বিশ্ব বিচিত্রা অনুষ্ঠান নিয়ে আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং। আশা করি শ্রোতা বন্ধুদের সবাই ভালো আছেন। গত সপ্তাহে আমি ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চল ব্যবস্থাপনার কিছু তথ্য আপানাদের দিয়েছি। আজকের আসরে আমি দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষি পণ্যের কিছু নতুন নীতি সম্পর্কে আলোচনা করব।
বিশ্বের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষি পণ্য দামের দিক থেকে তার আগেকার সুবিধা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে। বাজারে তার স্থান বজায় রাখার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে আগের নীতি পরিবর্তন করেছে। আগে পরিমানের উপর বেশী মনোযোগ রাখার নীতি পরিবর্তন করে এখন উত্কৃষ্ট গুণগত মানের কৃষি পণ্য উত্পাদনের নীতি অনুসরণ করছে।
আগে দীর্ঘ দিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার কৃষকদের উত্পাদন ও আয় বৃদ্ধির উত্সাহ দিয়ে কৃষি পণ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় স্বাবলম্বন বজায় রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান খাদ্য ভাত। আর ধান চাষ করা হলো দক্ষিণ কোরিয়ার ৭০শতাংশ কৃষকদের প্রধান আয়। তাই দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বরাবরই দেশের চাউল বাজার রক্ষা করার নীতি অনুসরণ করে এসেছে। শুল্ক চুক্তি সংস্থার সদস্য দেশগুলো ১৯৮৬ সাল থেকে কৃষি পণ্য নিয়ে আলোচনা শুরু করার পর, দক্ষিণ কোরিয়ার চাউল বাজার উন্মুক্তকরণের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের দাবি ক্রমেই তীব্র হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার চাউল আমদানির পরিমান আস্তে আস্তে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু দেশী-বাজারে চাউল বিক্রির মোট পরিমান ক্রমাগতই কমে যাচ্ছে, পক্ষান্তরে আমদানি চাউলের পরিমান ক্রমাগত বাড়ছে, তাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষকরা কঠিন অবস্থায় পড়েছেন।
এই অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য ২০০৪ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার একটি ৬ বছরের পরিকল্পনা শুরু করেছে। এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের উত্কৃষ্ট মানের কৃষি পণ্য উত্পাদনকে সমর্থন করে দেশের উত্কৃষ্ট মানের কৃষি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার ৭০ হাজারেরও বেশী কৃষক পরিবার বেছে নিয়েছে, প্রত্যেক পরিবারের জমি ৬ হেক্টরের বেশী। তাদের উত্কৃষ্ট মান ও দূষণমুক্ত ধান চাষ করার উত্সাহ দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চাউলের উত্পাদন পরিমান নির্দিষ্ট মাত্রায় বজায় রেখে উত্কৃষ্ট গুণগত মানের চাউল উত্পাদনের উত্সাহ দিয়েছে। আগেকার নীতি ছিলো শুধু উত্পাদন বাড়ানোর উত্সাহ দেয়া। সরকার এখনচাউলের গুণগতমান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করার নীতি প্রবর্তন করেছে।
এই ধারাবাহিক নতুন নীতির কল্যাণ দক্ষিণ কোরিয়ায় উত্কৃষ্ট ধান পরিমান ক্রমাগত বাড়ছে। তা মোট চাষের অর্ধেক দখল করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাউলের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে সাধারণ চাউলের দাম বরাবরই কমে যাচ্ছে, কিন্তু বাজারে তার দ্বিগুণ দামের উত্কৃষ্ট মানের চাউলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার নির্দিষ্ট শর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুর মাংস আমদানি করতে রাজি হয়েছে। তা অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়ার দেশী গরুর মাংসের দামের ওপর প্রভাব ফেলে। কারণ দেশী গরুর মাংসের দাম যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া উত্পাদিত গো-মাংসের ৩ থেকে ৫ গুণ বেশী। এই প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকার স্বদেশের গরু পালকদের আর্থিক ও নীতিমূলক সাহায্য দিতে শুরু করেছে। তাদের গরু মাংসের গুণগত মান উন্নত করে দেশী গোমাংসের আরো বেশী বিখ্যাত ব্যান্ড স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বর্তমানকালের ২৯টি ব্যান্ডের ভিত্তিতে আরো ৩০টি ব্যান্ড সৃষ্টি করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশের উত্কৃষ্ট মানের গরুর মাংসের অনুপাতকে দেশের গোমাংসের মোট উত্পাদনের ৭০শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য মাত্রা ধার্য করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সরকার তথ্য মাধ্যমের প্রতি উত্কৃষ্ট মানের গরুর মাংসের জন্য বেশী বিজ্ঞাপন করার দাবি জানিয়েছে। যাতে খদ্দেররা এমন মাংস বেশী কিনতে পারেন।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার স্পষ্টভাবে জানে যে, তাদের কৃষি পণ্য বাজার উন্মুক্তকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই হবে। তাই কৃষকদের উত্কৃষ্ট কৃষি পণ্য উত্পাদন করতে উত্সাহ দেয়া ও সমর্থন করা, এবং স্বদেশের উচ্চ মানের কৃষি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা হলো এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রধান উপায়।
|