এ বছরের এপ্রিল মাসে যখন চীনের বেশ কয়েকটি এলাকায় বসন্তকালের আগমন হয়েছে , তখনও পশ্চিম চীনের ছিং হাই প্রদেশের হাইপই তিব্বতী জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের কাং ছা জেলার তৃণভূমিতে স্তুপকৃত তুষার রয়ে গেছে । কিছু দিন যাবত ২০ বছর বয়সী মিয়াও চি রুন সেই জেলার প্রতিবন্ধী নমুনাওয়ারী জরীপ দলের সদস্যা হিসেবে প্রতিদিন মোটর সাইকেলে করে পরিবারে পরিবারে গিয়ে তৃণভূমিতে বিক্ষিপ্তভাবে বসবাসকারী পশু পালকদের মধ্যে তদন্ত চালিয়েছেন ।
প্রত্যেকটি পশু পালকের বাড়িতে মিয়াও চি রুন ও তার সহকর্মীরা মনোযোগের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা , তাদের আয় ও তাদের শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে সেগুলো লিখে নেন ।
মিয়াও চি রুন ও তার সহকারীদের চালানো জরীপের কাজ হচ্ছে চীনে চালানো প্রতিবন্ধীদের ওপর দ্বিতীয় নমুনাওয়ারী জরীপের অংশবিশেষ । গত ১ এপ্রিল থেকে চীনে প্রায় ২৬ লাখ লোকের মধ্যে পরিবারভিত্তিক জরীপ চালানো হয়েছে । এই হার চীনের মোট লোকসংখ্যার ২ হাজারাংশ । সারা দেশের ৩১টি প্রদেশ , কেন্দ্রশাসিত মহানগর ও স্বায়ত্তশাসিত শহরের বিভিন্ন স্তর থেকে বাছাই করা লোকদের মধ্যে এই জরীপের কাজ চালোনো হয়েছে ।
১৯ বছর আগে চীনের প্রথম প্রতিবন্ধীদের নমুনাওয়ারী জরীপ চালানো হয় । আর্থ- সামাজিক বিকাশ এবং চিকিত্সার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনের প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা, আঞ্চলিক বিন্যাস , তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও কর্মসংস্থানের নানা ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে । চীনের দ্বিতীয় প্রতিবন্ধীদের নমুনাওয়ারী জরীপ সংক্রান্ত অফিসের উপপরিচালক ছেন সিন মিন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
প্রথম প্রতিবন্ধীদের নমুনাওয়ারী জরীপের পরিসংখ্যান ও তথ্যে পরিবর্তনশীল বাস্তব অবস্থার আর প্রতিফলন হয় না । এটা প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা ও নীতির প্রণয়ন , কার্যকরীকরণ ও মূল্যায়নের পক্ষে হিতকর নয় এবং বাস্তব কাজকর্মকে অসুবিধাজনক করে তুলেছে ।
আমাদের সংবাদদাতা চীনা প্রতিবন্ধী ফেডারেশনের একটি পর্যবেক্ষক গ্রুপের সঙ্গে ছিং হাই প্রদেশের কাং ছা জেলায় গিয়েছেন । তিনি জানতে পেয়েছেন , কাং ছা জেলায় ৪টি মহকুমায় ও ৪টি গ্রামে নমুনাওয়ারী জরীপ চালানো হয়েছে । এই জেলার আয়তন বিশাল এবং লোকসংখ্যা নগণ্য । এক পরিবার থেকে অন্য পরিবারের সর্বচ্চো দূরত্ব ৫ কিলোমিটারেরও বেশি । কোনো কোনো এলাকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০০ মিটারেরও বেশি । সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুরুহ । এটা পরিবারভিত্তিক জরীপ কাজের জন্যে দুষ্কর করে তুলেছে । তুণভূমিতে স্তুপীকৃত তুষার গলে যাচ্ছে বলে জরীপ কর্মীরা পিচ্ছিল পথে চলতে গিয়ে একটু অসাবধান হলেই আছাড় খান ।
তবে এসব দুরবস্থা জরীপ কর্মীদের নিখুঁত কাজের ওপর কোনো প্রতিকূল প্রভাব ফেলে নি । মিয়াও চি রুন বলেছেন , জরীপের ফলাফল চীনের জাতীয় অবস্থার একটি অংশ । এই জরীপ লাখ লাখ প্রতিবন্ধীর জীবনের সঙ্গে জড়িত আছে । তাই লেশমাত্র শিথিল হওয়া উচিত নয় । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আমি এই প্রথম গ্রামে এসেছি । সব কাজে আমি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি । প্রতিবন্ধীদের সেবা করার সুযোগ পাওয়া সত্যিই একটি ভালো ব্যাপার ।
পশুপালক ইয়েসিন আংচিয়ের বাড়িতে আমাদের সংবাদদাতা জানতে পেয়েছেন , তিনি ও তার স্ত্রী দুজনেরই হাত পা পঙ্গু । তাদের একটি ছেলে কথা বলার ব্যাপারে বাধাগ্রস্ত । এই অবস্থা দেখে জরীপ কর্মী মিয়াও চি রুন পরের দিন মহকুমানগরের প্রতিবন্ধী সনাক্ত চিকিত্সা কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন ।
সেই জেলার শা লিউ হো নগরের প্রতিবন্ধী সনাক্ত চিকিত্সা কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য ছিল । এই কেন্দ্রের দায়িত্বশীল সদস্য ওয়াং হু আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তাদের কেন্দ্রে মোট ৮জন কর্মী রয়েছেন । তিনি বাদে বাকী ৭জনকেই জেলা ও মহকুমা পর্যায়ের চিকিত্সালয় ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বাছাই করা হয় । তারা আলাদা আলাদাভাবে চক্ষু, শ্রবণ শক্তি , ভাষা , অংগপ্রত্যংগ , মেধা ও মানসিকতা বিভাগে কাজ করেন । চীনা প্রতিবন্ধী ফেডারেশন এই কেন্দ্রের জন্যে ২০ হাজার ইউয়ান মূল্যের চিকিত্সা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ।
মিস্টার ওয়াং বলেন , গত কয়েক দিন রোজ ডজন খানেক পশুপালক এখানে পরীক্ষা করাতে আসেন । কোনো কোনো লোক এখানে পরীক্ষা করাতে অনিচ্ছুক হলে জরীপ কর্মীরা খারাপ আবহাওয়া ও দুরূহ যোগাযোগ ব্যবস্থার পরোয়া না করে তাদের বাড়িতে গিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে বুঝিয়ে বলেন । যাদের চলাফেরার অসুবিধা রয়েছে, চিকিত্সা কর্মীরা চিকিত্সা সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের জন্যে পরীক্ষা করেন । মিস্টার ওয়াং বলেন ,
যারা আমাদের কেন্দ্রে আসতে পারবেন না , তারা যত দূরে থাকুন না কেন , আমরা মোটর সাইকেলে করে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরীক্ষা করি । কোনো কোনো জায়গায় মোটর সাইকেলে করে যাওয়া যায় না । তাহলে আমরা হেটে হেটে যাই ।
গত মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চীনের দ্বিতীয় প্রতিবন্ধীদের নমুনাওয়ারী জরীপের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ।
চীনের বিভিন্ন স্থানের প্রতিবন্ধীরা এই জরীপের কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন । ৬৩ বছর বয়সের লাই চিং ছিয়াং পেইচিংয়ে বসবাসকারী একজন প্রতিবন্ধী । তিনি আবেগের সঙ্গে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
আমাদের প্রতিবন্ধীদের জীবনাবস্থা জানার জন্যে সরকার এই জরীপ কাজ চালাচ্ছে । এই জরীপ আমাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পক্ষে সহায়তা করবে । আমাদের জীবন নিশ্চয় আরো উন্নত হবে ।
চীনের দ্বিতীয় প্রতিবন্ধীদের নমুনাওয়ারী জরীপ সংক্রান্ত অফিসের উপপরিচালক ছেন সিন মিন বলেছেন ,
আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করেছি । তারা চীনের প্রতিবন্ধীদের মান নির্ধারণের উচ্চতর মূল্যায়ন করেছেন । তারা মনে করেন , এটা যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মবিধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, তেমনি চীনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
মিস্টার ছেন বলেন , এবারের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সরকারের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে কল্যাণকর হবে ।
|