v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-20 14:20:36    
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুই ওই'র কাহিনী

cri
    চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিজের বুদ্ধি ও সাহস দিয়ে তিনটি ছেলের জীবন রক্ষা করেছেন । সাম্প্রতিককালে তাঁর কাহিনী চীনের গণ মাধ্যমের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । তার নাম সুই ওই । তিনি থিয়ান চিন শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও টেলিযোগাযোগ ইঞ্জিনিয়ারীং ইন্স্টিটিউটের ছাত্র । আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবো । অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করছি আমি শি চিং উ ।

    ২০০৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঠিক বড় দিনের দু দিন পর থিয়ান চিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাধারণ দিনের মত শান্তি ও শৃংখলা বিরাজ করছিল । ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষামেয়াদের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল । বিকেল সোয়া চারটায় ক্যাম্পাসের পান হ্রদ থেকে হঠাত " বাঁচাও বাঁচাও" আওয়াজ ভেসে আসল । এই আর্ত চীত্কার শুনে সুই ওই দ্রুতভাবে ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে গেলেন । পান হ্রদের আয়তন বড় নয় , তবে পানি বেশ গভীর । তখন দুজন কিশোর বরফ পানির মধ্যে ডুবে প্রাণ রক্ষার চেস্টা করছিল । তাদের মধ্যে একজন প্রায় ডুবো ডুবো অবস্থায় ছিল । তার কেবল একটি হাত পানির ওপরে ছিল। হ্রদের তীরে দাঁড়ানো একজন কিশোর নিরুপায় অবস্থায় ছিল ।

    এই দৃশ্য দেখে সুই ওই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গা নামিয়ে এক হাত দিয়ে দৃঢ়ভাবে বরফের গর্তের প্রান্ত আকঁড়ে ধরলেন এবং অন্য হাত দিয়ে সজোরে ডুবন্ত কিশোরকে টেনে আনার চেষ্টা করলেন । হঠাত হ্রদের বরফ ভেঙে যাওয়ায় সুই ওই ও তার পাশের কিশোরটি একসাথে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা পানিতে পড়ে গেলেন । এমন সংকটাপন্ন অবস্থায়ও সুই ওই স্থিরচিত্তে তার সাঁতার কাটার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে খুবই কষ্টে তিনজন কিশোরকে একের পর এক হ্রদের বরফী পানির ওপরে তুলে দিলেন । তিনি তাদের নড়াচড়া না করার পরামর্শ দিলেন এবং নিজে দু হাত দিয়ে মজবুতভাবে হ্রদের বরফী পানি আঁকড়ে ধরে জোরের সঙ্গে ওপরে ওঠার চেষ্টা করলেন ।

    অথচ কেউ ভাবতেও পারেন নি , সুই ওই অর্ধেক গা ওঠার পর পানির বরফ আবার ভেঙে যাবে। তিনি আবার হ্রদের পানির মধ্যে ডুবে গেলেন । এই মুহুর্তে সুই ওই'র দুটো হাত ও বাহুর অনেক জায়গা জখম হওয়ায় রক্ত ঝরতে শুরু করল । তবে তিনি নিজের ব্যথা সহ্য করে আতংকগ্রস্ত তিনজন কিশোরকে আশ্বস্ত করে বললেন , " তোমরা ভয় পেয়ো না । আমি অবশ্যই ওপরে ওঠতে পারবো এবং তোমাদেরকেও বাঁচিয়ে তুলতে পারবো । তোমরা অটল থেকো।" সঙ্গে সঙ্গে সুই ওই ত্রাণকাজে নিয়োজিত লোকদের বললেন , " আপনারা আর এদিকে আসবেন না , এখানকার অবস্থা খুবই বিপদজনক ।"

    অবশেষে সুই ওই একটি শক্ত বরফ আঁকড়ে ধরে প্রাণপনে চেষ্টা করে বরফ পানির ওপরে ওঠলেন । এই সময়ে তাঁর আশেপাশের বরফ পানি আবার নড়াচড়া করতে শুরু করল । আরো বিপদজনক অবস্থা এড়ানোর জন্যে সুই ওই ত্রাণকর্মীদের তার কাছে না আসার পরামর্শ দিলেন । তিনি তাদের একটি লাঠি জোগাড় করতে বললেন । তিনি এই লাঠি দিয়ে তিনজন কিশোরকে একের পর এক বরফের গর্ত থেকে তুলে নিলেন । কিশোররা বেঁচে গেল । অথচ সুই ওই অতি ক্লান্তির ভারে নিস্তেজ হয়ে ভিজে অবস্থায় মাটিতে বসে একটি কথাও বলতে পারলেন না । এই ঘটনার পর কিশোরদের অভিভাবকরা তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে জোর করে সুই ওই'র হাতে এক হাজার ইউয়ান দিয়ে দিলেন । তিনি শিক্ষকদের মাধ্যমে এই টাকা থিয়ান চিন যুক্ত অধ্যয়ণ সহায়তা তহবিল সংস্থার কাছে চাঁদা দিয়েছেন ।

    ২২ বছর বয়সী সুই ওই পূর্ব চীনের আন হুয়ে প্রদেশের ছাও হু শহরের একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবামা চাষাবাদ করেন । তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয় । তার তিন ভাইবোন আছে । তিনি ও তার বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং তার ছোট বোন চাকরি করেন । তবে পারিবারিক দুরবস্থা সুই ওইকে দমিয়ে দিতে পারে নি । তাঁর পরিচিত সকল লোক সবসময় তার আশাবাদ , আত্মবিশ্বাস ও উর্ধগামীতা অনুভব করতে পারেন ।

    ২০০২ সালে সুই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । তখন থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যায়ের কাছে চার বছরের শিক্ষা ফির জন্যে ঋণ নেয়ার দরখাস্ত করেন । শিক্ষা ফির সমস্যা সমাধানের পর তিনি পার্ট টাইম কাজ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন যাতে কিছু উপার্জন করে নিজের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানো যায় । গৃহশিক্ষকের কাজ পাওয়ার জন্যে অনেক সময় তিনি তীব্র শীতের মধ্যে কয়েক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন । তিনি মনোযোগের সঙ্গে ছাত্রদের পড়ান বলে তাদের শিক্ষা বিষয়ের দ্রুত উন্নতি হয় ।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর পড়ার সময়ে সুই ওই সাদাসিধে জীবনযাবন করে আসছেন । তাসত্ত্বেও যখন প্রথম শিক্ষামেয়াদের সময়ে ইন্স্টিটিউট কর্তৃপক্ষ তাকে ভাতা দিতে চাইল , তখন তিনি গ্রহণ করেন নি । তিনি তার শিক্ষককে এই ভাতা তার চেয়েও বেশি অভাবী ছাত্রদের দেয়ার প্রস্তাব বরেন । তার পরও তিনি কখনো এইরূপ ভাতা গ্রহণ করেন নি ।

    সুই ওই'র লেখাপড়া তার ক্লাসে শীর্ষ স্থানে রয়েছে । ক্লাসের সময়ে তিনি সর্বদাই প্রথম সারিতে বসেন । তিনি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস শুনেন , নোট করেন এবং শিক্ষকদের প্রতিটি কথা মনে রাখেন । শিক্ষকরা প্রশ্ন করলে তিনি সবসময় উদ্যোগের সঙ্গে হাত তুলে উত্তর দেন । ক্লাসের পর তিনি সরাসরি গ্রণ্থাগারে যান এবং তার শিক্ষার বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বইপত্র পড়েন । তার বাড়ির কাজও তার সহপাঠীদের থেকে ভিন্ন । একই প্রশ্নের জন্যে তিনি কয়েকটি সমাধান পদ্ধতি খুঁজে বের করতে ইচ্ছুক ।

    সকলের জানা আছে , সুই ওই'র লেখাপড়া শীর্ষস্থানীয় । তার পাশাপাশি তিনি অন্যদের সাহায্য করতেও পছন্দ করেন । শিক্ষক ও ছাত্রদের চোখে সুই ওই সরল ,বিনয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। গত কয়েক বছরে তিনি অনেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর বৃত্তি ও বিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেছেন ।

    পান হ্রদ থেকে কিশোরদের বাঁচানোর পর সুই ওই এই ঘটনার ওপর বেশি নজর দেন নি । অন্যরা এই সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বেশি বলতে চান না । অথচ তাঁর ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি অনর্গল কথা বলতে শুরু করেন । তিনি বলেছেন , তিনি স্নাকোত্তর ডিগ্রি পড়তে এবং নিজের জ্ঞানের কাঠামো সমুন্নত করতে ইচ্ছুক যাতে আগামী দিনগুলোতে তিনি মাতৃভূমির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির জন্যে নিজের অবদান রাখতে পারেন ।