v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-31 14:38:23    
চীনের বিখ্যাত অভিনেত্রী থাও হোং

cri
    চীনের অভিনেত্রীদের মধ্যে দুজনের নামই থাও হোং। দুজনই দর্শকদের প্রিয় অভিনেত্রী , তাই দর্শকরা বয়স অনুসারে তাদেরকে ' বড় থাও হোং ' ও ' ছোট থাও হোং ' ডাকেন । টি ভি নাটক ' ফিনিক্স গাছের বৃষ্টি '-তে বড় থাও হোংর চমত্কার অভিনয় দশর্কদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

    এই নাটকে থাও হোং ছিং রাজবংশের এক রাজকুমারী পাও লিংয়ের জীবনের সুখ-দুঃখ চমত্কারভাবে মূর্ত করে তুলেছেন । যুগের পরিবতর্নের সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমারী পাও লিং ছিং রাজবংশের শেষ দিকের এক সরল ও স্বেচ্ছাচারী মেয়ে থেকে সমাজের সবচেয়ে নীচু স্তরের নারীতে পরিণত হন। এই নাটকে থাও হোংরাজকুমারী পাও লিনের দশ-বারো বছর থেকে ত্রিশাধিক বছর বয়স পর্যন্ত বিশ-বাইশ বছরের জীবন চিত্রিতকরেছেন । থাও হোংএই চরিত্রের জটিল মানসিক পরিবর্তন আর অন্তর্জগতের আলোড়ন সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছেন ।

    ৩৫ বছর বয়সী থাও হোং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছুং ছিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন । ছোট বেলা থেকেই তিনি নাচগান পছন্দ করেন । অনেকেই তার নাচ গান দেখে প্রশংসা করে বলেছেন , মেয়েটি বড় হয়ে বড় অভিনেত্রী হবে । ১১ বছর বয়সের সময় থাও হোং একটি শিল্পকলা স্কুলে ভর্তি হন । সেখানে আট বছর নাচ শেখার পর থাও হোং পরীক্ষার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অপেরা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন । ১৯৯৮ সালে থাও হোং সিরিজ নাটক ' মহাখালে থাকা পরিবার '-এ প্রধান নায়িকার ভুমিকায় অভিনয় করে পেইচিং শহরের ' বাসন্তী পাখি ' নামে এক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন । এই পুরষ্কার পাওয়ার পর থাও হোং আবার নাটক ' কালো গুহা 'তে সমাজের নিম্ন স্তরের জগতের সর্দারের স্ত্রী মেন লিনের চরিত্র সৃষ্টি করেন । এই চরিত্রের অন্তর্জগত বিকৃত , অন্যদের ঠকানোর জন্য প্রায়ই ফন্দী আঁটে । অনেক দর্শক তার সৃষ্ট এই নেতিবাচক চরিত্র থেকে থাও হোংয়ের অভিনয়ের মান বুঝতে পেরেছেন । চীনে অনেকেই মনে করেন , সুন্দরী অভিনেতা –অভিনেত্রী তাদের সৌন্দর্য দেখিয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন , তারা তাদের অভিনয়ের নৈপুন্যকে স্বীকৃতি দিতে চান না । থাও হোং এক সুন্দরী অভিনেত্রী , প্রথম দিকে অনেক দর্শক থাও হোংকেও তাই মনে করতেন । কিন্তু চলচ্চিত্র ' জীবন শো ' দেখার পর অনেকের ধারণার পরিবর্তন হয়েছে ।

    চলচ্চিত্র ' জীবন শো ' থাও হোংয়ের অভিনয় নৈপুন্যের প্রতিনিধিত্বকারী ছবি বলা যায় । ছবিটিতে একটি বাণিজ্যিক রাস্তায় অবস্থিত এক খাবার ঘরের নারী বস লাই সুয়ান ইয়ানের অভিজ্ঞতা ও তার প্রেমের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । ছবিতে থাও হোং তার পরিবর্তনশীল দৃষ্টি আর অভিনয় দিয়ে নারী বস লাই সুয়ান ইয়ানের চরিত্রের দ্বন্দ্ব নিখুঁতভাবে প্রকাশ করেছেন। চরিত্র লাই সুয়ান ইয়ানের গায়ে সাহসিকতা ও দুর্বলতা , দয়া ও বিবেকহীনতা আর উত্সাহ ও নিরুত্সাহ সবই আছে । থাও হোং নিজের চমত্কার অভিনয়ের মাধ্যমে লাই সুয়ান ইয়ানের গায়ের এই সব দ্বন্দ্ব বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন । থাও হোং এই ছবিতে সাফল্যের সঙ্গে আধুনিককালের এমন একটি নারী ভাবমুর্তি সৃষ্টি করেছেন , যিনি জীবিকার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেন , দায়িত্বে অবিচল থাকেন এবং প্রেমের জন্য অবিচলিতভাবে প্রয়াস চালান ।

    ছায়াছবি ' জীবন শো 'তে থাও হোংয়ের সৃষ্ট চরিত্র লেই সুয়ান ইয়ানের দোকানে স্থানীয় বৈশিস্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের খাদ্য দ্রব্য --হাঁসের ঘাড় বিক্রি হয়। থাও হোং চরিত্রের জীবনের সঙ্গেপরিচিত হওয়ার জন্য একটানা চার মাস তৈরী হাসঁমুর্গীর মাংসের দোকানে হাঁসের ঘাড় কাটার কৌশল শিখেছেন । তাই তিনি ছবিতে দক্ষতার সঙ্গে হাঁসের ঘাড় কাটা রপ্ত করেছেন । এই ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে থাও হোং বলেছেন , এই ছায়াছবির মোট ৯৯টি অঙ্কের প্রতিটিতে আমার অভিনয় ছিল । একজন অভিনেতার পক্ষে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ । গোটা ছবির সফলতা বা ব্যর্থতা আমার অভিনয়ের উপর নির্ভরশীল । আমি স্নায়বিকচাপ অনুভব করেছি । আমি প্রস্তুতির কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করেছি । নিজের তৈরী চরিত্র গবেষণার জন্য আমি চার মাস সময় নিয়েছি । তাই শুটিংয়ের সময় আমি তেমন বড় চাপ অনুভব করি নি ।

  ' জীবন শো 'তে চমত্কার অভিনয়ের জন্য থাও হোং ২০০২ সালে চীনের চলচ্চিত্র জগতের সরকারী পুরষ্কার ' হুয়া পিয়াও ' পুরষ্কার , বিশেষজ্ঞদের সোনালী মোরগ পুষ্কার আর সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের ' সোনালী সুরা পাত্র' পুরষ্কার জয় করেছেন । এই ছায়াছবিতে সাফল্যজনক অভিনয়ের জন্য থাও হোং আরো বেশি চরিত্র সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছেন । তিনি বিভিন্ন ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করতে চান । তিনি বলেছেন , এই চলচ্চিত্র তৈরীর কাজ শেষ হওয়ার পর আমি অনেক অনুরুপ চরিত্র সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছি । কিন্তু আমি শুধু দোকানের মালিকের চরিত্র সৃষ্টি করতে চাই না । আমি অন্য ধরনের চরিত্রও সৃষ্টি করতে চাই। তাই আমি ' তাই কুন দো ' নামে একটি চলচ্চিত্র বেছে নিয়েছি । এই ছায়াছবিতে থাও হোং এক দৃঢচেতা তাইকুনদোবিদের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তাইকুনদোবিদের ক্রীড়ানৈপুন্য দেখানোর জন্য থাও হোং এই ক্রীড়া চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন । তাইকুনদো অনেকটা মুষ্টিযুদ্ধের মতো এক ক্রীড়া ইভেন্ট । নিরলস প্রচেষ্টার পর থাও হোং পেশাদার ক্রীড়াবিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পেরেছেন । প্রতিযোগিতার সময় তার সাহসিকতা সবার দৃষ্টি কেড়েছে । এমনকি তার প্রতিপক্ষও মনে করেন তিনি একজন পেশাদার তাই কুন দো ক্রীড়াবিদ । এই ছায়াছবিতে থাও হোংয়ের অভিনয়ও দর্শক আর বিশেষজ্ঞের প্রশংসা জয় করেছে ।

    ২০০৪ সালের শেষ দিকে থাও হোং তিব্বতী জাতির অধিবাসীদের জীবন সম্পর্কিত টিভি নাটক ' খানতিনের প্রেম '-এ নায়িকা তিব্বতী মেয়ে খান চু ও তার মা –এই দুটি চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । এই টিভি নাটকে থাও হোং শুধু মার দয়া ও একগুয়ে স্বভাব প্রকাশ করেন নি , তিনি তিব্বতী মেয়ে খান চুর আন্তরিকতা আর সাহসের সঙ্গে ভালোবাসা ও ঘৃনা করার চরিত্র জীবন্তভাবে চিত্রিত করেছেন । থাও হোং এই প্রথমবার একটি নাটকে দুটি চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , এটা তার অভিনয় জীবনের একটি অগ্রগতিও বলা যায় ।

    যদিও থাও হোংয়ের সৃষ্ট চরিত্রের সংখ্যা বেশী বলা যায় না , কিন্তু যদি একবার তিনি নিজের পছন্দমতো চরিত্র পান , তবে তিনি অভিনয়ে আত্মনিয়োগ করেন । তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে পুনরাবৃত্তি কম , প্রতিটি চরিত্রই জীবন্ত ও বাস্তবনিষ্ঠ। এখন কোরিয় জাতির জীবন সম্পর্কিত একটি টিভি নাটকের শুটিংয়ের কাজ চলছে । থাও হোং এই টিভি নাটকে কোরিয় জাতির নৃত্যশিল্পী পাই হোর চরিত্র সৃষ্টি করবেন । এই টিভি নাটকে থাও হোং কোরিয় জাতির লম্বা ঢাকের নাচ পরিবেশন করবেন । এই টি ভি নাটকে দশর্করা থাও হোংয়ের সৃষ্ট নতুন চরিত্র দেখতে পাবেন ।