v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-06-01 21:32:27    
থাইসেন পাহাড়

cri
    এখন চীনে বসন্তকাল। ছুটির দিনে চীনা লোকেরা এই ঋতুতে সাধারণত পাহাড় আরোহন করতে পছন্দ করেন। আজকের এই আসরে আমি আপনাদের চীনের একটি নাম-করা পাহাড় বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। এই পাহাড়ের নাম থাইসেন পাহাড়।

    থাইসেন পাহাড় চীনের পূবার্ঞ্চলের সেনডং প্রদেশে অবস্থিত। এই পাহাড় চীনের পাহাড় উদ্যানগুলোর অন্যতম ।বসন্তকালে থাইসেন পাহাড়ে শান্ত। পযর্টকরা যখন পাথরের সিড়ি দিয়ে থাইসেন পাহাড় আরোহন করতে শুরু করেন তখন ঘাসের সুগন্ধ নাকে ঢুকে। নানা ধরনের বন্য ফুল পাহাড়ের ঢালে আর উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে। মনে হয় এ সব দূর থেকে আসা অতিথিদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ ফুল পাহাড়ের উপত্যকায় ফুটে, তাই পযর্টকরা শুধু দূর থেকে উপভোগ করতে পারেন।

    বসন্তকালে থাইসেন পাহাড় পরিদর্শন করতে চাইলে ইনথাও ইয়ান অথার্ত ইনথাও উদ্যান একটি দেখার মতো জায়গা। এটা থাইসেন পাহাড়ের আওলে শৃংগের উত্তর পাশে। শতাধিক বছর আগে এখানে বসবাস করে লু নামে এক জন পুরুষ আর তার ছেলে। তারা পাহাড়ের পাথর সরিয়ে দিয়ে মাটি সমান করে কয়েকটি ছেরি গাছ লাগান। তখন থেকে আস্তে আস্তে বেশী গাছ লাগানো হয়। আয়তনও অধিক থেকে অধিকতর প্রসারিত হয়। এখন পাহাড়ে এই গাছ অনেক। পযর্টকরা পাহাড় আরোহন করার পথে এই ছেরি গাছ বাগানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে টাটকা ছেরি এবং কৃষকদের খাটি খাবার আস্বাদন করতে পারেন। খুব মজার ব্যাপার।

    এই ছেরি বাগান ছাড়া, আরেকটি দেখার মতো জায়গা হল থাইসেন পাহাড়রের নিকটবর্তী ফিসেন। ওখানে প্রচুর পিছ পাওয়া যায়। প্রত্যেক বছরের এপ্রিল আর মে মাসে পিছ উপভোগের সবচেয়ে মৌসুম। ফিসেনের পিছ চাষ করার ইতিহাস হাজারাধিক বছরের। বতর্মানে ওখানে ৮০০০ একর আয়তনের পিছ উদান আছে। এই পিছ উদান জেনিসের রেকডে 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় পিছ উদান' বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।প্রত্যেক বছরের বসন্তকালে গোটা পাহাড়ে লাল আর সাদা ফুলের সাগরে পরিণত হয়েছে। মিস লি ছিং যিনি বিশ বছরেরও বেশী সময় এখানে বসবাস করেছেন তিনি বলেছেন, যারা এখানে পরিদর্শন করতে এসেছেন তারা ফিজেন ' তুনিয়ার স্বর্গ' বলে মনে করেন। তিনি বলেছেন,

    আমরা এই গায়গা ' থাইসেনের দর্শনীয়স্থান' বলে মনে করি। কারণে এখানে ফূল গাছের ভর্তি। বসন্তকালে এখানে পরির্দশন করতে আসলে আপনার নজরে পড়বে কেবল সবুজ গাছের পাতা এবং লাল পিছ গাছের ফুল। গোটা থাইসেন পাহাড়ের রীতিনীতির তুলনায় এখানকার দৃশ্য একটু অন্য রকমের ।

চেরি উদ্যান হোক ফিজেনের পিছ গাছ হোক সেখানে শুধু ফুল আর গাছ উপভোগ করা যায়। বসন্তকালে যদি আপনি থাইসেন পাহাড়ের আসল দৃশ্য অনুভব করতে চান তাহলে থাইসেন পাহাড়ের সর্বোচ্চ স্থানে আরোহন করতে হবে। চীনের প্রাচীনকালের মানুষের চোখে থাইসেন পাহাড় হল আকাশের কাছে সবচেয়ে নিকটবর্তী পাহাড়। পাহাড়ের উপরে ' থিয়েন ছেয়ে' অবর্থা ' আকাশের পথ' নামে একটি জায়গা আছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তালিয়ে যখন মেঘ মানুষের মাথার উপর ভেসে যাচ্ছে তখন মনে হয় মানুষ স্বর্গে ভ্রমণ করছে। মিস্টার উ ওয়ে মিন যিনি বিশেষভাবে থাইসেন পাহাড় আরোহন করতে এসেছেন তিনি বিশ বছর আগে থাইসেন পাহাড় পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। তবে বিশ বছর পর যখন তিনি আবার থাইসেন পাহাড় পরিদর্শন করতে আসেন তখন বসন্তকালের থাইসেন পাহাড় তাঁর মনে গভীর ছাপ রেখেছে। তিনি বললেন,

    বিশ বছর আগে আমি থাইসেন পাহাড় পরিদর্শন করলাম। সেটা আমান প্রথম পরিদর্শন। সে দিন আমি পাহাড়রের তলদেশ জুং থিয়েন মেন থেকে উপরে আরোহন করতে শুরু করলাম। সে সময় পথ এত প্রশান্ত ছিল না। সিঁড়িও এত সমান নয়। থিয়েন ছেয়েও এত পরিষ্কার-পরিছিন্ন ছিল না। তা ছাড়া, তখন পাহাড়ে গাছপালাও খুব কম । কিন্তু এখন পাহাড়ের সবুজ রং আচ্ছন্নদিত হয়েছে।

    বসন্তকালে থাইসেন পাহাড় অঞ্চলে বৃষ্টি কম। কুয়াশাও খুব কম দেখা যায়। সুতরাং অনেক পযর্টক থাইসেন পাহাড়ের শৃংগে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় উপভোগের সুযোগ হারাতে চান না। পযর্টকদের মধ্যে বেশির ভাগ পাহাড়ের উপর এক রাত থাকেন। পরের দিন ভোরবালায় তারা পাহাড়ের শৃংগে এসে পূর্ব দিকে তালিয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করেন।

    যারা থাইসেন পাহাড় পরিদর্শন করেছেন তারা জানেন যে থাইসেন পাহাড়ের দৃশর্নীয়স্থান হল থাইসেন পাহাড়রের শৃংগগুলো। এই দশর্নীয়স্থানে ছোট-বড় ২০০টিরও বেশী শৃংগ আছে। ২৬৯টিরও বেশী স্রোত আছে । তা ছাড়া, এই দশর্নীয়স্থানে দু হাজারাধিক প্রাচীনকালের গাছ আছে। এক সময় দশর্নীয়স্থানে নতুন নতুন অট্টালিকা নির্মান করা হয়।প্রাচীন স্থাপত্যগুলো জীর্ণ হয়। পাহাড়রের উপরে সবুজায়নের দিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যার ফলে থাইসেন পাহাড়রের সবুজ রং আগের চাইতে অনেক কমে গেছে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় সরকার থাইসেন পাহাড়ের সংস্কার আর সংরক্ষণ কাজ চালিয়ে এসেছে। পাহাড়ের উপর দিকে যাওয়া পথগুলো মেরামত করা হয়েছে। তা ছাড়া এই দশর্নীয়স্থানে বন দাবানল প্রতিরোধের জন্যে ভিটিও পযর্বেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। থাইসেন পাহাড়ের সবুজায়ন প্রত্যেক বছর পরিবর্তিত হয়েছে। জাপান থেকে আসা পযর্টক য়াজিমা হাইয়াকি সংবাদদাতাকে বললেন,

    থাইসেন পাহাড় সত্যিই চীনের প্রথম বিখ্যাত পাহাড়। এখানে এসে আমি খুব আলন্দিত। এখানকার দৃশ্য খুব সুন্দর। এর সঙ্গে সঙ্গে থাইসেন চীনা জাতির উত্তরাধিকার। একজন বিদেশী হিসেবে থাইসেন পাহাড় ভালভাবে সংরক্ষিত হয়েছে দেখে আমি আলন্দিত। কারণ তা হল ইতিহাসের স্মরণ।

    বসন্তকালে থাইসেন পাহাড়ে ভ্রমণ করতে আসলে পযর্টকরা কেবল ফুল উপভোগ করতে পারে, সুর্যোদয় দেখতে পারে তাই নয় কয়েকটি উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশও নিতে পারেন। পযর্টন বিষয়ক স্থানীয় কর্মকর্তা জেন ফন বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থাইসেন পাহাড়ে ভ্রমণ করতে আসা বিদেশী পযর্টকদের সংখ্যা অধিক থেকে অধিকর হয়েছে। তিনি বললেন,

    গত কয়েক বছর ধরে পযর্টকদের মধ্যে বেশি ভাগ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, যুক্তরাষ্ট্র আর ক্যানাডা প্রভৃতি দেশ থেকে এসেছে। আরও বেশী বিদেশী পযর্টককে আকর্ষণ করার জন্যে আমাদের আরও কয়েক পদক্ষেপ নিতে হবে। এতক্ষণ আপনারা চীনের থাইসেন পাহাড় সম্বন্ধে কিছু শুনলেন। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' বিশেষ অনুষ্ঠান এখানে শেষ হল। শোনার জন্যে ধন্যবাদ।