ্যাত চোখের কর্ণিয়া ভান্ডার বা চক্ষু ব্যাংক একটি বিশেষ অনুদানের প্রস্তাব পেয়েছে। প্রস্তাবক হচ্ছেন রাজধানী কলম্বোর অধিবাসী ইন্দ্রানান্দা আবেসেকারা। আবেদন পত্রে তিনি বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন যে, যদি সম্ভব হয়, ভবিষ্যতে তাঁর কর্ণিয়া একজন চীনাকে দান করবেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ বলতে মিঃ ইন্দ্রানান্দা বলেছেন, "আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন নিয়মিত শ্রোতা। সি আর আই এর বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে আমি চীনকে জেনেছি, চীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি, চীনকে ভালবেসেছি। "
ইন্দ্রানান্দা হচ্ছেন সি আর আই এর শ্রীলংকা শ্রোতা সংঘের পরিচালক। বহু বছর ধরে তিনি শ্রীলংকা আর চীনের আদান-প্রদানের জন্য বহু কাজ করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশা আর শ্রীলংকার কালুদারা শহরের মধ্যে মৈত্রী শহরের বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি চীন সরকারের প্রদান করা জাতীয় মৈত্রী পুরস্কার পেয়েছেন। চীনের বৈদেশিক মৈত্রী সমিতি তাঁকে "শ্রীলংকার মৈত্রী দূত পুরস্কার" প্রদান করেছে। তিনি হু চিন থাও প্রমুখ চীনের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের সাক্ষাত্ এবং প্রশংসা পেয়েছেন। তাঁর প্রয়াসে শ্রীলংকায় সি আর আই এর শ্রোতা সংঘের সংখ্যা সাত শতাধিক হয়েছে।
৬৫ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চীন আন্তর্জাতিক বেতার ইন্দ্রানান্দার মতো অসংখ্য শ্রোতাবন্ধু পেয়েছে। ইউরোপের স্পেনের পুরোনো শ্রোতা আরেয়াদ্রো ব্রোনছালেসের বহু বছরের এক অভ্যাস হচ্ছে প্রতি রাতে রেডিও এর পাশে বসে চীনের কন্ঠ শোনা।
"সি আর আই এর যাবতীয় অনুষ্ঠান আমার পছন্দ। এর মধ্যে সমাজ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন বিষয়ক অনুষ্ঠান খুব ভালো। বিশেষ করে "শ্রোতাদের চিঠির বক্স" নামে অনুষ্ঠানটি আমি একবারও মিস করি না। এটা হচ্ছে আমি আর সি আর আই এর মধ্যকার "মৈত্রী সেতু"। আমি এই অনুষ্ঠানগুলোকে পছন্দ করার মূল কারণ হচ্ছে, তা আমার কাছে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশ এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতি প্রদর্শন করেছে।"
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ক্যাসল্ শহরের সাংসদ বিল থোর্কিদসেন দশ বছর ধরে সি আর আই এর অনুষ্ঠান শুনে আসছেন। তিনি প্রায় শহরবাসীদেরকে অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া চীনের উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা তথ্য জানান। গত বছরের মার্চ মাসে তাঁর প্রচেষ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের নাননিং শহরের প্রতিনিধি দল নিউ ক্যাসল শহরে সফর করেছে। সে দিনে চীনের পাঁচ তারা লাল পতাকা নিউ ক্যাসল শহরের আকাশে তরঙ্গায়িত হয়েছে। সি আর আই এর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রোতারা ক্রমে ক্রমে চীনকে জেনেছেন, চীনকে পছন্দ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে ই-মেইল বা চিঠির মাধ্যমে চীন আর সি আর আই এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন এবং মন খুলে বহু মূল্যবান মতামত আর প্রস্তাবও উত্থাপন করেছেন।
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সোয়াহিলি ভাষার অনুষ্ঠানের বহু শ্রোতা আফ্রিকার কেনিয়া, তান্জানিয়া, উগান্ডা এবং বুরুন্ডি প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে আছে। এই ভাষা বিভাগের মিঃ হুয়াং ইয়ে লিং বলেছেন, "শ্রোতারা আগ্রহ নিয়ে আমাদের চিঠি লিখেন। কেউ কেউ প্রতি দিন আমাদের একটি চিঠি পাঠান। সে দিনে আমরা কি কি অনুষ্ঠান প্রচার করেছি, কোন সংবাদ কে উপস্থাপন করেছেন, সব স্পষ্টভাবে লিখেছেন। চিঠিতে আমাদেরকে তাঁর মতামত জানান। এমন কি মাঝেমাঝে একদিনে তাঁর দুটি চিঠিও চলে আসে। এমন উষ্ণহৃদয় শ্রোতা আমাদের বড় উত্সাহ দিয়েছেন। "
চীনা ভাষা শিক্ষার অনুষ্ঠান হচ্ছে সি আর আই এর সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম । বহু শ্রোতা বেতারের মাধ্যমে চীনা ভাষা শিখেছেন। তারপর চীনা ভাষাকে নিজের আশেপাশের লোকজনকে শেখান। এভাবে চীনের সংস্কৃতি বিদেশে আরো সম্প্রচারিত হয়েছে।
জাপানী শ্রোতা সাকুরায় কিমিকো চীনে দু'বছর চীনা ভাষা শেখেন। স্বদেশে ফিরে যাবার পর তিনি অব্যাহতভাবে সি আর আই এর অনুষ্ঠান শুনার মাধ্যমে তাঁল চীনা ভাষার মান উন্নত করেছেন এবং কিছু মাধ্যমিক স্কুল আর ভাষা ইনস্টিটিউটে চীনা ভাষা শেখান। তাঁর ছাত্রছাত্রীরাও সি আর আই এর অনুষ্ঠান পছন্দ করেছেন। তিনি আর তাঁর বহু ছাত্রছাত্রীর এক অভ্যাস হচ্ছে যখন পেইচিংয়ে আসার সুযোগ পান , তখন অবশ্যই সি আর আইতে বেড়াতে আসেন।
"আমি আর ছাত্রছাত্রীরা যখন পেইচিংয়ে যাই, তখন অবশ্যই সি আর আই এর অতিথি হই। জাপানী বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গল্প করি। মাঝেমাঝে চীনা ভাষায় , মাঝেমাঝে জাপানী ভাষায়, খুবই মজা। ছাত্ররা জাপানে ফিরে যাবার পর পেইচিংয়ে তোলা ছবিগুলো অন্যান্য ছাত্রদেরকে দেখায় এবং বলেন যে, বেতারে যাওয়া খুব মজার। তোমার সময় থাকলে অবশ্যই যেতে হবে। এভাবে পরে যখন অন্য ছাত্রছাত্রী পেইচিংয়ে আসে, অবশ্যই সি আর আই দেখতে যাবে" আমাদের বিনিময়ের আওতা এভাবে অধিক থেকে অধিকতর বড় হয়েছে। "
সি আর আই এর অফিস ভবনের দু'তলার প্রদর্শনী হলে সাজিয়ে রাখা সারি সারি আলমারিতে বহু শ্রোতার দেয়া উপহার আছে। যেমন আফ্রিকার কাঠ দিয়ে তৈরি মূর্তি, জাপানের নারিকেল পুতুল, ভিয়েত্নামের সংগীত যন্ত্রপাতি, ফ্রান্সের মিনি আইফেল টাওয়ার এবং বিশ্ব বিখ্যাত ফুটবলারদের স্বাক্ষর ইতালির ফুটবল ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণীয় জিনিস হচ্ছে একজন শ্রোতা সি আর আই এর আয়োজিত জ্ঞানযাচাই প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি চমত্কার উত্তরপত্র, কাগজ নয়, বইয়ের মতো মোটা, সঠিক উত্তর দেয়ার পাশাপাশি ছবি সহ চীনের উপর তার মনোভাব বর্ণনা করেছেন এবং সি আর আই এর প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসাও উল্লেখ করেছেন।
সি আর আই এর শ্রোতা যোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি শি লি বলেছেন, ৬৫ বছরে সি আর আই এর শ্রোতার সংখ্যা নিরন্তরভাবে বেড়ে যাচ্ছে। শ্রোতাদের বৃদ্ধির মানও উন্নত হয়েছে। "৬৫ বছর বিকাশের পর আমাদের শ্রোতারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছেন। শ্রোতা সংঘও দিনে দিনে সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন সারা বিশ্বে ৩৬০০টি সি আর আই শ্রোতা ক্লাব আছে। উচ্চ স্তরের শ্রোতার সংখ্যাও বেড়েছে। চীনের ওপর তাঁদের মনোযোগ দেয়ার মাত্রা অব্যাহতভাবে বেড়েছে। প্রতি বছরে আমরা শ্রোতা সংঘগুলোর সঙ্গে নানা রঙ্গিন তত্পরতা আয়োজন করি, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান করি। ২০০৫ সালে আমরা শ্রোতাদের কাছ থেকে ২১ লক্ষ ৭০ হাজারাধিক চিঠি পেয়েছি।
|