সম্প্রতি বোআও এশিয়া ফোরাম ২০০৬ সালের বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা এই মত প্রকাশ করেছেন যে, স্বকীয় উদ্ভাবন চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং ফলে দেশ-বিদেশের বাজারে এই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা ক্রমাগতই বাড়ছে।
চীনের ১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিশ্বের সবচেয়ে বলিষ্ঠ ৫০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই ১৮টির মধ্যে ১৫টিই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চীনের সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বকীয় উদ্ভাবনের জন্য উত্সাহ দেয়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি তত্ত্বাবধান কমিশনের ভাইসচেয়ারম্যান ওয়াং রুইসিয়াং বলেছেন, "শিল্পপ্রতিষ্ঠান হলো স্বকীয় উদ্ভাবনের ইঞ্জিন এবং প্রধান শক্তি। উদ্ভাবনকারী রাষ্ট্র গড়ে তোলার চাবিকাঠি হলো স্বকীয় উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা জোরদার করা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যার মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং তাতে বাজার নীতি অনুসৃত হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহত্ শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেশের মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য ও দায়িত্ব বহন করে।"
ওয়াং রুইসিয়াং বলেছেন, বহু বছরের প্রচেষ্টার ফলে অনেক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাফল্য পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহত্ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যত সব পেটেণ্টের জন্য আবেদন করেছে তার সংখ্যা বছরে ২৮ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে। একমাত্র ২০০৫ সালেই পেটেণ্ট আবেদনের সংখ্যা ছিল দশ হাজারেরও বেশি। এর সঙ্গে সঙ্গে এই সব বৃহত্ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনের সামর্থ্যও লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।
চীনের 'সি ও এস সি ও' গোষ্ঠীর প্রেসিডেণ্ট ওয়েই চিয়াফু বোআও এশিয়া ফোরামের ২০০৬ সালের বার্ষিক সম্মেলনে বলেছেন, " আমাদের গোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য আমরা সর্বপ্রথমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কাঠামোর সংস্কার শুরু করি, বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলেছি। যেমন এই রাষ্ট্রায়ত্ত গোষ্ঠীর এককভাবে নিয়ন্ত্রিত শেয়ার ব্যবস্থার ভিত্তিতে তার অধীনস্থ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের ভিন্ন ভিন্ন মালিকানার ব্যবস্থা থাকতে দেয়া।"
'সি ও এস সি ও' প্রতিষ্ঠিত হবার সময়ে শুধু চারটি জাহাজ সম্পন্ন একটি নৌপরিবহন কোম্পানি ছিল। এখন এই কোম্পানির আছে ছ' শোরও বেশি আধুনিক মালবাহী জাহাজ, এগুলোর মোট পরিবহন ক্ষমতা সাড়ে ৩ কোটি টন, বছরে মাল পরিবহনের মোট পরিমাণ ৩০ কোটি টন। এটি এক বহুমুখী এবং বহুজাতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এই গোষ্ঠী চীনের কুয়াংচৌ, সাংহাই, থিয়েচিন, ছিংতাও , তালিয়েন, সিয়ামেন, হংকং প্রভৃতি স্থানে কণ্টেইনার, খুচরা মাল, বিশেষ মাল এবং তেল পরিবহনের
ব্যবসা পরিচালনা করছে। তার পরিবহনের ব্যবসা ইতিমধ্যেই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিংগাপুর, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি অঞ্চল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। 'সি ও এস সি ও'-এর প্রতীক সম্পন্ন জাহাজ এবং কণ্টেইনার বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ১৩০০টিরও বেশি বন্দরের মধ্যে চলাচল করছে।
'সি ও এস সি ও' গোষ্ঠীর সফলতার অভিজ্ঞতা প্রসংগে ওয়েই চিয়াফু জানিয়েছেন, স্বকীয় উদ্ভাবন হলো 'সি ও এস সি ও' গোষ্ঠীর দ্রুত উন্নয়নের চালিকা শক্তি। এই গোষ্ঠী বিদেশ থেকে উন্নত ধরনের প্রযুক্তি আমদানী করে তার ভিত্তিতে আবার নিজের উদ্যোগে উন্নততর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। এই গোষ্ঠীর একটি একীভূত আধুনিক এণ্টারপ্রাইজ পরিচালনা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, ব্যবস্থাপনার মান উন্নততর করা হয়েছে। ওয়েই চিয়াফু বলেছেন, "এণ্টারপ্রাইজ বড় এবং উন্নততর হবার জন্য শুধু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয় তা নয়, বরং উত্পাদনের ফলপ্রসূতা বাড়াতে হবে, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার নতুন ধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, এণ্টারপ্রাইজের প্রাণশক্তি বাড়াতে হবে, যাতে এণ্টারপ্রাইজের বাজার প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বাড়ানো যায়।"
১৯৯৮ সালে 'সি ও এস সি ও' গোষ্ঠীর বার্ষিক মুনাফা ছিল শুধু ছয় কোটি মার্কিন ডলার । তা বাড়তে বাড়তে ২০০৫ সালে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাত্ প্রায় ৪০ গুণ বেড়েছে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বকীয় উদ্ভাবনের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাও ক্রমাগতই বাড়ছে। ২০০৫ সালে বিশ্বের শক্তিসম্পদ ক্ষেত্রে ২৫০টি বলিষ্ঠতম কোম্পানির মধ্যে চীনের তেল ও গ্যাস গোষ্ঠী সপ্তম স্থান অধিকার করেছে।
বহুজাতিক ডেগুসা কোম্পানির প্রেসিডেণ্ট ফোরবেস বলেছেন, " চীনের মতো দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো একটি বিরাট সম্পদ। এই সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের কোম্পানি সাংহাইয়ে একটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এই কেণ্দ্রের সাহায্যে চীনের মাঝারি বা ছোট রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজেদের নতুন দ্রব্য গবেষণা ও উন্নয়ন করতে পারবে।"
ফোরবেস মনে করেন, চীনের বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজের গবেষণা সংস্থা স্থাপনের সামর্থ্য ও প্রযুক্তি নেই বলে তারা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাতে পারে অথবা তাদের আমন্ত্রণে অধ্যাপকরা কোম্পানিতে এসে নতুন দ্রব্য গবেষণা ও উন্নয়নে সাহায্য করতে পারেন।
এ বছরের বোয়াও এশিয়া ফোরামের অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচিত তার উন্নয়নের নতুন ধাঁচ সৃষ্টি করা, উন্নয়নের গুণগত মান উন্নততর করা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থনীতির প্রভাব অবিরামভাবে জোরদার করা। সেজন্য সবচেয়ে বড় কথা হলো নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার স্বকীয় উদ্ভাবনের ব্যবস্থা জোরদার করা।
|