এক সময়ে পৃথিবীতে যক্ষ্মারোগের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটতো। এতে কোটি কোটি লোকের মৃত্যু ঘটতো। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে ওষুধের অগ্রগতি এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট পর্যায়ে যক্ষ্মারোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো কোনো দেশ যক্ষ্মারোগ নিবারণ ও চিকিত্সা অবহেলা করেছে বলে তার বিপর্যয় আবার দেখা দেয়ার প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এক সময়ে চীনে যক্ষ্মারোগ খুব গুরুতর ছিলো। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ওয়াং লুং তে জানিয়েছেন:
"বর্তমানে চীনে যক্ষ্মারোগের প্রচলন গুরুতর বলা যায়। পৃথিবীতে ২২টি যক্ষ্মারোগের গুরুতরভাবে আক্রান্ত দেশের মধ্যে চীন অন্যতম। এ দিক দিয়ে ভারত পর চীনের স্থান।"
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে চীনে যক্ষ্মারোগীদের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ। এটা গোটা লোকসংখ্যার ০.৩৪ শতাংশ। প্রতি বছরে ১.৩ লক্ষ মানুষ এই রোগে প্রাণ হারান। তা অন্যান্য সংক্রামক রোগে মারা যাওয়া মোট সংখ্যার চেয়েও বেশী।
বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে চীনে শিশুদের জন্য যক্ষ্মারোগের টিকাদানের কাজ শুরু হয়। তাহলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা এতো বেশী কেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সে রকম টিকা শুধু শিশুদের জন্য কার্যকর। তাতে বুঝা যায় যক্ষায় আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত ও চিকিত্সা করার উপরে গুরুত্ব দেয়া হলো এই রোগ রোধের কার্যকর পদ্ধতি।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত করার জন্য চীন সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন যক্ষ্মারোগ পরীক্ষার ব্যবস্থা, পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং এ রোগ নিবারণ ও চিকিত্সা সংক্রান্ত জ্ঞানের প্রচার ইত্যাদি। ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাসে চীনে দেশব্যাপী সংক্রামক রোগ রিপোর্টের নেটওয়ার্ক স্থাপিত হয়।
সঙ্গে সঙ্গে চীন সরকার গ্রামীণ ডাক্তাদের যক্ষ্মারোগীদের সনাক্ত করার জন্য পুরষ্কার দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ব্যবস্থা তাদের যক্ষ্মারোগীদের সনাক্ত করার সক্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের সিনমি শহরের একজন স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা চিন হুং চিয়ান বলেছেন:
"গ্রামীণ চিকিত্সকরা যক্ষ্মারোগীদের সনাক্ত করতে খুব আগ্রহী। প্রতি বছর আমরা এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধান করি। যদি কেউ এসম্পর্কে রিপোর্ট না দেন তাহলে আমরা তাদের শাস্তি দেবো।"
এমনভাবে চীনের যক্ষ্মারোগীদের আবিষ্কারের হার উন্নত হয়েছে। ২০০৩ সালে চীনের যক্ষ্মারোগীদের আবিষ্কারের হার ছিল ৩৯ শতাংশ মাত্র, ২০০৫ সালে তা ৭৯শতাংশ হয়েছে।
তাছাড়া যক্ষ্মারোগীদের চিকিত্সা করাই হচ্ছে চীনের এ রোগ রোধের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।
২০০১ সাল থেকে চীন সারা দেশে বিনাখরচে যক্ষ্মারোগীদের পরীক্ষা ও চিকিত্সা করার ব্যবস্থা চালু করেছে এবং রোগীদের ওষুধ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রের অর্থ সুনিশ্চিত করার জন্য চীনের কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর ৪ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করতো। ২০০৪ সালে তা ৩০ কোটি ইউয়ানে বাড়ানো হয়েছে। ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে চীনে যক্ষ্মারোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। তার মাধ্যমে চীনের স্বাস্থ্য বিভাগ যক্ষ্মারোগীদের তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের চিকিত্সার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
চিকিত্সার ক্ষেত্রে চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ্ধতি ব্যবহার করে। তা হলো পর্যবেক্ষকের সামনাসামনে ওষুধ খেতে হবে। ছিও ছুই লি হলেন পেইচিংয়ের একটি হাস্পাতালের যক্ষ্মারোগের চিকিত্সক । তিনি বলেছেন:
"প্রতিদিন যক্ষ্মারোগীরা আমাদের এখানে এসে আমার সামনে ওষুধ খেয়ে ফেলেন। ওষুধ খাওয়া বন্ধ হলে রোগীদের চিকিত্সা আরো কঠিন হবে।"
মাদাম ছিও জানিয়েছেন, যক্ষ্মারোগীদের চিকিত্সার প্রক্রিয়ায় ওষুধ খাওয়া বন্ধ হলে তাদের ওষুধ-বিরোধী লক্ষণ দেখা দেবে। সাধারণত এই রোগের চিকিত্সা প্রক্রিয়া প্রায় আধ বছর লাগে। এর মধ্যে একবার ওষুধ খাওয়া বন্ধ হলে ওষুধ-বিরোধী লক্ষণ দেখা দেবে। ওষুধ-বিরোধী হলে চিকিত্সা আরো কঠিন হবে এবং এ ক্ষেত্রের খরচও অনেক বাড়বে। চীন চিকিত্সা পর্যবেক্ষক ব্যবস্থার মাধ্যমে এই অবস্থা কমিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
২০০৫ সালে চীনে যক্ষ্মারোগীদের আরোগ্যের হার ৯১শতাংশ হয়েছে। তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছে।
|