v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-07 12:25:49    
স্মরণের বালুকাবেলায় (ছবি)
--- সি আর আই'র ঊষালগ্ন

cri

ইয়ান আন সিন হুয়া বেতার

  গত শতাব্দীর ৪০'র দশকের প্রথম দিকে চীন জাপানী সমরবাদীদের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছিল। লেলিহান যুদ্ধাগ্নির যুগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আর তার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সংগ্রাম চীনের জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধের সেরা শক্তিতে পরিণত হয়। জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ তত্পরতা প্রচারের জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ইয়ান আন সিয়ান হুয়া বেতার প্রতিষ্ঠা করে। এর উদ্দেশ্য তত্কালীন দেশি-বিদেশি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের প্রতি যৌথভাবে জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধের আহ্বান জানানো। ১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর এই বেতার প্রথম বার জাপানী ভাষার অনুষ্ঠান প্রচার করে, তখন বেতারের প্রারম্ভিক ঘোষণা ছিলো XNCR । বেতারের লক্ষ্যবস্তু ছিলো চীনে মোতায়েন জাপানী আগ্রাসী বাহিনী। প্রথম ঘোষিকা ছিলেন একজন যুদ্ধ-বিরোধী প্রয়াত জাপানী মহিলা, তাঁর নাম হারা। যদিও তখনকার রেকর্ডিং রুম ছিলো এক অতি কাঁচা গুহা ঘর, প্রেরণ শক্তি কেবল ৩০০ ওয়াট, তবু সেদিন থেকে চীনের আকাশে বিদেশীদের উদ্দেশ্যে বিদেশী ভাষার রেডিও অনুষ্ঠান চালু হয়েছে। পরে ১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর চীনের বৈদেশিক বেতার ব্রতের প্রতিষ্ঠা দিবস নির্ধারিত হয়।

      প্রথম ঘোষিকা হারা 

     গত শতাব্দীর ৫০'র দশকে জাপান থেকে চীনে ফিরে আসা প্রবাসী চীনা মিঃ লু রু ফু চীন আন্তর্জাতিক বেতারের জাপানী বিভাগে বহু বছর ধরে কাজ করেছেন। এখন প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক মিঃ লু বলেছেন, ইয়ান আনের গুহায় জাপানী ভাষার ঘোষিকা ম্যাডাম হারার প্রচারিত অনুষ্ঠান তত্কালীন জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় জাপানী বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার একটি বড় অস্ত্র। তিনি নিজের কণ্ঠে জাপানী সৈন্যদের যুদ্ধের বাস্তব অবস্থা জানান। বহু সৈন্য অনুষ্ঠানটি শুনে প্রভাবিত হয়ে আমাদের পক্ষে চলে এসেছে। মিছিইউকি ওগি নামে আমার একজন শিক্ষক জাপানী সৈন্য ছিলেন, এর পর তিনি বহু বছর ধরে জাপানের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান প্রচার করেছেন।

 জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধে কুওমিনতাং পার্টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সহযোগিতা করেছে । কিন্তু জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধে জয় লাভের পর অর্থাত্ ১৯৪৬ সালে কুওমিনতাং পার্টি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্তসরকার প্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যাখ্যান করে এবং কমিউনিস্ট পার্টির ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে একনায়কতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করে। ফলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গণতান্ত্রিক মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রাম চালায়। যুদ্ধের পরিস্থিতি অনুযায়ী, ইয়ান আন সিন হুয়া বেতার ১৯৪৭ সালের প্রথম দিকে পেইচিংয়ের অদূরে অবস্থিত হোপেই প্রদেশের শে জেলায় স্থানান্তরিত হয়েছে। একই বছরের সেপ্টেম্বরে ইয়ান আন সিন হুয়া বেতার ইংরেজী অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে।

প্রথম ইংরেজী ঘোষিকা ওয়েই লিন

    প্রথম ইংরেজী ঘোষিকা হচ্ছেন ম্যাডাম ওয়েই লিন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮২ বছর। তখনকার অবস্থা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, "সে সময় রেকর্ডিং রুম হোপেই প্রদেশের শে জেলার শাহো গ্রামের দক্ষিণ দিকের একটি গুহাঘরে ছিলো, সাজসরঞ্জাম অতি কাঁচা। এমনকি দরজাও নেই। রেকর্ডিং রুমের দ্বারে একটি পশমী বস্ত্র লাগানো হতো। মাঝে মাঝে বাইরে ছাগলের আওয়াজও এক সঙ্গে সম্প্রচারিত হতো। তখন রেকর্ডিং যন্ত্র ছিলো না, গান প্রচারের সময়ে আমন্ত্রিত শিল্পী দল মাইকের সামনে সামনে গান গাইতেন। "

 ইংরেজী অনুষ্ঠান চালু হবার সময় ইয়ান আন সিন হুয়া বেতারের প্রেরণ শক্তি ১০ কিলোওয়াট হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি এশীয় দেশগুলোর স্পষ্ট অনুষ্ঠান শুনা যেতো। উপযুক্ত আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা প্রভৃতি অঞ্চলেও চীনের বৈদেশিক বেতার শুনা যায়। বৈদেশিক বেতারের মাধ্যমে বিদেশগুলো অপেক্ষাকৃত স্পষ্টভাবে চীনে সংঘটিত বাস্তব অবস্থা জানতে পেরেছে।

 ১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়ান আন সিন হুয়া বেতারও সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী পেইচিংয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং নাম বদলে পিকিং সিন হুয়া বেতার হয়েছে। এখন আপনি ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর পিকিং সিন হুয়া বেতার দেশ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানকালে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং শুনছেন। তা দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের জন্ম ঘোষিত হয়েছে ।

 নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীনের বৈদেশিক বেতার সক্রিয়ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে চীন সরকারের নীতি, চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজের নানা ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও পরিবর্তন, চীন ও বিভিন্ন দেশের আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা ইত্যাদির পরিচয় দেয় এবং চীনা জনগণ আর বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যকার সমঝোতা আর মৈত্রী বাড়ানোর সেতুতে পরিণত হয়েছে। এই কর্তব্যগুলো কার্যকরী করার প্রক্রিয়ায় চীনের বৈদেশিক বেতার ব্রতেরও বিরাট উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে সম্প্রচারের ভাষার সংখ্যার দিকে, আগেকার জাপানী , ইংরেজী এবং চীনা ভাষার ভিত্তিতে আরো বহু নতুন ভাষার অনুষ্ঠান চালু হয়েছে।

 ১৯৫০ সালের এপ্রিলে চীনের বৈদেশিক বেতার "রেডিও পিকিং" এই ঘোষণা নাম ব্যবহার শুরু করে । এখন আপনি তত্কালের ঘোষণা নাম শুনছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনগণের কাছে নয়া চীনের বর্তমান অবস্থা এবং চীনের স্বাধীন , স্বতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করার জন্য একই মাসে রেডিও পিকিং ভিয়েতনামিজ, থাই, ইন্দোনেশিয়, বার্মিস ভাষার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে।

 নয়া চীনের প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষায় বহু দেশপ্রেমিক প্রবাসী চীনা স্বদেশে ফিরে এসে কাজ করেন এবং জীবন কাটান। মিঃ ওয়াং শেন চোং তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি বার্মিস ভাষার অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বার্মিস ভাষা প্রথম চালু হওয়ার সময় কার্যালয়ের পরিস্থিতি কঠোর ছিলো, তবু কাজের মধ্যে সীমাহীন মজা পাই।

 এরপর পিকিং রেডিও যথাক্রমে ফার্সী, আরবী, সওয়াহিলী, স্প্যানীশ প্রভৃতি ভাষার অনুষ্ঠান প্রচার করে আরব দেশগুলো, আফ্রিকান ও লাটিন আমেরিকান দেশগুলোর কাছে সমাজতান্ত্রিক চীনের অবস্থা তুলে ধরে। ফলে চীনা জনগণ এবং তৃতীয় বিশ্বের জনগণের সঙ্গে মৈত্রী বেড়েছে। সে যুগে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য ইংরেজী ভাষাভাষী অঞ্চলের উদ্দেশ্যে ইংরেজী অনুষ্ঠানের দৈনিক সম্প্রচার সময় নিরন্তরভাবে বেড়েছে।

 ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চীনের বৈদেশিক বেতার ২৭টি বিদেশী ভাষা আর চীনের ম্যান্ডারিন ভাষা সহ চারটি আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠান প্রচার করে, তখন রোজ মোট ৯৮ ঘন্টা অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। গত শতাব্দীর ৭০'র দশকের মাঝামাঝি সময় চীনের বৈদেশিক বেতারের প্রচারিত ভাষা ৪৩টি হয়েছে।

 ১৯৭৮ সালে চীনের সংস্কার আর উন্মুক্ততার সঙ্গে সঙ্গে চীনের বৈদেশিক বেতার ব্রতও নতুন উন্নয়ন যুগে প্রবেশ করেছে।