v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-15 15:41:51    
চীনের সুমহান মহা প্রাচীর

cri
    চীনের মহা প্রাচীরের কথা আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। মহা প্রাচীর হল চীনা জাতির গর্ব গণ্য করা হয়। মানব জাতির ইতিহাসের এই অন্যতম বৃহততম প্রকল্প আঁকাবাঁকাভাবে চীনের উত্তর ভূমিতে বিস্তীর্ণ হয়। মহা প্রাচীরহল যেমন সম্মৃদ্ধ সংস্কৃতিসম্পন্ন বিশ্বের সংস্কৃতি উত্তরাধিকার তেমনি স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে চীনের মহা প্রাচীর সম্বন্ধে আপনাদের পরিচয় দিচ্ছি।

    ২ হাজারাধিক বছর আগে অথার্ত চীনের বসন্ত ও শরত যুগে মহা প্রাচীরের নিমার্ণ কাজ শুরু হয়। এটা হল পৃথিবীতে নির্মাণের সময় সবচেয়ে দীর্ঘ এবং প্রকল্পের পরিমাণ সবচেয়ে বিরাট এমন একটি প্রাচীনকালের প্রতিরক্ষা প্রকল্প। খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে যুদ্ধমান রাজ্যসমুহের সময়পর্বের বিভক্ত-বিচ্ছিন্ন অবস্থার অবসান করে ছিন শিহুয়াং অথার্ত ছিন রাজবংশের প্রথম সম্রাট চীনের ইতিহাসে প্রথম একটি কেন্দ্রীভূত ঐক্যবদ্ধ বহুজাতিক সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বহুজাতিক সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র সংযুক্ত করার জন্যে এই মহা প্রাচীর নির্মিত হয়। হান রাজবংশ সময়কালে মহা প্রাচীরের দৈঘ্য ছিল ১০ হাজার অধিক কিলোমিটার । কিন্তু প্রথম কয়েকটি রাজবংশ সময়কালের মহা প্রাচীরের অংশগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে বলে বতর্মান সংরক্ষিত মহা প্রাচীর ৭০০ বছর আগে মিন রাজবংশে নির্মিত ছিল।

    তাহলে এত সুমহান স্থাপত্য প্রকল্পের নিমার্ণকারী কে ছিলেন? মহা প্রাচীর গবেষণা আর সংরক্ষণের বিশেষ সংস্থা---চীনের মহা প্রাচীর ইনস্টিটিউটের মহা সচিব মিস্টার ডং ইয়াও হুই ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

    যারা মহা প্রাচীর তৈরী করেছেন তারা প্রধানত তিন অংশে বিভক্ত হয়। প্রথম অংশ ছিল সৈন্যবাহিনীর সৈন্য। কারণ মহা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ একটি রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম। সৈন্যবাহিনী অবশ্যই এই প্রকল্প নির্মাণের প্রধান অঙ্গ। দ্বিতীয় অংশ ছিল বিভিন্ন জায়গার জনতা । তৃতীয় অংশ ছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো অপরাধীরা।

    মহা প্রাচীরের প্রধান প্রকল্প ভূবৈচিত্র অনুসারে তৈরী বরা হয়। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সাধারণত মহা প্রাচীর উচু উচু পাহাড়ের গায়ে নির্মিত হয়। মহা প্রাচীরে অজস্র পযর্বেক্ষণ টাওয়া (সংকেত জ্ঞাপক অগ্নি মন্চল) রয়েছে। অতীতে মহা প্রাচীরে মোতায়েন সৈন্যরা বজবুত আর উচু উচু প্রাচীরের সাহায্যে আক্রমণকৃত শত্রুদের প্রতিরোধ করতেন।

    বতর্মানে সামরিক ব্যবস্থা হিসেবে মহা প্রাচীর ভূমিকা আর নেই। এখন মহা প্রাচীর বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূরাকীর্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক বছর মহা প্রাচীর হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পযর্টককে আকর্ষণ করে।

    পেইচং অংশের মহা প্রাচীর সবচেয়ে সুমহান আর সজবুত।কারণ এই অংশের মহা প্রাচীর রাজধানী আর রাজাদের সমাধিগুলো রক্ষা করার ভূমিকা পালন করত। সম্প্রতি পেইচিংএর উপকন্ঠে অবস্থিত বাডালিন, মুতিয়েয়ু, সিমাতেই প্রভৃতি জায়গা মহা প্রাচীরের একটি বিখ্যাত দর্শনীয়স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    পেইচিং অঞ্চলের মহা প্রাচীরে সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ হল পেইচিং শহরের উত্তর দিকের ' বাডালিন মহা প্রাচীর'। এখনকার মহা প্রাচীরের স্থাপত্য বিশেষভাবে মজবুত এবং সবচেয়ে অক্ষতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। পযর্টকরা সাধারণত এই অংশের মহা প্রাচীরে আরোহন করেন। পাহাড় দিয়ে বাডালিন মহা প্রাচীর নির্মান করা হয়। প্রাচীরের গড় উচ্চতা প্রায় আট মিটার । প্রাচীরের দেওয়ালে ২০০ মিটার পর পর একটি পযর্বেক্ষণ পোস্ট আছে। ২২ বছর বয়স্ক ফরাসী মেয়ে ইলিয়েননা যিতি বেশ কয়েক বার বাডালিন মহা প্রাচীর পরিদর্শন করতে এসেছেন তিনি বললেন, তিনি কখন প্রথম বার মহা প্রাচীরে আরোহনের অনুভুতি ভুলবেন না। তিনি আগেবের সঙ্গে বললেন,

    সে দিনের অভিজ্ঞতা কোন দিন ভুরবো না। সামনের মহা প্রাচীর আঁকাবাঁকা হয়ে সুদূর পযর্ন্ত বিস্তীণ হয়। চার দিকে কেবল সবুজের সাগর। কি সুন্দর দৃশ্য! আমার মনে সবচেয়ে গভীর ছাপ রেখেছে তা হল আমরা সশরীরে পাথরের সিঁড়ি দিয়ে এক ধাপ এক ধাপ উপর দিকে আরোহন করতে পারি। খুব ক্রান্ত বটে কিন্তু আমরা চার দিকের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারি।

    বাডালিন মহা প্রাচীরের পূর্ব দিকে বিখ্যাত মুতিয়েনয়ু মহা প্রাচীর। এটাও হল বতর্মানে অপেক্ষাকৃতভাবে সংরক্ষিত মহা প্রাচীরগুলোর অন্যতম। মুতিয়েনয়ু মহা প্রাচীরে তিন সারি সামানভাবে দাঁড়ানো টাওয়া গোটা মহা প্রাচীর বরাবার এলাকার একটি স্ববৈশিস্ট্যসম্পন্ন দৃশ্য। তা ছাড়া, এই অংশের মহা প্রাচীরের চার দিকে অনেক ধরনের গাছ আছে। বিশেষভাবে বসন্তকালে গাছগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে। দৃশ্য খুবই সুন্দর।

    তা ছাড়া, পেইচিং অঞ্চলে বিখ্যাত মহা প্রাচীরের অংশ আরও অনেক আছে। যেমন দুটো পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত সুমহান জিয়ুরংগুয়ে মহা প্রাচীর। এই অংশের মহা প্রাচীরের বৈশিষ্ট্য আছে। অনেক পযর্টক ওখানের দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন।

    মহা প্রাচীর শুধু যে একটি মহান স্থাপত্য তাই নয়, চীনের দু'হাজারাধিক বছরের সামাজ পরিবর্তনের ইতিহাসের সাক্ষীও ।কেউ কেউ বলেন, মহা প্রাচীর হল চীনা জাতির হাড়। কিন্তু চীনা মানুষের পক্ষে মহা প্রাচীর চীনা জাতির জাতীয় মর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। তাইওয়ানের পযর্টক মিস্টার লেই বাও চিয়া বললেন, চীনা মানুষ হিসেবে প্রত্যেক বার যখন তিনি মহা প্রাচীর দেখেন তখন তিনি গর্ব বোধ করেন। তিনি বললেন,

    মহা প্রাচীর জাতির মর্ম প্রতিনিধিত্ব করে। এতে চীনা মানুষের বুদ্ধি প্রতিফলিত হয়। সুদীর্ঘকালের এই স্থাপত্য এখনও পৃথিবীর পৃষ্ঠায় সুহানভাবে সংরক্ষিত আছে। এর জন্য আপনি গর্ব না করার কোন কারন নেই।

    চীনে একটি প্রভাব আছে, মহা প্রাচীরে আরোহন না করলে খাঁটি পুরুষ নয়। মহা প্রাচীর কেবল চীনের পুরাতন সভ্যতার ফলক তাই নয় বিশ্বের মূল্যবান সংস্কৃতির উত্তরাধিকারও। যদি আপনার চীন ভ্রমনের সুযোগ পান তাহলে নিশ্চয়ই মহা প্রাচীর দেখতে যান।