পানি হলো মানুষের শরীরের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীরে যদি ১৫শতাংশ পানি হারিয়ে যায় তাহলে খুব বিপদ। প্রতিদিন পানি খাওয়া আমাদের কাছে খুব সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু কবে খাওয়া ভাল এবং কত বার খাওয়া ভাল এ সম্বন্ধে সম্ভবত সবাই জানেন না। গবেষণা অনুযায়ী নিয়মিত এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
প্রথমে আপনাদের একজন পানি-প্রিয় লোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। তিনি হলেন দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছুং ছিং শহরের ইয়ু কুয়ান সিং নামক একজন যুবক। তিনি এক দিনের মধ্যে ২৫ লিটার পানি খেতে পারেন। কেন তিনি এত বেশী পানি খেয়ে থাকেন? তা একটি দুর্ঘটনাস সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ইয়ু কুয়ান সিং একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তখন থেকে তার এই অস্বাভাবিক অভ্যাস গড়ে ওধে। তিনি বলেছেন:
"এতো বেশী পানি খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে। তা সত্বেও আরো বেশী খেতে চাই। কেবল পানি খেয়েছি, তারপরও আবার পিপাসা লাগে। আমার ক্ষিধে লাগে, কিন্তু শুধু পানি খেয়ে থাকি আর কিছু খাবার খেতে পারি না।"
এমন অবস্থায় চার মাসের মধ্যে তার ওজন ১০ কে.জি কমেছে। তিনি হাস্পাতালে গিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। ডাক্তার লি ছি ফু তার পরীক্ষা করে বলেছেন:
"কিডনি শরীরে একটি জলবাধের মতো পানি হারানো রোধ করে থাকে। মাথায় এক রকম পদার্থ তা নিয়ন্ত্রণ করে। মিস্টার ইয়ু ডায়াবেটিস ইন্সিপিনডাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মানে তার কিডনির কার্যক্ষমতা হারিয়ে আর পানি রক্ষা করতে পারে না। তাতে মানুষের পিপাসা লাগে এবং প্রচুর পানি খাওয়ার ইচ্ছা জাগে।"
ইয়ু কুয়ান সিং যে পানি খেয়েছেন তা শরীর শুষে নেয়নি, অধিকাংশ পানি প্রস্রাব আকারে বের হয়ে গেছে। তাই সব সময়ে তার পিপাসা লাগে। তাতে আমরা বুঝেছি অনুপযোগীভাবে পানি খেয়ে স্বাস্থ্যের কি রকম ক্ষতি হয়। তাহলে প্রতিদিন কি পরিমান পানি খেলে ভাল? গবেষণা অনুযায়ী প্রতিদিন পান করা পানির পরিমান শরীর থেকে নির্গত পানির পরিমানের সমান হওয়া উচিত। আমারা নাস্তা খাওয়া ছাড়া ১ থেকে ২ হাজার মিলিলিটার পানি খাওয়া উচিত, অর্থাত ৬ থেকে ৮ গ্রাস পানি। কিন্তু গ্রীষ্মকালে, শরীর চর্চার পর ও বেশী ক্ষণ রোদে থাকার পর আরো বেশী পানি খাওয়া উচিত।
কবে পানি খাওয়া ভাল? কেউ বলেছে পিপাসার্ত লাগলে খাওয়া ভাল। কিন্তু এই ধারণা আসলে ভুল। ছুং ছিং মেডিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি ছি ফু বলেছেন:
"পিপাসার্ত লাগার পর পানি খেলে দেরি হয়ে যাবে। পিপাসার্ত লাগা মানে স্নায়ু ব্যবস্থা সতর্কবার্তা পেয়েছে, অর্থাত দেরি হয়েছে। তাই আগেই পানি খাওয়া ভাল।"
পিপাসা হলো শরীরের পানি হারানোর একটি সতর্কবার্তা। এই সতর্ক সংকেত পাওয়ার সময় আমাদের শরীর জলশূন্য হয়েছে। প্রতিদিন বহু বার পানি খাওয়া এবং প্রতিবার অল্প পরিমান পানি খাওয়া ভাল। এখন আমি আপনাদের পানি খাওয়ার সময়সূচি দেব। এটি অনুসরণ করলে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হবে।
ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠার পর এক কাপ পানি খান। সকালে দশটায় এক গ্রাস খান। দুপুরের খাবারের পর আরেক গ্রাস খান। বিকেলে তিনটায় এক গ্রাস। রাতের নাস্তার আগে এবং ঘুমের আগে আরেক গ্রাস। কেন? কারণ এক রাত ঘুমের পর পানি খেয়ে ঘন রক্তকে পাতলা করতে পারে। তাতে রক্তের রিসাইকেলের জন্য ভাল। ১০টর পানি খেলে কাজ করার টেনশন কমাতে পারে। দুপুরে নাস্তার পর পানি খেলে খাবার হজমের জন্য সহায়ক। রাতে নাস্তার আগে পানি খেয়ে খাবার কম খাবেন। ঘুমের আগে পানি খেয়ে থ্রোমবাস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, তা বৃদ্ধ-বৃদ্ধার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া, শরীর চর্চার পর পানি খাওয়ার বিজ্ঞানও আছে। অধ্যাপক চৌ ফু পো বলেছেন:
"শরীর চর্চার সময় শরীরে বিপুল পরিমানে ঘাম হয়। তাই চর্চা শুরুর আগে কিছু পানি খাওয়া উচিত। চর্চার পর একবার বেশী পানি খাওয়া ভাল নয়।"
শরীর চর্চার পর পানি খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি হলো, প্রথমে অল্প পানি খেয়ে গড়গড়া করে তারপর কিছু পানি খাওয়া। একটু পরে আবার কিছু খাওয়া। যদি কিছু লবন পানিতে দেয় হয় তাহলে আরো ভাল।
|