গত সোমবার বাগদাদে ১৯৮২ সালে দুজাইলের গ্রামবাসীদের হত্যা মামলার ওপর ইরাকের হাইকোর্টে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও তার ৭জন পদস্থ সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিচার আবার শুরু হয় । চীফ এটর্নী জাফর আল-মৌসাভি বিচারের সর্বশেষ ব্যাখ্যায় আদালতের কাছে সাদ্দাম হোসেন , সাদ্দামের ভাই, প্রাক্তন গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল সদস্য বার্জান ইব্রাহিম ও প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট তাহা ইয়াসিন রামাদানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন । এতে প্রতীয়মাণ হয় যে, ৮ মাসস্থায়ী এবারের বিচার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে ।
প্রধান বিচারপতি রাউফ আবদেল-রহমান , সকল এটর্নী , সাদ্দাম হোসেন ও তার ৭জন সহকর্মী সোমবারের আদালতে উপস্থিত ছিলেন । তবে সাদ্দামের পক্ষের আইজীবি দলের কিছু সদস্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না । চিরাচরিতের মত সাদ্দাম কালো রংয়ের পশ্চিমা স্যুট ও সাদা শার্ট পরেন এবং টাই পরেন নি । তিনি নিরবে আসনে বসেছিলেন এবং মাঝেমধ্যে তার খাতায় কিছু লিখে নিয়েছিলেন ।
চীফ এটর্নী সর্বশেষ ব্যাখ্যা করার পর প্রধান বিচারপতি ঘোষণা করেন , আগামী বিচার ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে । তখন উকিল পক্ষ সর্বশেষ ব্যাখ্যা করবে ।
ইরাকের এটর্নী বিভাগ অভিযোগ করে বলেছে , ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের যানবহর বাগদাদের ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দুজাইল গ্রামের পাশ দিয়ে চলার সময়ে আক্রমণের সম্মূখীন হয় । তবে সাদ্দাম সৌভাগ্যবশ্যত এই আক্রমণ থেকে রেহাই পান । অত:পর ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত দুজাইল গ্রামের ১৪৮জন গ্রামবাসীদের গ্রেফতার করে এবং তাদের হত্যা করে । বিচারের মাধ্যমে ইরাকের হাইকোর্ট মনে করে যে , এই হত্যা মামলায় সাদ্দাম ও অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধ অকাট্য । তাই আরব জনমত অনুমান করছে যে , সাদ্দাম সম্ভবত মৃত্যুদন্ডের সম্মুখীন হবে । তবে অচিরেই এই মৃত্যুদন্ড কার্যকরীকরণের সম্ভাবনা বেশি নয় ।
প্রথমত সাদ্দামের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ , জাতিগত হত্যাকান্ড ইত্যাদি দশ বারোটি অভিযোগ আনা হয়েছে । উকিল পক্ষের সর্বশেষ ব্যাখ্যার পর ৫জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বিচারকদল তাদের রায় পিছিয়ে দিতে পারে । মৃত্যুদন্ডের রায় দিলেও তার কার্যকরীকরণ দেরী হতে পারে । খুব সম্ভবত সাদ্দামের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ বিচারের পর একসাথে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অপরাধের জন্যেশাস্তি দেয়া হবে ।
দ্বিতীয়ত বিশ্লেষকদের মতে সাদ্দামের বিরুদ্ধে ইরাক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচারের কৌশল হচ্ছে তাড়াতাড়ি তা সম্পন্ন করে ফেলা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার অপরাধ নির্ধারণ করা ।তৃতীয়ত ইরাকের আইন অনুসারে আদালতের বিচারের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আপিল করতে পারেন । সুতরাং এইজন্যেও চূড়ান্ত রায় কয়েক মাস পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে ।
|