v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-09 19:33:48    
মা যেন এক প্রদীপ

cri
    চীনের সেনচেন শহরে এক পরিবারে মা তিন চিয়েনফিন এবং ছেলে ইয়াও সিয়াওমিং দুজনই ডাক্তার । গত দশ-বারো বছরে ছেলে যে কাজ সবচেয়ে বেশী করেছেন তাহল সেনেচেনের হাসপাতালগুলোতে গিয়ে সেখানকার গুরুতর অবস্থার রোগীদের নিজেদের চোখের কর্নিয়া চক্ষুরোগীদের দিতে পরামর্শ দেয়া । চীনের ঐতিহ্যিক ধারণা অনুযায়ী মানুষ মরে গেলে তার মৃতদেহকে অক্ষতভাবে সত্কার করতে হবে । ছেলের এই আচরণ চীনের ঐতিহ্যিক রীতিনীতির প্রতি চ্যালেন্জ করেছে । কিন্তু মা ছেলের আচরণকে খুব পছন্দ করেন এবং গোপনে গোপনে তাকে সমর্থন দিতেন । মা অসুস্থ হয়ে মারা যান । মারা যাওযার আগে তিনি ছেলের জন্যে সবাইকে মুগ্ধ করার এক উইল রেখেছেন ।উইলটিতে মা ছেলেকে তার চোখের কর্নিয়া প্রয়োজনীয় চক্ষুরোগীদের প্রতিস্থাপন করতে বলেছেন । মার উইলের প্রতি ছেলে কি করবেন ?

    গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সেনচেন চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত ইয়াও সিয়াওমিং সবদাই চোখের কর্নিয়ার অভাবের কারণে চিন্তিত হতেন । তখন থেকে তিনি এক অত্যন্ত কঠিন কাজ শুরু করেছেন ,অর্থাত অত্যন্ত গুরুতর অবস্থার রোগীদের তাদের কর্নিয়া চক্ষুরোগীদের দান করতে পরামর্শ দেন । ১৯৯৯ সালের ১৩ জুন চীনের হুনান প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সিয়াং ছুনমেই প্রথমই নিজের চোখের কর্নিয়া দান করেছেন । ঘটনাটি প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তুলেছে এবং ডাক্তার ইয়াও সিয়াওমিংকে অনুপ্রাণিত করেছে । ইয়াও সিয়াওমিং এক চক্ষু ব্যাংক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ২০০০সালের জুন মাসের একদিন ইয়াও সিয়াওমিং হঠাত নিজের জন্মস্থানের এক বুড়োর টেলিফোন পান । টেলিফোনে বুড়ো মানুষটি তাকে জানান যে,গুরুতর রোগে অসুস্থ তার স্ত্রীর আর বেশী সময় নেই বলে তিনি তার কর্নিয়া সংগ্রহ করতে তাকে অনুরোধ জানান । এই বৃদ্ধার কর্নিয়া সংগ্রহের পর ইয়াও সিয়াওমিং জেনেছেন,জীবিতকালে তিনি তার মা তিন চিয়েনফিনের বন্ধু ছিলেন । তিন চিয়েনফিনের পরামর্শ শুনেই তিনি নিজের কর্নিয়া দান করলেন ।

    ইয়াও সিয়াওমিংয়ের মা তিন চিয়েনফিন সেনচেনের এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্লিনিকে কাজ করেন । স্বামী ১৯৮০ সালে মারা যান । অবসর নেয়ার পর তিনি ইউনিটের অনুরোধে অব্যাহতভাবে ক্লিনিকে ডাক্তারির কাজ করতে থাকেন । নিজের ছেলে চক্ষু ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করবে কথাটা জেনে তিনি মাঝেমধ্যে গুরুতররোগীদের নিজের চক্ষু দান করতে পরামর্শ করতেন । সেই সময় কর্নিয়া দান এমন এক বিষয় ছিল তা নিয়ে ভীষণ তর্কবিতর্ক হয়েছিল । সেনচেন টেলিভিশন কেন্দ্র বিষয়টিকে এক আলোচ্যবিষয় হিসেবে দর্শকদের সঙ্গে আলোচনা করতে ইয়াও সিয়াওমিংকে আমন্ত্রন করে । ইয়াও সিয়াওমিং ভাবতে পারেননি যে,দর্শক আসনে তার মা-ও বসে আছেন । তিনি প্রথমবারের মতো দর্শকদের সামনে মায়ের ঘোষণা শুনলেন । মা ঘোষণা করেন যে,আমি মরে যাওয়ার পর নিজের কর্নিয়া দান করব । যাতে প্রযোজনীয় লোকেরা পুনরায় পৃথিবীর আলো দেখতে পাবেন ।

    ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে সনাক্ত হয়েছে ,তিন চিয়েনফিনের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হয়েছে এবং ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে । অপারেশনের আগের দিন রাতে ইয়াও সিয়াওমিংয়ের ছোটো ভাই মায়ের গোপন উপলব্ধি করেছেন যে,মায়ের বালিশের নিচে একটি কাগজ লুকিয়ে আছে । কাগজে লেখাছিল,"আমি মৌখিকভাবে কথা দিয়েছিলাম, মরে যাওয়ার পর আমি কর্নিয়া অন্ধ লোকদের দান করব , যাতে তারা পুনরায় দেখতে পারেন এবং আমার ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয় ।

    অপারেশন ও বহুবার থেরাপি নেয়ার পরও তিন চিয়েনফিনের অবস্থা দিনদিন অবনতি হয়েছে । ২০০৫ সালের ২৬ আগস্ট তিন চিয়েনফিনের অনুরোধক্রমে সেনচেন রেডক্রস সোসাইটি তার সঙ্গে কর্নিয়া দানের চুক্তি স্বাক্ষর করে । চুক্তি স্বাক্ষরের পর মা ইয়াও সিয়াওমিংকে এক বিশেষ প্রশ্ন করলেন যে,কেন মানুষ মরে যাওয়ার পর কেবল কর্নিয়া তোলার চাইতে চক্ষুর তারা তোলা বেশি সহায়ক হবে ?ইয়াও সিয়াওমিং মাকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে,যদি কর্নিয়া সরানোর পরিবেশ খারাপ এবং জীবাণুবিহীন অপারেশনের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তাহলে কর্নিয়া সহজে দূষিত হতে পারে এবং যদি রোগীদের চোখে প্রতিস্থাপন করে তাহলে রোগীদের চক্ষুর ভিতরে রোগের পরিবর্তন হবে । কিন্তু একজনের চক্ষু-তারা দশ-বারো জন চক্ষুরোগীকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারে । ছেলের ব্যাখ্যা শুনে বুড়িমা তিন চিয়েনফিন চূড়ান্ত শিদ্ধান্ত নিলেন যে , তার মৃত্যুর পর তিনি ছেলেকে তার দুটো কনিয়া নয় দুটো চক্ষু-তারা তুলতে অনুমোদন দেন ।

    চীনের ঐতিহ্য অনুযায়ী ডাক্তাররা নিজনিজ পরিবারপরিজনদের চিকিত্সা করেন না ,নিজের মার চোখ তোলাতো দূরের কথা । ইয়াও সিয়াওমিং তার সহকর্মী ইয়ান ফোংপোকে নিজের মার শেষ ইচ্ছা অর্থাত মার চোখ তুলতে অনুরোধ করা এবং স্বয়ং নিজেই মার কর্নিয়া চক্ষুরোগীদের প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    মা-র জীবনের শেষ পর্বে ইয়াও সিয়াওমিনং তিনবার"আলো কার্যক্র"তত্পরতায় অংশ নিয়েছিলেন । এই সময়পবে তিনি বেশকয়েকবার আশ্চর্যসৃষ্টি করেছিলেন। যেমন তিনি মাত্র ২ মিনিট ৪ সেকেন্ডে এক চোখের ছানি অপারেশন করেছিলেন,তিনি একটানা ১৭ঘন্টায় ৮৮জনের চোখের অপারেশন করেছিলেন এবং এই সব অপারেশন সবই সাফল্যমন্ডিত হয়েছে । তাছাড়া তিনি একজনের কর্নিয়া দিয়ে ৮জন চক্ষুরোগীকে উপকার দেয়ার অভ্যন্তরীন রেকর্ড সৃষ্টিও করেছিলেন ।

    ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ইয়াও সিয়াওমিং আরেকবার কানসু প্রদেশে গিয়ে "আলো কার্যক্রম"তত্পরতায় অংশ নিলেন । ১৫সেপ্টেম্বর তিনি সেনচেনে প্রত্যাবর্তন করেন । দ্বিতীয় দিন রাতে মার অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর হওয়ায় তিনি মাকে হাসপাতালে পাঠান । ১৭সেপ্টেম্বর মা তিন চিয়েনফিন চিরকালের জন্য ইহলোক ত্যাগ করেন । ইয়াও সিয়াওমিংয়ের অনুরোধে ইয়ান ফোংপো তার মা তিন চিয়েনফিনের দুটি চোখের তারা সরালেন । পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে ইয়াও সিয়াওমিং মার কর্নিয়া দশ-বারোজন চক্ষুরোগীর চোখে প্রতিস্থাপন করলেন । মা যেন এক প্রদীপ অন্য লোকের জন্যে আলো সৃষ্টি করেছেন ।