v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-30 11:02:06    
একজন কৃষি শ্রমিক কেমন করে জাতীয় আদর্শ শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন

cri

    সদ্য উদযাপিত ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস ছিল পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের হাংচৌ লৌহ ও ইস্পাত গোষ্ঠীর শ্রমিক চু চি শেংয়ের জন্যে একটি অবিস্মরনীয় দিন । কেন না গত ১ মে তিনি জাতীয় ১ মে শ্রম পুরস্কার লাভ করেছেন । এটা চীনের প্রত্যেক শ্রমজীবির জন্যে একটি প্রত্যাশিত পবিত্র সম্মান । আজকের অনুষ্ঠানে চু চি শেংয়ের কাহিনী সম্বন্ধে কিছু বলছি আমি শি চিং উ । চু চি শেংয়ের বয়স ৩৭ বছর । তিনি হাংচৌ লৌহ ও ইস্পাত গোষ্ঠীর একজন শ্রমিক । এই গোষ্ঠীর ইতিহাস প্রায় ৫০ বছরের । চীনের বৃহত্তম ৫০০ টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তার স্থান ৯৪তম । চু চি শেংয়ের গায়ের রং একটু কালো , চোখ তার বেশ বড় । কথা বলার সময় চোখে- মুখে হাসি উপচে পড়ে । দশ বারো বছর আগে হাং চৌ লৌহ ও ইস্পাত গোষ্ঠী কিছু সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় । তখন চু চি শেং সবেমাত্র মাধ্যমিক স্কুর থেকে পাশ করে নিজের গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজে নিয়োজিত ছিলেন । তার বাড়ি হাংচৌ থেকে এক শতাধিক কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত । চু চি শেং ছোটবেলা থেকেই শ্রমিক হতে চেয়েছিলেন । খবর পেয়ে তিনি সংশয় না করে দরখাস্ত করেছেন । পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি অবাধে হাংচৌ লৌহ ও ইস্পাত গোষ্ঠীতে যোগ দেন। তখন থেকে তিনি ইস্পাত ঢালাই কারখানায় একজন শ্রমিক হন । চু চি শেং আগে ইস্পাত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না । তিনি যখন প্রথমবার ইস্পাত ঢালাই কারখানায় এসে চারদিকে ছিটানো গরম তরল ইস্পাত ও প্রকান্ড ইস্পাত ঢালাইয়ের চুলো দেখলেন , তখন তার মনে একটু উত্তেজনা ছিল । তিনি বলেছেন , তখন আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম ।এমন দাউ দাউ করা তপ্ত আগুন আমি এর আগে কোনোদিন দেখি নি । চুলোর সামনে ইস্পাত ঢালাই করা একটি অত্যন্ত ময়লা ও পরিশ্রমী কাজ । বহু শহুরে শ্রমিকও এই কর্মস্থলে বেশি দিন কাজ করতে পারেন নি । তবে শিশুকাল থেকেই গ্রামে জীবনযাপন করেছেন বলে চু চি শেং পরিশ্রম সহ্য করতে পারেন । তিনি এই কর্মস্থলে থেকে যান । প্রথম দিকে তিনি ইস্পাত ঢালাই শ্রমিকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন । নানা ধরণের কাজের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি একজন আনুষ্ঠানিক ইস্পাত ঢালাই শ্রমিক হন । চুলোর সামনে কর্মরত একজন ইস্পাত ঢালাই শ্রমিক হিসেবে সর্বপ্রথমে আগুন দেখার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে । এই কৌশল আয়ত্ত করার জন্যে চু চি শেংকে বহু কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে । ১৭০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং দাউ দাউ করা আগুনের মুখে যে কোনো লোক কয়েক মিনিট থাকলে সারা গা ঘামে ভিজে যাবে । ইস্পাত ঢালাইয়ের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেয়ার জন্যে চু চি শেং সবসময় একবারেই টানা কয়েক ঘন্টা কাজ করেন । মুখ ও গায়ের ঘামের পরোয়া না করে তিনি সবদাই মনোযোগ দিয়ে চুলোর ভেতরের আগুনের নিরন্তর পরিবর্তনের দিকে নজর রাখেন । ৬ মাসের মধ্যে তিনি ভালোভাবে আগুন দেখার গুরুত্বপূর্ণ কৌশল আয়ত্ত করেছেন । অথচ চু চি শেং ক্ষান্ত হন নি । তিনি মনে করেন , একজন শ্রমিকের জন্যে কেবল শারিরীক শক্তি ও অনুশীলনের অভিজ্ঞতা থাকলে যথেষ্ট নয় , তার শিক্ষাগত মানও থাকতে হবে । তিনি বলেছেন , ক হিসেবে শ্রমের প্রাবল্যের দিক থেকে একজন শ্রমিককৃষকদের থেকে পৃথক । শ্রমিকদের অবশ্যই কিছু জ্ঞানার্জন করতে হবে , তাদের নির্দিষ্ট পেশাগত সামর্থ্য থাকতে হবে এবং পরিচালনার সামর্থ্যও থাকতে হবে । এসব হচ্ছে একজন যোগ্য শ্রমিক হওয়ার মৌলিক শর্ত । ইস্পাত ঢালাইয়ের কৌশল আয়ত্ত করার পরও চু চি শেং সন্তুষ্ট হন নি । তিনি উত্তম ইস্পাত ঢালাইয়ের জন্যে তার প্রচেষ্টা শুরু করেন । ইস্পাত ঢালাইয়ের কৌশল আরো ভালোভাবে আয়ত্ত করার জন্যে তিনি এই জাতীয় বহু বই কিনেছেন যাতে তার নিজের জ্ঞানের অভাব পুরণ করা যায় । অবসর পেলেই তিনি বই পড়তে থাকেন । বিশ্ববিখ্যাত মনোরম দর্শনীয় জায়গা - পশ্চিম হ্রদ তার কর্মস্থল হাংচৌতে থাকলেও তা ভালো করে উপভোগ করার সময় তার নেই । ইস্পাত ঢালাইয়ের প্রক্রিয়ায় চু চি শেং লক্ষ্য করলেন , বিভিন্ন কিস্তিতে ঢালাই হওয়া ইস্পাতের গুণগত মান ভিন্ন ভিন্ন হয় । কখনো কখনো ঢালাই হওয়া ইস্পাতে ফাটল দেখা দেয় । তিনি মনে মনে ভেবেছেন যে , এর কারণ কি ? এর কারণ খুঁজে বের করার জন্যে চু চি শেং বই পড়ার পাশাপাশি ইস্পাত ঢালাইয়ের প্রক্রিয়ার প্রতিটি পরিসংখ্যান লিখে নেন এবং তুলনা করেন । কোনো প্রশ্ন থাকলে তিনি অভিজ্ঞ প্রবীণ শ্রমিকদের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেন । পরবর্তীকালে ইস্পাত ঢালাই কর্মশালার সমস্ত প্রবীণ শ্রমিকের সংগে তাঁর পরিচয় হয় । ঘুর্ণায়মান চুল্লী কারখানায় কর্মরত প্রবীণ শ্রমিক লোও কাং শেংয়ের কাছে চু চি শেং প্রায় যান । তিনি বলেছেন , ছুটির পর চু চি শেং মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে আসেন । তিনি নানা সমস্যা নিয়ে আমার সংগে আলোচনা করেন । কোনো প্রশ্ন থাকলেও তিনি আমার কাছে সাহায্য প্রার্থণা করতে পছন্দ করেন । গভীর গবেষণার ভিত্তিতে চু চি শেং তার হাতে ঢালাই হওয়া ইস্পাতে ফাটল কমিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন । আজ হাংচৌ লৌহ ও ইস্পাত গোষ্ঠীতে ইস্পাত ঢালাইয়ের কার্যপ্রণালীতে ব্যাপক পর্যায়ে তাঁর উদ্ভাবিত বহু উন্নত পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে । কোনো কোনো পদ্ধতি সরাসরি তার নামে নামকরণ করা হয়েছে । কোনো কোনো পদ্ধতি বহুলাংশে ইস্পাতের বিশুদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং কিছু কিছু পদ্ধতি চুলো থেকে ইস্পাত বের হওয়ার সময় কমিয়ে দিয়েছে । তার মধ্যে একটি প্রযুক্তি তার কারখানায় ব্যবহারের মাধ্যমে ইস্পাতের মাসিক গড় উত্পাদন ২ হাজার টন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং প্রায় ৮ লাখ ইউয়ান বাঁচানো হয়েছে । তার কৃতিত্বের জন্যে ৬ বছর আগে চু চি শেং হাং চৌ লৌহ ও ইস্পাত গোষ্ঠীর ইস্পাত ঢালাই ১নং চুলো গ্রুপের প্রধান নিযুক্ত হন ।তিনি উপলব্ধি করেছেন ,ভালোভাবে এই গ্রুপ পরিচালনার জন্যে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাকে আরো অনেক জ্ঞান আহরণ করতে হবে । সুতরাং তিনি তিন বছর আগে নিজের খরচে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন এবং আড়াই বছরের মধ্যে সেখান থেকে ডিগ্রী লাভ করেন । এখন আপনারা শুনতে পাচ্ছেন " আমাদের শ্রমিকদের শক্তি আছে" নামে একটি গান । এটা চু চি শেংয়ের সবচেয়ে প্রিয় গান । এই গানের সুরের মধ্য দিয়ে আজকের অনুষ্ঠান শেষ হলো ।