v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-21 10:27:27    
অস্কার পুরস্কার ও চীনের চলচ্চিত্র

cri
    ৭৮তম অস্কার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ৫ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে । চীনা পরিচালক লি আনের পরিচালিত ' ব্রকব্যাক মাউন্টেন ' অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক ,শ্রেষ্ঠ সংগীত ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের পুরস্কার জয় করেছে । পরিচালক লি আন একজন চীনা , তাই চীনারা এ বছরের অস্কার পুরস্কারের প্রতি বেশী মনোযোগ দিচ্ছেন । অস্কার পুরষ্কার চীনের চলচ্চিত্র কর্মীদের একটি স্বপ্ন । আজকের সংস্কৃতি সম্ভার আসরে চীনের চলচ্চিত্র কর্মীদের অস্কার স্বপ্ন সম্বন্ধে কিছু বলবো ।

    অস্কার পুরষ্কার বিজয়ী ছায়াছবি ' ব্রকব্যক মাউন্টেন '-এ দুজন আমেরিকান রাখাল বালকের সমকামী প্রেমের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। সামাজিক চাপে তারা বাধ্য হয়ে নারীকে বিয়ে করেন , কিন্তু তাদের দুজনের প্রেম বিশ-বাইশ বছর স্থায়ী ছিল । কিছু তথ্য মাধ্যমেরপ্রবন্ধে বলা হয়েছে যে এই ছবি আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের সমকামী প্রেমের জয়গান বলা যায় , কিন্তু লি আন মনে করেন , এই ছবিতে মানুষের মধ্যে প্রেম বর্ণনা করা হয়েছে , ব্যাপক অর্থে প্রেম শুধু পুরুষ ও নারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় ।

    পরিচালক লি আন চীনের তাইওয়ানে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির পরিবেশে ছোটবেলা কাটিয়েছেন । তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপেরা ও চলচ্চিত্র শিল্প শিখেছেন এবং ছায়াছবির নাট্যরূপ তৈরীর সময় পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সংস্কৃতির সমন্বয়ের চেষ্টা করেন । ছায়াছবি তৈরীর সময় যদিও তিনি প্রাচ্যের দৃষ্টিতে বিষয়গুলো দেখেন , কিন্তু ছবি তৈরীর সময় তিনি পশ্চিমা দেশের কলাকৌশল ব্যবহার করেন । ২০০১ সালে তার পরিচালিত ' লুকানো বাঘ ও ড্রাগণ ' অস্কার পুরষ্কারের শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার ছবি , শ্রেষ্ঠ সংগীত , শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র ও শ্রেষ্ঠ আর্ট ডিরেক্টর পুরষ্কার পেয়েছে ।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা একজন বিদেশী পরিচালক হিসেবে লি আন জানেন হলিউডে সাফল্য অর্জনের জন্য তাকে অবশ্যই নিজ জাতির বৈশিষ্ট্য ছায়াছবিতে সদ্ব্যবহার করতে হবে । ' লুকানো বাঘ ও ড্রাগণে ' লি আন চীনের সংস্কৃতির কোংফু ছবিতে মেশানোর চেষ্টা করেছেন । কেউ কেউ বলেছেন , লি আনের ছায়াছবি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সংস্কৃতির মধ্যে একটি সেতু নির্মানকরেছেন । অনেক বিদেশী দর্শক এই কোংফু ছবি দেখে চীনকে জানতে শুরু করেন । এ সম্পর্কে চীনের তথ্য মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার হু খে বলেছেন , চীনের মূলভূভাগ , হংকং ও তাইওয়ানের অনেকে মনে করেন না ' লুকানো বাঘ ও ড্রাগণ ' এক শ্রেষ্ঠ কোংফু ছবি । কিন্তু লি আন তার ছবিতে পাশ্চাত্য দেশের অনেক ধারণা যোগ করেছেন এবং প্রাচ্যের বৈশিষ্ট্যের কিছু পরিবর্তন করেছেন । ফলে পশ্চিমা দেশের দর্শকরা লি আনের এই ছবি দেখে মনে করেন ছবিটির সাংস্কৃতিকপরিবেশ তাদের পরিচিত , তবু যেন নিজ দেশের সংস্কৃতির মধ্যে কিছু তফাত্ আছে , কিন্তু তফাত্গুলো তারা উপলব্ধি করতে পারেন । এই ধরনের ছায়াছবি শ্রেষ্ঠ বিদেশী ছবির পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী ।

    ১৯৫৫ সালে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান বিদেশী চীনা হুয়াং চুং জানের তৈরী ছবি ' গোলাপের টাটু ' ২৮তম অস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র গ্রাহক পুরষ্কার পেয়েছে । এর পরের ত্রিশাধিক বছরে চীনাদের কোনো ছবি অস্কার পুরষ্কার পায় নি । ১৯৮৮ সালে চীনের তৈরী ছায়াছবি ' শেষ সম্রাট ' ৬০তম অস্কার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ ছবি , শ্রেষ্ঠ পরিচালক , শ্রেষ্ঠ সংগীত ও শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র শিল্পীসহ মোট নয়টি পুরষ্কার পেয়েছে । এই সাফল্য চীনের চলচ্চিত্র কর্মীদের বিরাট অনুপ্রেরণা দিয়েছে । এর পরের দশ বছরে তারা অস্কার পুরষ্কার পাওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন , এদের মধ্যে পরিচালক চাং ই মাও ও ছেন খাই কোতাদের প্রতিনিধি বলা যায় ।

    চীনের পঞ্চম প্রজন্মের চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ই মোও নিজের অস্কার বিজয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি । ১৯৯০ সালে তার তৈরী ছায়াছবি ' চু তৌ ' অস্কার পুরস্কারেরজন্য মনোনয়ন পেয়েছে । এর পরের কয়েক বছরে তিনি ' বড় লাল লন্ঠন ঝুলানো বাড়ী ' , ' বীর ' ও ' ছুরি ছোড়া সম্প্রদায় ' অস্কার পুরষ্কার বিচারক কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন , কিন্তু কোনোটিই পুরষ্কার পায় নি । ১৯৯৩ সালে পরিচালক ছেন খাই কের পরিচালিত ' রাজার উপপত্নী বিদ্যায় ' দুটি অস্কার পুরষ্কারের মনোনয়ন পেয়েছে । কিছু দিন পর তিনি তার পরিচালিত ছবি ' সীমাহীন ' পাঠিয়েছেন , কিন্তু তাও মনোনয়ন পর্যন্ত পায় নি ।

    গত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথম দিকে চীনের চলচ্চিত্র ব্রতের দ্রুত প্রসার হয় । পঞ্চম প্রজন্মের পরিচালকদের পরিচালিত ছবিগুলো বিদেশের চলচ্চিত্র উত্সবে বার বার পুরষ্কার পেয়েছে । চাং ই মৌয়ের পরিচালিত ছবি ' লাল লন্ঠন ঝুলানো বাড়ী ' ' ছিউ চুর মামলা দায়ের ' ' বেঁচে থাকা ' আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের যুব পরিচালকদের পরিচালিত ছায়াছবিগুলোও ভেনেজিয়া চলচ্চিত্র উত্সব, ফ্রান্সের কেইনজ চলচ্চিত্র উত্সব , স্পেনের সেন্ট সেবাস্টিয়ান চলচ্চিত্র উত্সব আর টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে পুরষ্কার পেয়েছে । গত বিশ বছরে বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে চীনা ছায়াছবির প্রভাব সম্বন্ধে ফ্রান্সের এক চলচ্চিত্র পত্রিকার সম্পাদক জেন মিশেল ফ্রডোন বলেছেন , আমরা চীনের ছবিগুলোকে বিশ্বের চলচ্চিত্র জগতকে দেয়া এক মূল্যবান উপহার বলে মনে করি । বিভিন্ন দেশের দর্শকরা এই সব ছবি থেকে চীনা নাগরিকদের নতুন জীবন , নতুন দৃষ্টিকোণ , নতুন সংগীত ও নতুন দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন । এটা শুধু চলচ্চিত্র জগতের প্রতি অবদান নয় , বিশ্ব সংস্কৃতির প্রতিও একটি বড় অবদান ।

    চীনা ছবিগুলো অস্কার পুরষ্কার পাওয়ার গৌরব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ সম্বন্ধে প্রফেসার হু খে বলেছেন , চীনের দর্শক ও চলচ্চিত্র কর্মীদের এ ব্যাপারে উদার মনোভাব পোষণ করতে হবে । কারণ অস্কার পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রধান কারণ হলো অস্কার পুরষ্কারের মানদন্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া এক কঠিন ব্যাপার , চীনা ছবিগুলো তৈরীর প্রধান উদ্দেশ্যই চীনা দর্শকদের মুগ্ধ করা , তাই অস্কার বিচারক কমিটির গ্রহণ না করা স্বাভাবিক ব্যাপার । অন্য দিকে অস্কার পুরষ্কার জয় করার অর্থ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পীয়ন নয় , এই পুরষ্কার বলতে শুধু এটা বুঝায় যে এই ছবিকে আমেরিকার সংস্কৃতি স্বীকৃতি দিয়েছে । তাই চীনা চলচ্চিত্র কর্মীদের শান্তমনে নিজের চলচ্চিত্রের মান উন্নত করতে হবে । অস্কার পুরষ্কার পাওয়ার জন্য ছায়াছবি তৈরী করা জুয়াখেলার মতো , এতে জয়ের সম্ভাবনা খুব কম । এর পরিবর্তে নিজ দেশের নাগরিকদের পছন্দের ছবি তৈরী করাই ভালো , এক দিন না একদিন , অস্কার পুরষ্কার প্রাচ্যের চলচ্চিত্রের প্রতি নজর রাখবে ।