v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-02 14:46:30    
মিয়াও জাতির সুচিতোলা নারী চাং ছুনইং

cri
    মিয়াও জাতি যুগযুগ ধরে কুইচৌ প্রদেশে বসবাসকারী এক সংখ্যালঘূজাতি । তাদের জীবনযাত্রায় সুচিকর্মের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয় । দশ-বারো বছর বয়সী কিশোরী পক্ক কেশী বৃদ্ধা পর্যন্ত সব নারীরা সুচিকর্ম জানেন । তাদের কাপড়চোপড় এমনকি দৈনন্দিন ব্যবহার্যজিনিসপত্রগুলোতে সুন্দর ফুলের নকসা তোলা আছে । মিয়াওজাতির নারীদের মধ্যে এমন এক কথা প্রচলিত,তাহল "মানুষের মধ্যে তুলনা ,ফুলের মধ্যে তুলনা " । মানুষের মধ্যে তুলনার অর্থ হল মানুষের মধ্যে নাচগান প্রতিযোগিতা আর ফুলের মধ্যে তুলনার অর্থ হল পোশাক তৈরীর প্রক্রিয়ায় বস্ত্রবয়ন, সুচিকর্ম, রঙ করা প্রভৃতি ক্ষেত্রের প্রতিযোগিতা । মিয়াওজাতির মেয়েরা ৭-৮ বছর বয়স থেকে সুচ দিয়ে কাপড়ে নকসা তোলা শিখতে শুরু করেন । ১৪-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তারা সুচিকর্মের কিছু কৌশল আয়ত্ত করেন । সাধারণত মা মেয়েকে বা বড়বোন ছোটো বোনকে শেখান । এ সম্পর্কে মিয়াও জাতির মেয়ে চাং ছুনইং সংবাদদাতাকে বলেছেন, আমরা সবাই ছোটো বেলা থেকেই নিজেদের সুচি কর্মেরকাপড়ের পোশাক পরি । শহরে কেউ অশিক্ষিত হলে সবাই তাকে তুচ্ছ করে দেখেন । কিন্তু আমাদের মিয়াওজাতির কোনো মেয়ে যদি সুচিকর্মনা জানেন তাহলে সবাই তাকে তুচ্ছ করে দেখেন এবং কোনো ছেলে এ ধরণের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে না । কোনো মেয়ে যদি ভাল সুচিকর্ম জানে তাহলে সবাই তাকে ভালবাসবেন এবং তাকে শিক্ষক হিসেবে সম্মান করবেন । তাই মিয়াওজাতির মেয়েরা ছোটো বেলা থেকেই কাপড়ে সুচি কর্মপছন্দ করে ।

    ৩৬ বছর বয়সী চাং ছুনইং দক্ষিণ-পূর্ব কুইচৌ প্রদেশের মিয়াওজাতি অধ্যূষিত এলাকায় বসবাস করেন । তিনি প্রাদেশিক রাজধানী কুইইয়াং শহরে এক দোকান খুলেন । দোকানে তার এবং মিয়াওজাতির বোনদের তৈরী সুচিকর্ম বিক্রি হয় । আমাদের সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময়ে চাং ছুনইং বিশেষভাবে মিয়াওজাতির উত্সবের পোশাক পরেছেন ।কালো রঙ পশমী কাপড়,ভাজ করা স্কার্ট ,কোমরের চাদর,পায়ের নলা বাঁধা ফিতা ও জুতায় লাল ও সবুজ রঙের ফুল তোলা আছে। কাপড় ও তার মাথায় ,ঘাড়ে আর হাতে পরা রুপার অলংকারে চাংছুনইংকে অনেক সুন্দর দেখায় । তিনি বলেছেন ,তার গায়ের পোশাক তিনি এবং নিজের ছোটো বোন তৈরী করেছেন । মিয়াওজাতির সুচিকর্মেরপদ্ধতি প্রায় ত্রিশ ধরণের । কোনোকোনোটা অত্যন্ত কঠিন । তাই অনেকে পারেন না বলে অন্যদের তৈরী করতে দিতেন । চাং ছুনইং সুচিতোলায় অনেক মেধাবী । ছোটোবেলা থেকেই তিনি সুচিতোলার অনেক পদ্ধতি আয়ত্ত করেছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে সুচিতোলার নানা পদ্ধতি দেখালেন।

    মিয়াওজাতির ঐতিহ্যিক রীতিনীতি অনুযায়ী মেয়েরা বাড়ির বাইরে যেতে পারে না ,তাদের পড়াশুনা করতে হয় না । তাদের শুধু বাড়িতে পারিবারিক কাজ করতে হয় । মিয়াওজাতীয় মেয়েদের মধ্যে চাং ছুনইং আলাদা । তিনি বিশ-বাইশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বাইরে মজুরী করতে যান । দক্ষিণ চীনের কুয়াংচৌ শহরের এক পোশাক কারখানায় মেশিন দিয়ে কাপড়ে সুচিকর্মেরকাজ করেন । কারখানায় তিনি আধুনিক সুচিকর্ম দেখেছেন । কিন্তু চাং ছুনইং মনেমনে মিয়াওজাতির হাতের সুচিকর্ম পছন্দ করেন । কাজের ফাঁকেফাঁকে তিনি মিয়াওজাতির ঐতিহ্যিক সুচিকর্মেরকাজ করতেন । পরে যখন তার হাতের সুচিকর্ম পেইচিংয়ে প্রদর্শিত হয় তখন তিনি পেইচিং গিয়ে এক পোশাক দোকান খুলে মিয়াওজাতির পোশাক বিক্রি করেন । পেইচিংয়ে অবস্থানরত বিদেশীরা সংখ্যালঘূজাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক পছন্দ করেন, এটা দেখে চাং ছুনইং মিয়াওজাতির সুচিকর্ম সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

    যদিও পেইচিংয়ে তার ব্যবসা ভাল চলেছে তবু বাবামা ও বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্যে তিনি নিজের দেশ কুইচৌতে ফিরে যান । তিনি বাইরে থাকাকালে মিয়াওজাতির সুচিকর্মের জন্যে ব্যবসার সুযোগ খুঁজে বের করেছেন । নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে,লোকেরা মিয়াওজাতির সুচিকর্ম সংগ্রহ করতে ভালবাসেন ।সঙ্গে সঙ্গে তিনি এটাও লক্ষ্য করেছেন যে,অধিক থেকে অধিকতর মিয়াওজাতীর মেয়ে সুচ দিয়ে কাপড়ে ফুল তোলার কাজ করছেন না, তারা বাইরে পড়াশুনা করতে বা মজুরি করতে যাচ্ছেন । মিয়াওজাতির সুচিকর্মের কৌশল বিলুপ্তিরসম্মুখীন । তাই চাং ছুনইং নিজের উপার্জন দিয়ে এক সুচিকর্মেরকারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কারখানায় ৫০-৬০জন শ্রমিক কাজ করছেন । তিনি প্রক্রিয়াকরণ সুচিকর্ম বাইরে বিক্রি করার উপায় খুজে বের করেন এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেন । তিনি বলেছেন, কেন এখন সুচি কর্মের মূল্য দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে ? এখন মেয়েরা সুচিকর্মের কাজ করতে চায় না । আমাদের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সুচিকর্মের কৌশল বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়েছে । কিন্তু আমি তা হতে দেব না । আমি যুবতী মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেব , তাদের কিছু কৌশল শিখাব । যাতে পড়াশুনা শেষে যদি তারা কোনো কাজ না পান তাহলে এখানে তারা সুচিকর্মেরকাজ করতে পারবেন ।

    চাং ছুনইংয়ের কারখানা কুয়াংচৌ শহরের বাজারের জন্যে আধুনিক সুচিকর্ম প্রক্রিয়াকরণ করা ছাড়াও ঐতিহ্যিক প্রকৌশল অনুযায়ী মিয়াওজাতির সুচিকর্ম প্রক্রিয়াকরণও করে ।ঐতিহ্যিক পোশাক প্রক্রিয়াকরণ ছাড়া তিনি বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নকসাও করেন। এসম্পর্কে তিনি বলেছেন,বাজারের এবং যুগের চাহিদা মেটাতে পারলে মিয়াওজাতির সুচিকর্মের ভবিষ্যত আরও ভাল হবে । আমি মনে করি,সবাই মিয়াওজাতির কাপড়ের তৈরী পোশাক পরতে পছন্দ করে তা নয় । আমি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন জাতির রীতিনীতি সমন্বিতকরে যেমন জটিল নয়,দাম বেশি নয় তেমনি গুণমান মন্দও নয় এমন নতুন ধরণের সুচিকর্ম তৈরী করব । তিনি বলেছেন,মিয়াওজাতির সুচিকর্ম মিয়াওজাতির মূল্যবান সম্পদ,এখন যদি আমরা তার উত্তরাধিকার না নেই বা তাকে সম্প্রসারিত না করি তাহলে পরে যখন আমাদের প্রয়োজন হয় তখন কোথাও পাওয়া যাবে না ।

    চাং ছুনইং এখন মিয়াওজাতির পুরোনো সুচিকর্ম সংগ্রহ ও সম্প্রসারিত করার বাজারে সর্বাধিক শক্তি ও অর্থ বিনিয়োগের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ।