v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-16 14:29:03    
আমডো তিব্বতী জাতির টেলিভিশন দেখার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে

cri
    এবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী তিব্বতী বর্ষের নববর্ষ । চীনে আমডো আঞ্চলিক ভাষাভাষী ২৬ লক্ষ তিব্বতী স্বদেশীয় নববর্ষে একটি মূল্যবান উপহার- পেরেছেন তাদের ব্যবহৃত আঞ্চলিক ভাষায় টেলিভিশন অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার শুরু হয়েছে । ফলে আমডো আঞ্চলিক ভাষাভাষী ব্যাপক তিব্বতী স্বদেশীয়দের টেলিভিশন দেখার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । এতক্ষণ আপনারা যে টেলিভিশন অনুষ্ঠান শুনলেন , তা আমডো ভাষায় প্রচারিত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিষয়ক অনুষ্ঠান ।

    চীনের ৫০ লক্ষ তিব্বতী জাতির জনসংখ্যার মধ্যে ২৬ লক্ষ তিব্বতী তিব্বতী ভাষার অন্যতম আঞ্চলিক ভাষা- আমডো ভাষায় ভাবের আদান প্রদান করে থাকেন । এদের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে বসবাসকারী তিব্বতীরা আমডো আঞ্চলিক ভাষায় মত বিনিময় করেন ।

    ৬২ বছর বয়স্ক কেসুন ছিংহাই প্রদেশের উত্তরাংশে বসবাসকারী তিব্বতী জাতির একজন পশুপালক । যেখানে পানি ও ঘাস আছে , সেখানে তিনি ও তার পরিবার পরিজন পশু চারণ করেন । এই ধরনের জীবনধারা খুব আরামদায়ক আর উদার । কিন্তু যেহেতু পশুচারণের স্থান নির্জন , সেহেতু তারা হয়তো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন । এমন কি টেলিভিশন যে কি ধরনের জিনিস তারা তাও জানেন না । এখন তিনি ও তার পরিবার পরিজন পশুপালকদের একটি গ্রামে বাস করেন । তার দু'তলা বিশিষ্ট একটি দালান নির্মাণ করা হয়েছে । সংবাদদাতা দালানে প্রবেশ করে দেখলেন , তিনি কয়েক জন তিব্বতী বয়স্কের সংগে আমডো আঞ্চলিক ভাষায় প্রচারিত টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখছেন । তিনি বলেছেন ,

    আগে এখানে কিছু কিছু পশুপালকের বাড়িতেও টেলিভিশন ছিল । কিন্তু টেলিভিশন থাকলে কি লাভ ? কারণ টেলিভিশনে শুধু হান ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো । তাই অনুষ্ঠানে যে কি কি বলা হয়েছে , তারা তা বুঝতেন না । তারা শুধু ছবি ও ভাবমূর্তি অনুসারে সারমর্ম আন্দাজ করতেন । এখন এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । কখন যে তিব্বতী ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয় , তা আগে থেকে ঘোষণা করা হয় । আমডো ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় বলে তারা সবাই বুঝতে পারেন । এখন সবাই এই অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করেন ।

    পশুপালক কেসুন বলেছেন , আগে যেখানে পানি ও ঘাস আছে , তারা শুধু সেখানে পশু চারণ করতেন । এখন এই ধরনের জীবনধারণের বদলে পশুপালকদের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে । গত কয়েক বছরে চীন সরকার তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের জন্য এক ধরণের অগ্রাধিকারমূলক নীতি পালন করে , বিশেষ করে গ্রামে গ্রামে বেতার আর টেলিভিশন অনুষ্ঠান গ্রহণ করা যায় এমন প্রকল্পও সম্পন্ন হয়েছে । ফলে কিছু কিছু স্বচ্ছল পশুপালক পরিবার আর শহরের নিকটে বসবাসকারী পশুপালকরা নিজেদের উপগ্রহযোগে টেলিভিশন গ্রাহক আর কেবল্ টেলিভিশন অধিকার করেছেন ।

    কিন্তু টেলিভিশন অনুষ্ঠান টেলিভিশনধারী তিব্বতী পশুপালকরা বিশেষ করে আমডো আঞ্চলিক ভাষাভাষী তিব্বতীদের জন্য কোনো উপভোগ ও আনন্দ বয়ে আনতো না । ছিংহাই প্রদেশের সংখ্যালঘুজাতি ইনস্টিটিউটের তিব্বত বিষয়ক বিভাগের পরিচালক , তিব্বত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সানজে সংবাদদাতাকে বলেছেন , তিব্বতী ভাষার লাসা আঞ্চলিক ভাষা , আমডো আঞ্চলিক ভাষা আর কামবা আঞ্চলিক ভাষা আছে । এর আগে যদিও কতকগুলো তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে টেলিভিশন কেন্দ্রে তিব্বতী ভাষার অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো , কিন্তু এই সব অনুষ্ঠান লাসা আর কামবা আঞ্চলিক ভাষায় প্রচারিত হতো , আমডো ভাষা ব্যবহার করা হতো না । মিঃ সানজে বলেছেন ,

    তিব্বতী ভাষায় লাসা আঞ্চলিক ভাষা , আমডো আঞ্চলিক ভাষা আর কামবা আঞ্চলিক ভাষার লিখিত ভাষা একই । কিন্তু ঐতিহাসিক কারণে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণের ব্যাপক পার্থক্য আছে । লাসা আঞ্চলিক ভাষাভাষীরা প্রধানতঃ তিব্বতের লাসা, সিগাজে প্রভৃতি অঞ্চলে বাস করেন । এই ধরণের আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণ নরম আর ছন্দপূর্ণ । আমডো আঞ্চলিক ভাষাভাষীরা প্রধানতঃ ছিংহাই প্রদেশ ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে থাকেন । সুতরাং তিব্বতী ভাষার ভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাভাষীরা একে অপরের কথা বুঝতে পারেন না ।

    ব্যাপক আমডো তিব্বতী জনতার তথ্য নিয়ন্ত্রণ আর অবসর সময়ের জীবনযাপন সমৃদ্ধ করে দেয়ার চাহিদা মেটানো আর অনুষ্ঠান সহজে বুঝাতে তাদের সাহায্য করার জন্য স্থানীয় সরকারের সমর্থনে ছিংহাই টেলিভিশন কেন্দ্র গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে দিনে ৩ ঘন্টার আমডো আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে । তারা অনুষ্ঠানের রকমারিতা আর আকর্ষণের দিক থেকে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে । এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবার পর থেকে ব্যাপক তিব্বতী দর্শকদের সমাদর পেয়েছে । তারা টেলিফোন , চিঠি আর মোবাইল ফোনের স্বল্প বার্তার মাধ্যমে যার যার আবেগ ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন । নেপালে বসবাসকারী একজন আমডো তিব্বতী স্বদেশীয় ছিংহাই টেলিভিশন কেন্দ্রের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন , আমডো অনুষ্ঠান দেখার মাধ্যমে তিনি আরেকবার তিব্বতী জাতির মূল্যবান ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর জন্মস্থলের স্নেহ অনুভব করেছেন ।

    আমডো আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠান চীনের সমাজ , অর্থনীতি , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , সংস্কৃতি , শিক্ষা , স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রের সংগে জড়িত । ছিংহাই টেলিভিশন কেন্দ্রের তিব্বতী ভাষা বিভাগের পরিচালক নাপা বলেছেন , এই অনুষ্ঠানে তিব্বতী জনতার জনপ্রিয় সংগীত , নৃত্য , চিকিত্সা ও ওষুধপত্র প্রভৃতি বিষয়বস্তু সম্প্রচার করা হয় ।

    তা ছাড়া সংবাদ অনুষ্ঠানও আমডো তিব্বতীদের সমাদর পেয়েছে । তিব্বতীরা এই চ্যানেল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী খবরাখবরের ওপর মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন ।

    মিঃ নাপা বলেছেন , বর্তমানে দিনে ৩ ঘন্টার অনুষ্ঠানে তথ্য সংগ্রহের প্রতি আমডো তিব্বতীদের চাহিদা একেবারে মেটানো যাচ্ছে না । তিনি বলেছেন ,

    আমডো আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠানের সম্প্রচার শিশুদের হেঁটে চলা শেখার জন্য শুধু প্রথম পদক্ষেপ এগিয়েছে । সরকারের আস্থা আর ব্যাপক তিব্বতী জনতার আশা-আকাংক্ষার জন্য টেলিভিশন কর্মী হিসেবে আমরা নিজের ভারী কর্তব্য অনুভব করছি । তিনি বলেছেন , আমডো আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠান সম্প্রচারে এক দিকে আধুনিক সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমডো তিব্বতী জনতাকে পথনির্দেশনা করা হয়েছে , অন্য দিকে তিব্বতী সমাজের সার্বিক উন্নয়নে তা একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে ।