v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-07 20:07:26    
চীনের চারুকলা গ্যালারী

cri
    পেইচিংয়ের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবনে চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে । চীনের তথা পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের চিত্র প্রদশর্নী এই গ্যালারীতে আয়োজন করা হয় ।

    এই বছর চীনের চারুকলা গ্যালারীতে দেশবিদেশের মোট ১১৫টি চিত্রপ্রদশর্নী ও শিল্পকলা প্রদশর্নী আয়োজিত হবে । বর্তমানে এই গ্যালারীতে চীনের লোকশিল্পকলা প্রদর্শনী, তৈলচিত্র প্রদর্শনী আর আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী আছে । মার্চ মাস থেকে রাশিয়ার শিল্পকলা প্রদশর্নী , ফ্রান্সের স্ফটিক প্রদশর্নী , মেকসিকোর আধুনিক চিত্র প্রদর্শনী আর অষ্ট্রিয়ার আধুনিক স্থাপত্যশিল্প প্রদর্শনী চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারীতে আয়োজিত হচ্ছে । দর্শকদের কাছে এটা এক সুসংবাদ ।

    বর্তমান চীনে নানান ধরনের আধুনিক যাদুঘর ও প্রদর্শনীকক্ষ আছে। কিন্তু চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারী সচরাচরই চীনের শিল্পকলা প্রসারের দিকস্থিতি প্রদর্শন আর বিদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ভূমিকা নিচ্ছে । পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই গ্যালারীর কাছেই বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীন রাজপ্রাসাদ বা নিষিদ্ধ নগরী । রাজপ্রাসাদের পিছনের দেওয়াল অনুসরণ করে পূর্ব দিকে গেলেই দর্শকরা চীনের চারুকলা গ্যালারীর বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্য দেখতে পান । এই গ্যালারী চীনের প্রাচীন স্থাপত্যরীতি অনুসারে তৈরী করা হয়েছে । গ্যালারীর ছাদ হলুদ রংয়ের কাঁচ মোড়ানো টালি দিয়ে আচ্ছাদিত , চার পাশে লম্বা বারান্দা ও পাভিলিয়ন , এগুলোর মাঝখানে প্রচুর বাঁশ ও পাইন গাছ । চীনের ঐতিহ্যিক স্থাপত্যরীতি ও আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন এই চারুকলা গ্যালারী পেইচিং মহানগরের একটি বিখ্যাত স্থাপত্য ।

    চীনের চিত্রশিল্পী ও চিত্রশিল্প অনুরাগীদের পক্ষে চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারী তাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা । অসংখ্য চিত্রশিল্পী চীনের এই জাতীয় পর্যায়ের গ্যালারীতে নিজের একক চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজন করাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করেন । এই গ্যালারীর প্রধান ফান দি আন বলেছেন , আমার মনে হয় পৃথিবীতে সম্ভবতঃ শুধু চীনের চিত্রশিল্পীরা এই একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের গ্যালারীর উপর এতো বেশী মনোযোগ দিচ্ছেন । চীনে চারুকলা শিল্পের দ্রুত প্রসার হচ্ছে । জাতীয় চারুকলা গ্যালারী চিত্রশিল্পের মান যাচাই করা আর শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম বেছে নেয়ার একটি ফ্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে । তাই এই গ্যালারীতে প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলো আধুনিক চীনের চিত্রশিল্পের মানের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে ।

    গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে আজ পর্যন্ত চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারীতে দেশবিদেশের মোট তিন হাজারেরও বেশী চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে । গত শতাব্দীর আশির দশকে রোদিনের চিত্রপ্রদর্শনী এই গ্যালারীতে প্রদর্শিত হয় , এই চিত্রপ্রদর্শনী সমগ্র দেশের চিত্রশিল্পী ও অনুরাগীদের এক মহাসম্মীলনী বলা যায় । দর্শকরাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পেইচিংয়ে আসেন । একমাস স্থায়ী এই প্রদর্শনীতে দর্শকের সংখ্যা দাড়িয়েছিল এক লাখ । ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে এই গ্যালারীতে আয়োজিত ফ্রান্সের ইম্প্রেসনিষ্টিক চিত্রপ্রদর্শনী চিত্রশিল্পীদের পক্ষে একটি চিত্তাকর্ষক প্রদর্শনী । ৩৮ দিন স্থায়ী এই প্রদর্শনীতে দর্শকেরসংখ্যা দাড়িয়েছিল আড়াই লাখ । দর্শকদের চাহিদা মেটানোর জন্য এই প্রদর্শনী সমাপ্ত হওয়ার আগের দিন এই গ্যালারী একটানা ৩৬ ঘন্টা খোলা ছিল ।

    চীনের চারুকলা গ্যালারীর মর্যাদা এই গ্যালারীতে মজুদ চিত্রগুলোর সংখ্যা ও গুনমানের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িত । বর্তমানেএই গ্যালারীতে বিভিন্ন ধরনের ৭০ হাজার চিত্রকর্ম আছে । এগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগই চীনের ঐতিহ্যিক চিত্রশিল্প ক্ষেত্রের প্রভাবশালী চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি । যেমন বিশ্ব সাংস্কৃতিক ইতিহাসে পিকাসোর মতো বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছি পাই সির আঁকা ৪১০টি ছবি এই গ্যালারীতে আছে । এই গ্যালারীতে চীনের বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর প্রতিনিধিত্বকারী ছবি আর বড় বড় চিত্র প্রদর্শনীতে পুরষ্কার পাওয়া ছবিগুলোও স্থান পেয়েছে ।

    এই গ্যালারীতে জার্মানীর সংগ্রাহক লুদভিক দম্পত্তির উপহার দেয়া ইউরোপ ও আমেরিকার চিত্রশিল্পীদের আঁকা ১১৭টি ছবি আছে , এগুলোর মধ্যে পিকাসোর আঁকা চারটি ছবি আছে । তা ছাড়া , দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান , ইস্রাইল , আর্জেন্টিনা , ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পীরাও চীনের চারুকলা গ্যালারীতে নিজের আঁকা ছবি উপহার দিয়েছেন । ২০০৫ সালে এই গ্যালারী দেশবিদেশের চিত্রশিল্পীদের দেয়া ৬৪০০টি ছবি পেয়েছে ।

    চীনের বিখ্যাত প্রবীন চিত্রশিল্পী লিউ সুন গত বছর চীনের চারুকলা গ্যালারীকে তার সংগ্রহ করা ১৭৮০টি ছবি উপহার দিয়েছেন । এই গ্যালারী প্রতিষ্ঠার পর এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় উপহার । লিউ সুনের সংগ্রহ করা ছবিগুলোর মধ্যে আছে , রাশিয়ার তৈলচিত্র , চীনের ঐতিহ্যিক পদ্ধতিতে আঁকা ছবি , তিব্বতী ছবি , পেপার-কাট , খোদাইকর্ম আর হস্তশিল্পপন্য । এগুলোর মধ্যে ১০৮টি রাশিয়ার তৈলচিত্র এই গ্যালারীর শুণ্যতা পূরণ করেছে । লিউ সুন বলেছেন , চীনের চারুকলা গ্যালারী হচ্ছে ১৩০ কোটি লোকসংখ্যাসম্পন্ন চীনের বৃহত্তম গ্যালারী । আমি আমার সংগ্রহ করা সব ছবি এই গ্যালারীকে উপহার দিয়ে আনন্দ বোধ করি । আমার বয়স বেশী হয়েছে , তাই দেশের জন্য কিছু কাজ করতে চাই । লিউ সুনের দেয়া এক হাজারের বেশী চিত্রকর্ম পাওয়ার পর গ্যালারী লিউ সুনের সংগৃহীত চিত্রকর্মের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে , এই প্রদশর্ণী দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ।

    চীনের চারুকলা গ্যালারীর ২০০৬ সালের পরিকল্পনা সম্বন্ধে গ্যালারীর প্রধান ফান তি আন বলেছেন , আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে নতুন বছরে এই গ্যালারীতে আয়োজন করা চিত্রপ্রদশর্নীর সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রদশর্নীগুলোর গুনমান উন্নত করার প্রয়াস চালানো । এটা ব্যাপক চিত্রশিল্পীদের স্বপ্ন ।

    সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ানোর জন্য এই গ্যালারী যুক্তরাষ্ট্র , নেডারল্যান্ড , ফ্রান্স , ব্রিটেন , দক্ষিণ কোরিয়া , স্লোভাকিয়া ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং প্রাথমিকভাবে মতৈক্যে পৌচেছে ।

    ২০০৮ সালের ওলিম্পিক গেমসকে স্বাগত জানানোর জন্য এই গ্যালারীর সম্প্রসারণ প্রকল্প শীঘ্রই শুরু হচ্ছে । নতুন ভবনের মোট আয়তন ৪০ হাজার বগর্মিটার , এটা পুরনো ভবনের দেড় গুন বড় ।