শ্রোতাবন্ধুরাঃ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছিং হাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত বহু পর্বতশৃঙ্গ সারা বছর বরফে আবৃত থাকে । সুতরাং চীনারা সাধারণতঃ তাকে তুষার মালভূমি বলে অভিহিত করেন । ঈগল- শাবকের মতো উচ্চ তুষার পর্বতশৃঙ্গের ওপর থেকে নীল আকাশে স্বাচ্ছন্দ্যে উড়ে যাওয়া বরাবরই তিব্বতী তরুণ-তরুণীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা । এখন কয়েকজন তিব্বতী যুবকের এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল ইতিহাসে তারা প্রথম দফা তিব্বতী বৈমানিক হয়েছেন । আজ এই অনুষ্ঠানে কয়েকজন তিব্বতী অল্পবয়সী বৈমানিকের গল্প সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
৫ বছর আগে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি থেকে আগত ৫জন তিব্বতী তরুণ ভবিষ্যতের সুন্দর বাসনা পোষণ করে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু শহরে যান । তারা সাফল্যের সংগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এই শহরে অবস্থিত চায়না এয়ার লাইন্সের দক্ষিণ-পশ্চিম শাখায় ভর্তি হন । তখন থেকে তারা বৈমানিক হওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালাতেন ।
এখন মালভূমি থেকে আগত এই সব তিব্বতী যুবক কি হয়েছেন ? ছোট বেলা থেকে সৃষ্ট উদার স্বভাব এই সূক্ষ্ণ ও কড়াকড়ি কাজের সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে ? মাখন চা , খাসি ও গরু মাংস খেতে অভ্যস্ত এই সব তরুণ কি সমতল ভূমির জীবনযাপনের সংগে খাপ খাচ্ছেন ? এই সব প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণ করার জন্য সংবাদদাতা তাদের কর্মস্থল- চায়না এয়ার লাইন্সের দক্ষিণ-পশ্চিম কোম্পানিতে গিয়েছিলেন ।
বৈমানিকের পরিপাটি পোশাক পরা ৫জন তিব্বতী যুবক সংবাদদাতার সামনে হাজির হন । তারা শ্যামবর্ণযুক্ত আর দীর্ঘাঙ্গ , চীনের ম্যান্দারিন ভাষা ভাল বলেন । দেখতে হান জাতির বৈমানিকের চেয়ে তাদের কোনো পার্থক্য নেই । কিন্তু মালভূমি থেকে আগত এই সব তরুণের উদার স্বভাব ও চরিত্র সাধারণতঃ তাদের সংগে কথাবার্তায় দেখা যায় ।
তিব্বতী যুবক তাসাং সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
আমি লাসায় জন্ম গ্রহণ করি । ছোট বেলায় আমি অন্যান্য লোকের মতো ঈগলের মতো আকাশে বিমান চালাতে চেয়েছি ।
তিনি বলেছেন , বিমান কোম্পানিতে আসার পর তারা সাড়ে তিন বছর ধরে ছেংতু শহরে চীনের বৈমানিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করেন । বৈমানিক ইনস্টিটিউটে তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিমান চালনা বিষয়ক দশাধিক বিষয় শিখেছেন । তারা বিমান চালনা বিষয়ক কড়াকড়ি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং অবশেষে চীনের রাষ্ট্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যুরোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত নানা রকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন । গত বছর তারা ইচ্ছানুসারে চায়না এয়ার লাইন্সের দক্ষিণ-পশ্চিম শাখার বৈমানিকে পরিণত হয়েছেন । বৈমানিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা প্রসংগে তাসাং বলেছেন ,
যখন আমি বিমান চালনা চর্চা শুরু করি , তখন আমার মন খুব উত্তেজিত হয় । আমার আত্মবিশ্বাস ছিল না । কঠোর প্রচেষ্টা চালাবার মাধ্যমে আমার বেশ উন্নতি হয়েছে ।
যদিও তারা সাফ ল্যের সংগে বৈমানিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে পাস করেছেন , তবু একজন অভিজ্ঞ বৈমানিক হতে এই ৫জন তিব্বতী যুবকের জন্য পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টা চালানো দরকার । চায়না এয়ার লাইন্সের ৪ নং বৈমানিক বিভাগের পরিচালক চাও লিন বলেছেন , যদিও তারা প্রশিক্ষণে অধ্যবসায়ের সংগে চর্চা করেছেন এবং বিরাট অগ্রগতি অর্জন করেছেন , কিন্তু চীনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের চেয়ে তিব্বতের অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত বলে সংস্কৃতি আর পেশাগত জ্ঞানের দিক থেকে এই দফা তিব্বতী বৈমানিকদের বেশ কিছু ব্যবধান রয়েছে ।
এই কয়েকজন তিব্বতী বৈমানিক কিছুটা অসুবিধার শিকার হচ্ছেন । চীনের কেন্দ্রস্থলের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে তারা প্রযুক্তিগত জ্ঞান আর বিদেশী ভাষা শেখার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন । নতুন কর্মসংস্থান আর জীবনধারার সংগে যথাশীঘ্র খাপ খাওয়ায় এই সব বৈমানিককে সাহায্য করার জন্য চায়না এয়ার লাইন্স কোম্পানির বৈমানিক বিভাগ অভিজ্ঞ বৈমানিক শিক্ষাদাতা পাঠিয়েছে । চাও লিন বলেছেন ,
কোম্পানির কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা তিব্বতী জাতির সংস্কৃতি ও আচার ব্যবহারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করি । বাস্তব অনুশীলনে বিমান চালনায় বেশি চর্চা করার জন্য আমরা তাদের আরো বেশি সুযোগ সুবিধা দিয়েছি । তাদের সংগে আরো সুবিধে আদান প্রদান করার জন্য আমরা হান জাতির অল্পবয়সীদের পাঠাই , যাতে তারা যথাশীঘ্রই এখানকার কাজ ও পরিবেশে অভ্যস্ত হন ।
তিব্বতের আরেকজন যুবক সেরিং দরজে সংবাদদাতাকে বলেছেন , শিক্ষাদাতা আর সহকর্মীদের সাহায্যে তারা পাঁচজন আনুষ্ঠানিকভাবে সহকারী বৈমানিকের লাইসেন্স পেয়েছেন । খুশি হওয়ার সংগে সংগে তারাও বুঝতে পেরেছেন , বৈমানিকের কাজ আরো ভালভাবে করার জন্য তাদের আগের চেয়ে আরো কঠোর ও পরিশ্রমী প্রশিক্ষণ ও চর্চায় যোগ দান করতে হবে ।
আগে তিনি শুধু আগ্রহ আর উপভোগের দিক থেকে বৈমানিক হতে চেয়েছি । কিন্তু এখন তারা বিমান চালনাকে একটি ব্রত ও দায়িত্ব বলে মনে করেন । তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল বিমান ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আর ফ্লাইটের যাত্রা সুসম্পন্ন করা ।
সেরিং দরজে বলেছেন , এখন যখন তিনি লাসা ক্রু সদস্যদের সংগে ফ্লাইটের কাজ সম্পন্ন করতে যান , তখন তিনি নিজের জন্মস্থল দেখতে পারেন । এতে তিনি খুব আন্তরিকতা আর গৌরব করেন ।
এখন তার সবচেয়ে বড় বাসনা হচ্ছে ক্রুদের পরিচালক হওয়া । তখন তিনি প্রকৃতভাবে বিমান চালনা করতে পারবেন ।
এই ৫জন তিব্বতী যুবকের গড়পড়তা বয়স শুধু ২৫ বছর । তারা ঈগলের মতো বিমান চালনা করে আকাশে উড়েন । তারা আরো সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে , যেহেতু তিব্বতী যুবকদের সুস্বাস্থ্যের প্রাধান্য আছে , সেহেতু ভবিষ্যতে চীনের রাষ্ট্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কোম্পানি তাদের কাছ থেকে আরো বেশি বৈমানিক বাছাই করবে ।
|