তামাক হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার এক রকম বন্য বৃক্ষ । গোড়ার দিকে ইন্ডিয়ানরা তামাক মুখে দিয়ে চিবাতেন অথবা ধূমপান করতেন । গত দু শ'রও বেশি বছর ধরে সারা পৃথিবীতে তামাক প্রচলিত হয়ে আসছে । বিংশ শতাব্দি থেকে মানব জাতি উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, তামাক মানব জাতির পক্ষে ক্ষতিকর । ১৯৭৭ সালে মার্কিন ক্যান্সার সমিতি সর্বপ্রথমে ধূমপান নিয়ন্ত্রণের এক রকম প্রচার ও শিক্ষাদানের উপায় - তামাকবিহীন দিবস রাখার প্রস্তাব করেন । সেই দিবসে সারা আমেরিকায় ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে ব্যাপক পর্যায়ে প্রচার করা হয় ধূমপানকারীদের সেই দিন ধুমপান না করার পরামর্শ দেয়া হয় এবং সিগারেটের দোকানগুলোতে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয় । যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বৃহষ্পতিবারকে সে দেশের তামাকবিহীন দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে । এরপর ব্রিটেন , মালয়েশিয়া , হংকং প্রভৃতি দেশ ও অঞ্চল পর পর নিজের নিজের তামাকবিহীন দিবস নির্ধারণ করে ।
১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসে জাতি সংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছরের ৭ এপ্রিলকে বিশ্ব তামাকবিহীন দিবস হিসেবে ঘোষণা করে । তা ১৯৮৮ সালে কার্যকর হয় । তবে ৭ এপ্রিল হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস । প্রতি বছরের এই দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্য রক্ষা সম্পর্কে একটি প্রতিপাদ্য উত্থাপন করে । এই প্রতিপাদ্য ব্যহত না করার জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ৩১ মেকে বিশ্ব তামাকবিহীন দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে । চীনও এই দিনকে চীনের তামাকবিহীন দিবস বলে ঘোষণা করে ।
তামাকের মধ্যে রয়েছে ১৪ শ'রও বেশি উপাদান । ধূমপানের সময়ে বের হওয়া ধূমের মধ্যে ৪০টিরও বেশি ক্যান্সারজনিত বস্তু ও ক্যান্সারের অবনতি ঘটাতে পারে এমন দশ বারোটি বস্তু রয়েছে । সেগুলোর মধ্যে মানুষের পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকর বস্তু হচ্ছে নিকোটিন ও অন্যান্য ধাতব দ্রব্য । একটি সিগারেটের মধ্যে অন্তর্গত নিকোটিন একটি ছোট ইঁদুর নিধন করতে পারে । ধূমপান সহজে হৃদ রোগ ডেকে আনতে পারে । যা আরো গুরুতর , তা হচ্ছে, ধূমপানকারীরা দারুণভাবে অন্যদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে । গবেষণামূলক ফলাফল থেকে দেখা গেছে, ধূমপান নিজেদের চেয়ে অন্যদের বেশি ক্ষতি সাধন করে ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তামাকের ওপর অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে । ২০০৩ সালের ২১ মে জেনিভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ১৯২টি সদস্য দেশ সর্বসম্মতিক্রমে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রথম বিশ্বব্যাপী চুক্তি " তামাক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোগত চুক্তি" অনুমোদন করে ।
সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৪৯ লাখ লোক ধূমপান ও তার সঙ্গে জড়িত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান । কোনো কোনো তথ্য থেকে জানা গেছে, যারা দীর্ঘ দিন ধরে ধূমপান করেন , তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার ধূমপান না করা লোকের চেয়ে দশ থেকে বিশ গুণ বেশি । গলা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যদের চেয়ে ৬ থেকে ১০ গুণ বেশি । হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যদের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি । শ্বাসনালীর প্রদাহে আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যদের চেয়ে ২ থেকে ৮ গুণ বেশি ।
বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ১১০ কোটি লোক ধূমপান করেন । অনুমান করা হচ্ছে , ২০২৫ সালে এই সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৭০ কোটিতে দাঁড়াবে । প্রতি বছর ধূমপান ও তার সঙ্গে জড়িত রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা ফি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে ।
|