লিন ফাং , হো পে ডেইলি পত্রিকার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক । তার বয়স আশির কাছাকাছি । তিনি সুস্থ আর দ্রুত হাটতে পারেন । প্রতি দিন বিকেল চারটায় তিনি পত্রিকার আবাসিক এলাকায় ঘুরে ঘুরে বেড়ান ।
বয়স হলেও বয়স্ক বলে মনে করলে চলে না , মানুষের কল্পনা-জল্পনা না থাকলেও চলে না ।
চীনের প্রাচীনকালের একজন সুধী ব্যক্তি ঝাও ছাও বলেছিলেন , ভাল মন আর সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ুর অনুকুল । এ থেকে বৃদ্ধ লিন এই সত্যতা বুঝতে পেরেছেন যে , শতায়ু হওয়া কোনো স্বপ্ন নয় , বিজ্ঞানসম্মতস্বাস্থ্য হচ্ছে তার চাবিকাঠি । তিনি বলেছেন , বয়স্ক হওয়ার মানে বয়স বেশী হওয়া নয় , বরং মনোবল ও কল্পনাশক্তিহারানো । ১৯৮৫ সালের জুন মাসে বৃদ্ধ লিন ডেইলি পত্রিকাটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অবসর নেন । তিনি হো পেই প্রাদেশিক সাংবাদিক সমিতির কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন । তিনি বহু গণ পরিসেবা তত্পরতা পরিচালনা করেছেন ।
বৃদ্ধ লিন মনে করেন যে , সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা , যাতে মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ব্যবহারের দরুণ মানুষ সহজে বুড়িয়ে যায় , তবে তাদের বুদ্ধি বেড়ে যায় । একটি পবিত্র পেশার জন্য প্রচেষ্টা চালানো বার্ধক্যের আগমন করা আর যৌবনবজায় রাখার একটি চাবিকাঠি ।
মন নিঃস্বার্থ আর আনন্দে ভরা মন
এই মনোবলের ভিত্তিতে পরিবেশ ভাল বা খারাপ , চাকরির দিক থেকে মর্যাদা বা অতৃপ্তি যাই থাক না কেন , মানুষের ভাল মন আর তৃপ্তি বজায় রাখা যায় । সুস্বাস্থ্য যেমন চিকিত্সা , তেমনি সংস্কৃতির আওতাভুক্ত । সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন শরীর তেমনি হৃদয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত । দীর্ঘায়ু হতে চাইলে মানসিকতার দিক থেকে বেশী মনোযোগ দেয়া দরকার । এই ক্ষেত্রে মানুষের দয়া , মায়া-মমতা , টাকা-পয়সা ও মর্যাদার প্রতি উদাসীনতা আর অন্যদের প্রতি নমনীয়তা বেশী প্রয়োজন ।
বৃদ্ধ লিন ধন-সম্পদ আর মর্যাদার ওপর বেশী নজর রাখেন না । এখন সকলের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে । এর সংগে সংগে ধনী ও গরীবদের মধ্যে ব্যবধানও বাড়ছে । এই ক্ষেত্রে তিনি ধনীদের সংগে তুলনা করেন না , তুলনা করেন শুধু নিজের অতীতের সংগে । তিনি নিজের পরিবার পরিজনকে বলেন , নির্লোভ মানে সুখ আর অতি লোভে তাঁতি নষ্ট ।
সক্রিয় শরীর চর্চা ও বন্ধু-বান্ধবের প্রয়োজন ।
যখন বৃদ্ধ লিনের বয়স ৬৬ ছিল , তখন ডাক্তারের পরামর্শে তিনি প্রভাতী শরীরচর্চা আর হাঁটা এই দুই ধরনের শরীর চর্চা শুরু করলেন । তিনি শরীর চর্চায় অবিচল থাকেন । তার জীবনধারার নিয়ম আছে আর তিনি সিগারেট ও মদ খান না । খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তিনি একঁঘেয়ে , একই খাবার বেশী খান না , বরং নানা খাবার থেকে রকমারি পুষ্টি অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেন । এর সংগে সংগে সুস্বাস্থ্যের জন্য বন্ধু বান্ধবের সাহচর্যও প্রয়োজন । তার বহু পুরানো বন্ধু ও সহকর্মী এখনো তার সংগে যোগাযোগ বজায় রাখেন । তার কাছে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনেক অল্পবয়সী তার বাসায় যান । তিনি আন্তরিকভাবে তাদের স্বাগত জানান এবং বিনয়ীভাবে তাদের সংগে মত বিনিময় করেন ।
এখন বার্ধ্যকেরমূল কারণ সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
বার্ধক্য প্রত্যেক মানুষের একটি অপরিহার্য সমস্যা । সবাই জানেন , ২৫ বছর বয়সের পর মানুষ ধীরে ধীরে বার্ধক্যের প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেন । শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যকরীতাও বয়সের সংগে সংগে দুর্বল হয়ে যায়। তবু মানুষের বার্ধক্যের কারণ কি । এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা নানা দিক থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন । তারা প্রচুর বৈজ্ঞানিক তদন্তের ভিত্তিতে এই সত্যতা আবিষ্কার করেছেন যে , মানুষের শরীরের বার্ধক্যের মূলে রয়েছে সর্বপ্রথমে দেহের রক্তের লোহিত কনিকার বার্ধক্য । চিকিত্সার তাত্ত্বিক দিক থেকে মানুষের গড়পড়তা আয়ু ১শো ২০ থেকে এক শো তিরিশের মধ্যে । কিন্তু বাস্তব জীবনে বেশীর ভাগ মানুষ শুধু সত্তর আশি বছর বেঁচে থাকেন ? কারণ এই যে , পরিবেশ , পুষ্টি প্রভৃতি কারণে দেহের বার্ধক্যের গতি দ্রুততর হয়েছে । সুতরাং তাদের বার্ধক্যের্ প্রক্রিয়াও দ্রুততর হয়েছে ।
|