v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-08 21:00:54    
মসলিন সংস্কৃতি ভ্রমণ

cri
    হাজারাধিক বছর আগে চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচলন হয়।বতর্মানে চীনে দশ বারোটি সংখ্যালঘু জাতি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। ইসলাম ধমার্বলম্বীদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। চীনের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ইসলাম ধর্মের পুরাকীর্তি সংরক্ষিত রয়েছে। যদি আপনি একজন ুমসলমান এবং চীনের ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতির উপর কৌতূহল থাকে , তাহলে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি পযর্টন লাইনে যোগ দিন। এই পযর্টন লাইন হল " মসলিন সংস্কৃতি ভ্রমণ"।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের আন্তর্জাতিক পযর্টন সংস্থা সবর্দাই ' মসলিন সংস্কৃতি ভ্রমণ' লাইন চালু করে এসেছে। এই ভ্রমণ লাইনে প্রধানত: পেইচিং, চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশের প্রাচীন নগর সিআন এবং নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ইনছুয়ান অন্তভুর্ক্ত।

    চীনের রাজধানী পেইচিং বলতে গেলে আপনাদের মনে হয়তো সঙ্গে সঙ্গে পড়বে বিখ্যাত রাজকীয় প্রাসাদ, মহা প্রাচীর ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনারা হয়তো জানেন না যে, পেইচিংয়ে একটি মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা আছে। এই বসতি এলাকার নাম ' নিউজিয়ে' ।

    কিংবদন্তীতে বলা হয়, নিউজিয়ের পূর্ব নাম ছিল 'লিওজিয়ে' । ইতিহাসে শিংচিয়াংর ইলি এলাকার অধ্যুষিত মসলমান এখানে বসবাস করতে আসেন। তারা খেজুর আর দাড়িম গাছ লাগাতে পছন্দ করতেন।সুতরাং এই রাস্তা ' লিওজিয়ে ' অথবা 'দাড়িম সড়ক' ডাকে। চীনা ভায়ায় 'লিও' আর ' নিউ' এ দুটো শব্দের উচ্চারণ প্রায় একই। লোকেরা লিও শব্দ বলতে বলতে নিউ হয়ে গেছে।

    বতর্মানে প্রায় দশ হাজার হুই মুসলমান নিউজিয়েতে বসবাস করে। চীনের হুই জাতি সবুজ রং পছন্দ করে। নিউজিয়েতে হাঁটাহাঁটি করলে যেখানে সেখানে সবুজ রংয়ের সাইবোর্ড দেখা যায়।

    অবশ্যই নিউজিয়েতে সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিস হল এখানকার প্রাচীন মসজিদ। নিউজিয়ের এই প্রাচীন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয় ৯৯৬ খৃষ্টাব্দে ।এটা হচ্ছে যেমন বমর্তানে পেইচিংএর দীর্ঘতম আর সবচেয়ে বড় আকারের মসজিদ তেমনি বিশ্বের বিখ্যাত মসজিদগুলোর অন্যতম। গোটা মসজিদের আয়তন ছ'হাজার বগর্মিটার।

    নিউজিয়ের এই প্রাচীন মসজিদ এখানে বংশপরস্পরায় বসবাসরত ুমসলমানদের গর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিষ্টার মা লি সিং যিনি এই সড়কে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করেছেন তিনি বললেন,

    নিউজিয়ের মসজিদ চীনের ইসলামি পুরাকীর্তি ভান্ডারগুলোর অন্যতম। মসজিদের ভিতরে আছে শতাধিক বছর আগে সুদুর আরব দেশগুলো থেকে ইসলামী জ্ঞান প্রচার করতে ধর্মীয় ধর্মীয় নেতাদের সমাধি। সমাধির পাথর ফলক আরবী ভাষায় খচিত । তা ছাড়া এই মসজিদের ভিতরে ১৬৯৪ সালে অথার্ত ছিং রাজবংশের রাজা খ্যানসির অভিলেখন খচিত একটি ফলক এবং ৩ শতাধিক বছর আগের করানের হস্তলিপিও সংরক্ষিত আছে।

    পেইচিংএর নিউজিয়ে পরিদর্শনের পর এবার প্রাচীন নগর সিআন সম্বন্ধেআপনাদের কিছু শোনাবো। পেইচিং থেকে সিআন যেতে গাড়ীতে এক রাত লাগে।সিআনে অনেক বিশ্ববিখ্যাত দর্শনীয়স্থান আছে। এখানে সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তির যাদুঘর বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। চীনে ভ্রমণ করতে আসা প্রত্যেক বিদেশী পযর্টক সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তির যাদুঘর দেখতে পছন্দ করেন। পেইচিংএর মতো সিআনে বিখ্যাত ঐতিহাসিক পুরার্কীতি ছাড়া ুমসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলও আছে। এই অঞ্চলের নাম হল পেইয়াং মেন।

    অন্যান্য জায়গার তুলনায় পেইয়াং মেনের পাথর্ক্য এই যে, এখানে প্রায়ই আগেকার ঐতিহ্যিক কাঠের কাঠামোর দোকানপাট সংরক্ষিত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পেইয়াং মেন হচ্ছে সিআন শহরে ঐতিহাসিক পুরার্কীতির সবচেয়ে অক্ষতভাবে সংরক্ষিত এলাকা।

    সন্ধ্যার পর পেইয়াং মেন সড়কে কেবল লোকের ভীড়।চার দিকে মানুষের হাসির আওয়াজ শোনা যায়। এই ধরনের পরিবেশ সাধারণত পরের দিনের ভোরবেলা পযর্ন্ত অব্যাহত থাকবে। অনেক পযর্টক পেইয়াংমেনে রাতের বেলায় সময় কাটাতে চান। তারা শিল্পকলা কেনার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় খাবার আস্বাদন করেন । পেইয়াংমেনের কথা বলতে গেলে চীনের আন্তর্জাতিক পযর্টন সংস্থার গাইড মিস্টার উ রি ুমসলিম রোস্তোরাঁর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বললেন,

    পেইয়াংমেনের পশ্চিম দিক হচ্ছে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা। ওখানে দেশবিখ্যাত প্রাচীন মসজিদ আছে। অনেক মানুষ পেইয়াংমেন হয়ে এই প্রাচীন মসজিদে যায়। এই সড়কে অনেক রেস্তোঁরা আছে। পেইয়াংমেন পরিদর্শন করতে আসা পযর্টকরা অবশ্যই বিখ্যাত স্থানীয় খাবার 'চিয়াসেনগুয়েচেন বাওস' . 'ফানসেনরেনচিয়াখাওরো আস্বাদন করতে হবে।

    সিআন বণর্না করার পর আমরা এই ভ্রমণ লাইনের শেষ ধাপ---নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ইনছুয়ানে বেড়াতে যাচ্ছি। জানা গেছে, বিদেশে নিংসিয়াকে চীনের মসলিন প্রদেশ বলে গণ্য করা হয়। এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে তিন হাজারাধিক ছোট-বড় মসজিদ আছে। এ সব মসজিদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদ হল ইনছুয়ান শহরের নানগুয়েন মসজিদ। পেইচিং নিউজিয়ের মসজিদের তুলনায় এই মসজিদের ইতিহাস এত দীর্ঘ নয়। কিন্তু গত শতাব্দীর ৫০ দশকে এই মসজিদ সম্প্রসারিত হয়। যার ফলে বতর্মানে এই মসজিদের আয়তন ১৩ হাজার বর্গমিটার। এই মসজিদ দেখতে অত্যন্ত সুমহান। বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকের পর থেকে নানগুয়েন মসজিদ কয়েক বার মেরামত আর সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এখন এই মসজিদ ইনছুয়ানের একটি প্রতীকসম্পন্ন অট্রালিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেইচিং আর সিআনের তুলনায় ইনছুয়ানের পণ্যভোগের মান খুব নীচু। এখানে অল্প খরচে মানুষ অনেক সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন। অবশ্যই ইনছুয়ানে সুস্বাদু খাবার ছাড়া, আরও অনেক উপভোগ করার জিনিস আছে। গাইড সিলি বললেন,

    আসলে হুই জাতি এমন একটি সংখ্যালঘু জাতি যা নাচতে পটু। ইনছুয়ানে পযর্টকরা হুই জাতির আঞ্চলিক গান---হুওয়ায়ে উপভোগ করতে পারেন। হুই জাতি খুব অতিথিপরায়ন। যদি আপনি একটি মুসলমান পরিবারে অতিথি হন তাহলে এই বাসার মালিক সঙ্গে সঙ্গে তার বাসার সবচেয়ে ভাল খাবার আপনাকে পরিবেশন করবেন।