গিতোকে দেখে আপনি তাকে কৃষক বলে মনে করবেন না। কিন্তু তিনি সত্যি কৃষক আর তাঁর বাবা ও বাবার বাবাও কৃষক। ৩২ বছর বয়স্ক গিতো গর্বের সঙ্গে বলেছেন "আমাদের ফার্ম ২০০ বছরের ইতিহাস আছে। আমি পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম কৃষক।"
গিতো ও তার বাবা মা একসঙ্গে ফার্মটি পরিচালনা করেন। তাদের ফার্মে প্রধানত গাভী পালিত হয়। ৮০ হেক্টর চাষের ভূমি ছাড়া ফার্মে ১০০টি গাভী ও ৬০টি বাছুর আছে। প্রতি বছরে প্রায় ৮৫০ হাজার কেজির দূধ উত্পাদিত হয়। হোল্যান্ডে প্রায় ২৩ হাজারটি ডেয়ারি ফার্ম আছে। গিতোর ফার্ম মাধারি আকারের।
তিন জন কিভাবে এতো বড় একটি ফার্ম পরিচালনা করে? গিতো বলেছেন, এক পক্ষে যন্ত্রপাতি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মার্ধমে কার্যকর ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা যায়। অন্য দিকে হোল্যান্ডে অনেক বছর ধরে একটি সম্পূর্ণ ফার্মের পরিসেবা ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে। এতে গিতোর ফার্ম কল্যাণ পেয়েছে।
গোশালা ঢুকলে দেখা যায় একের পর এক স্বাস্থ্যবান গাভী তাদের খড় ও ভূট্টা মিশানো খাবার খাচ্ছে। প্রতি গাভীর গলায় একটি নম্বর-সহ মালা আছে। গিতো বলেছেন, সাধারণ প্রাণীখাদ্য ছাড়া গাভীরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমানের চরবি ও আকরিক-সহ ঘনিভুত প্রাণীখাদ্য খায়। তাদের বয়স, স্বাস্থ্য অবস্থা ও দূধের পরিমান অনুযায়ী ঘনিভুত প্রাণীখাদ্য দেয়া হয়। তাদের মালার নম্বর হলো তাদের খাদ্যের পরিমানের অনুমতিপত্র। প্রতি গাভী ঘনিভুত খাদ্যের যন্ত্রপাদিতে মাথা ঢুকিয়ে মেশনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার আই.ডি চিহ্নিত করে তাকে নির্দিষ্ট পরিমানের ঘনিভুত খাধ্য দেবে।
গিতো বলেছেন, ফার্মের বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতি বেশীর ভাগের কাজ করেছে। যেমন প্রাণীখাদ্য মেশানো, দূধ নেয়া ও চাষ করা ইত্যাদি।
অগ্রসর প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি ছাড়া, ব্যক্তিগত পরিসেবা কোম্পানির পরিসেবা নেয়া ফার্মের অনেক সুবিধা দিয়েছে। গিতো বলেছেন, পারিবারিক ফার্ম হোল্যান্ডে খুব সাধারণ। তাতে অনেক পরিসেবা কোম্পানির জন্ম হয়েছে। তারা পরিশ্রম ও যন্ত্রপাতি ভাড়ানো ইত্যাদি পরিসেবা যোগানো। ফার্মের কাজ বেশী হলে তাদের ফোন করে অর্ধেক ঘন্টার মধ্যে পরিসেবক আসবে। তাছাড়া, গাভীদের টিকাদান ও চিকিত্সা দেয়াও পরিসেবা কোম্পানির কাজ।
কৃষকদের কাছে কৃষি পণ্যের বিক্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু গিতো এ ব্যাপর নিয়ে চিন্তা করে না। কারণ তিনি হোল্যান্ডের দু'টি বৃহত্তম দূধ সহযোগিতা সংস্থার মধ্যে একটি-কেনফিনা সংস্থাতে যোগ দিয়েছেন। দূধ পণ্য সব সহযোগিতা সংস্থাকে দিয়ে তারা প্রক্রিয়া করে। কেনফিনা সহযোগিতা সংস্থা হলো বর্তমান ইউরোপের বৃহত্তম দূধের সংস্থা। তা সদস্য কৃষকদের জন্য পণ্যের গবেষণা, প্রক্রিয়া ও বাজারে বিক্রি করা সমস্ত পরিসেবা যুগিয়ে দেয়। কেনফিনার মালিক হলেন সকল যোগ দেয়ার কৃষক। তাদের মধ্যে পরিচালক নির্বাচিত হয় তাতে এই সংস্থা পুরোপুরি কৃষকদের জন্য কল্যাণকর হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ার কারণে অধিকতর কৃষক অন্য কাজে চলেছে। কিন্তু গিতো কৃষি কাজ পছন্দ করেন। তিনি আরেকটি ফার্ম কিনেছেন। তিনি বলেছেন, আমি গাভী পছন্দ করি, গ্রামাঞ্চলের জীবন পছন্দ করি এবং স্বাধীভাবে নিজের জীবন পরিচালনা করতে পছন্দ করি। ঘাস, শান্ত গ্রামাঞ্চল এবং সুশৃঙ্ল কাজ গিতোর স্বপ্ন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আপনার?
|