v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-14 10:35:47    
চিত্রশিল্পী ছেন তান ছিং

cri
    ছেন তান ছিং চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের প্রফেসার ছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রধান প্রধান তথ্য মাধ্যমে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোতে প্রায়ই তার নাম উল্লেখ করা হয় । চিত্রশিল্পী ছেন তান ছিংয়ের অসাধারণ অভিজ্ঞতা , তার শৈলপিক নৈপুন্য উন্নত করার নিরলস প্রচেষ্টা আর সবসময় সত্যি কথা বলার সাহসিকতা চিত্রশিল্প জগতে সুনাম কুড়িয়েছে ।

    ছেন তান ছিংয়ের বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশি । তিনি একজন পন্ডিত স্টাইলের চিত্রশিল্পী । তিনি চীনের ঐতিহ্যিক জামা-পোশাক পরতে পছন্দ করেন । চশমার পিছনের দুটি চোখ তীক্ষ্ণ , মাথার চুল কম । তার নামে ছেন হচ্ছে তার পারিবারিক উপাধি , তান ছিংয়ের অর্থ চীনে চারুকলার ঐতিহ্যিক নাম । আমাদের সংবাদদাতার সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে ছেন তান ছিং তার চিত্রশিল্প চর্চার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন । তার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে তিন পর্যায়ে বিভক্ত । এই তিন পর্যায় হলোঃ গ্রামাঞ্চলে ছবি আঁকা শিখা , আমেরিকায় পড়াশুনা করা আর দেশে ফিরে শিক্ষকতা করা ।

    ছেন তান ছিং পূর্ব চীনের সাংহাই শহরে জন্মগ্রহণ করেন । সাংহাই থাকাকালে তিনি পাশ্চাত্য দেশগুলোর কিছু ছবি দেখার সুযোগ পান । তিনি সেই সব ছবি খুব পছন্দ করেন এবং ছবি আঁকা শেখার আকাংখা পোষণ করেন। ১৯৭০ সালে চীনে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দরুন চীনে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছিল । ১৭ বছর বয়সী ছেন তান ছিং তখনকার অনেক যুবক-যুবতীর সঙ্গে মধ্য চীনের চিয়াং সি প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে গিয়েছেন। সেখানে তিনি প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্ষেতের কাজ করেন । বিশ্রামের সময় তিনি মাটিতে বসে বসে নিজের ভবিষ্যত চিন্তা করেন । সময় কাটানোর জন্য তিনি ইচ্ছামতো ছবি আঁকেন । পরে তিনি গ্রামাঞ্চলের একটি দেহভষ্ম বাক্সের কারখানায় এক পেশাদার চিত্রকর হিসেবে ভষ্মের বাক্সে ছবি আঁকেন । সেই সময়ের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ছেন তান ছিং বলেছেন , আমি গ্রামাঞ্চলের উত্পাদন টিমের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি ভস্ম বাক্সের কারখানায় কাজ করেছিলাম । আমার ওস্তাদ ভস্ম বাক্স তৈরী করেন , আমি বাক্সের উপর ছবি আঁকি , ভস্ম বাক্সের উপর আমি প্রায়ই পাইন গাছ , ফুল ও পাহাড় আঁকতাম । আমি মোট ছ শ'রও বেশী বাক্সে ছবি একেঁছি ।

    ছবি আঁকার এই সুযোগ পেয়ে ছেন তান ছিংয়ের ছবি আঁকার নৈপুণ্যের উন্নতি হয়েছে । পরে তিনি বাচ্চাদের ছবির বই , বইয়ের ভিতরের ছবি আর বিজ্ঞাপন একেঁছেন । যদিও ছেন তান ছিং আনুষ্ঠানিকভাবে চিত্রশিল্প শিখেন নি , তবে তার আঁকা ছবিগুলো সমাদৃত হয়েছে ।

    ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছেন তান ছিং ছবি আকঁতে তিব্বতে যান । ঠিক সেই সময় নয়া চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুঙয়ের মহাপ্রয়ান হল । খবর পেয়ে গোটা দেশের জনগণ গভীর শোকে অভিভুত হন । নিজের মনের বেদনা প্রকাশের জন্য ছেন তান ছিং ' শোকাকুল তিব্বতী জনগণ ' নামে একটি বড় আকারের তৈল চিত্র একেঁছেন । ছবিতে হলদে রঙের গমের ক্ষেতে কালো রঙয়ের পোশাক পরা তিব্বতী অধিবাসীরা মহান নেতা মাও সেতুঙয়ের প্রয়ানের খবর পেয়ে গম কাটার কাজ বন্ধ করে চেয়ারম্যান মাওয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন । সোনালী রঙের গম আর তিব্বতী অধিবাসীর গায়ের কালো রঙের বৈশিষ্ট্যময় পোশাক তিব্বতী অধিবাসীদের মনের জটিল ভাবাবেগ প্রকাশ করেছে । এই তৈলচিত্র চীনের জাতীয় চিত্রশিল্প প্রদশর্নীতে স্থান পেয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের উচ্চ মূল্যায়ন পেয়েছে । তখন থেকে ছেন তান ছিংয়ের খ্যাতি চীনের চারুকলা জগতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে । এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন , আমার ভাগ্য ভালো । এই ছবি আমার আকাংখা বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করেছে । ১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন জায়গার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতকোত্তর ছাত্র ভর্তির কাজ শুরু হয় । আমার এই ছবি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করতে সাহায্য করেছে । ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি গ্রামাঞ্চল ত্যাগ করে চীনের কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউসে পড়াশুনা করতে শুরু করেছি ।

    চীনের কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটে ছেন তান ছিং আনুষ্ঠানিকভাবে পাশ্চাত্য চিত্রশিল্পের তত্ত্ব শিখেছেন এবং তার পেশাদার চিত্রশিল্পীর জীবন শুরু করেছেন । দু' বছর পর ছেন তান ছিং দ্বিতীয় বার তিব্বতে যান । সেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেন , স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে আলাপ করেন এবং প্রচুর স্কেচ ছবি একেঁছেন । এই সব স্কেচ ছবির ভিত্তিতে তিনি তিব্বত সম্পর্কিত সিরিজ ছবি একেঁছেন । ১৯৮০ সালের অক্টোবর মাসে ছেন তান ছিংয়ের আঁকা তিব্বত সম্পর্কিত সিরিজ ছবি চীনের কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটের স্নাতকোত্তর ছাত্রদের একটি চিত্রপ্রদশর্নীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । এই সিরিজ ছবি চীনের আধুনিক চারুকলা শিল্পের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় সংযোজিত করেছে ।

    যদিও এই সিরিজ ছবি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে , কিন্তু ছেন তান ছিং সন্তুষ্ট হন নি । তিনি আরো বেশী পড়াশুনা করতে চান । ১৯৮২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত একজন আত্মীয়ের আমন্ত্রণে ছেন তান ছিং যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন । সেখানে তিনি জীবিকার প্রয়োজনে গ্যালারীর জন্য ছবি আঁকেন , সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাশ্চাত্য দেশগুলোর চিত্রশিল্পীদের আঁকা প্রচুর ছবি উপভোগ করেছেন । তিনি আমেরিকায় ১৮ বছর ছিলেন । এই ১৮ বছরে তিনি একদিনও তুলি -বিরতি নেন নি ।

    ২০০০ সালে ছেন তান ছিং দেশে ফিরে আসেন এবং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের প্রফেসার হন । ছেন তান ছিংয়ের চিন্তাভাবনা ও শিক্ষা পদ্ধতিএবং ঐতিহ্যিক পদ্ধতির মধ্যে তফাত্ বেশী । তিনি ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয় তথা চীনের শিল্পকলা জগতে টাটকা বাতাস এনে দিয়েছেন । তিনি ছাত্রদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাদের শিক্ষা দেন এবং প্রত্যেক ছাত্রের নৈপুন্য চিত্রকর্মে প্রকাশ করতে উত্সাহ দেন । ছেন তান ছিং একজন দৃঢচিত্তের মানুষ । তিনি সাহসের সঙ্গে নিজের মত প্রকাশ করেন এবং চীনের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষা সম্বন্ধে অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন ।

    এক বছর আগে ছেন তান ছিং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার পদ ত্যাগ করে একমনে চিত্রকর্ম সৃষ্টি করতে শুরু করেন । ছেন তান ছিং শুধু ছবি আঁকেন না , তিনি সংগীত পছন্দ করেন এবং প্রবন্ধ লিখেন । তার বতর্মান জীবন সম্বন্ধে তিনি বলেছেন , আমি শুনেছি আমার লেখা বই পাঠকরা পছন্দ করেন । তাই বইগুলোর বিক্রি খুব ভালো । যারা আমার ধারনায় এক মত হতে পারেন নি , তারাও মনে করেন আমার লেখা বইগুলোর ভাষা ভালো । কিন্তু আমার আঁকা ছবিগুলো তাদের প্রশংসা কম পায় । আমি নিজেও মনে করি আমার ছবিগুলো মনের মতো হয় নি । ছেন তান ছিংয়ের লেখা বই ' নিউইয়র্কের অভিজ্ঞতা ' , ' ছেন তান ছিংয়ের সংগীত নোট ' ইত্যাদি বই পাঠকদের প্রশংসা পেয়েছে ।