উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতি হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী উইগুর জাতির সৃষ্ট একটি সংখ্যালঘু জাতির চিকিত্সা পদ্ধতি । গত ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতি বিকশিত হবার সংগে সংগে বিপুল সংখ্যক চিকিত্সা বিশেষজ্ঞের আবির্ভাব ঘটেছে । তাদের প্রচেষ্টায় উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতির প্রভাব সারা বিশ্বে বিস্তৃত হয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে একজন উইগুর চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ- ডাক্তার মেমেটি হাসিমু সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
৫৫ বছর বয়স্ক মেমেটি হাসিমু সিনচিয়াংয়ের হো থিয়েন জেলার একটি ডাক্তার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । শৈশবে তিনি উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতির বিষয়ে নিবিড় কৌতূহল প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন ,
তার চাচা খুব বিখ্যাত একজন স্থানীয় উইগুর ডাক্তার । যখন তিনি প্রাথমিক স্কুলে পড়েন , তখন তিনি ক্লাসের পর চাচার ক্লিনিকে যান । তিনি চাচার চিকিত্সা নৈপুণ্য দেখতে চান এবং তা অনুসরণ করতে চান । তিনি চাচার দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুসারে রোগীদের কাছে ওষুধও বিলি করেন । তখন থেকে তিনি উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতির ক্ষেত্রে সম্যক জানতে পেরেছেন ।
চাচার প্রভাবে মেমেটি হাসিমু বড় হবার পর একজন ডাক্তার হওয়ার অঙ্গীকার করেন । উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পাশ করার পর তিনি স্থানীয় একজন গ্রামীণ চিকিত্সক হন । তিনি দিনের বেলায় রোগীদের চিকিত্সা করেন আর রাতে চিকিত্সা গ্রন্থ পড়েন । চিকিত্সার প্রতি তার আগ্রহ আর একাগ্রচিত্তে অনুশীলন করার ফলে তার চিকিত্সার মান স্থিরগতিতে বেড়ে গেছে ।
২৫ বছর বয়সে মেমেটি হাসিমু সিনচিয়াংয়ের একটি বিখ্যাত উইগুর হাসপাতালে ভর্তি হন । তিনি যে সব চিকিত্সার জ্ঞান শিখেছেন , সে সব জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে চিকিত্সার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে । তার উদ্যোগে নতুন উইগুর ওষুধ উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয় । ফলে বৈচিত্র্যময় ওষুধ বেরিয়েছে ।
তা ছাড়া তিনি সক্রিয়ভাবে চিকিত্সা ও গবেষণার কাজেও ব্রতী হয়েছেন । তিনি তার গবেষনার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবিধ চিকিত্সা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন । তার কোনো কোনো প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক চিকিত্সা পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে । মেমেটি হাসিমু চীন ও পশ্চিমা চিকিত্সা পদ্ধতির সংগে ঐতিহ্যিক উইগুর চিকিত্সার পদ্ধতির সমন্বয় করে নানা রকম কষ্টদায়ক রোগ চিকিত্সার পদ্ধতি অন্বেষণ করেন । গত দশাধিক বছরে তিনি উইগুর ওষুধ ব্যবহার করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস প্রভৃতি রোগ চিকিত্সার পদ্ধতি অন্বেষণ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন ।
বিংশ শতাব্দির নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভ সিনচিয়াংয়ের উরুমচি সফর করেন । সে সময় তিনি হঠাত্ রোগে আক্রান্ত হন । উইগুর চিকিত্সার পদ্ধতির ফলপ্রসূতা জেনে তিনি খুব খুশি হন । তিনি এই পদ্ধতির সাহায্যে নিজের সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে চান । মেমেটি হাসিমু তার চিকিত্সার দায়িত্ব নেন । তিনি তা স্মরণ করে বলেছেন ,
তিনি মাঝে মাঝে টেলিভিশনে নাজারবায়েভকে দেখেন । তাকে চিকিত্সা করার সুযোগ পেয়ে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হন । অবশ্যই তিনিও খুব উচ্ছ্বসিত হন । একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবহার করে তাকে পরিসেবা করেন , এই দায়িত্ব ও কর্তব্য খুব ভারী ।
মেমেটি হাসিমুর চিকিত্সার নৈপুণ্য ও দক্ষতা প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভের প্রশংসা পেয়েছে । এই খবর শুনে অধিক থেকে অধিকতর বিদেশী বন্ধু-বান্ধব উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতির প্রতি প্রগাঢ় কৌতূহল ব্যক্ত করেন । মেমেটি হাসিমু লক্ষ্য করেন যে , বিশ্বে উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতি জনপ্রিয় করার জন্য এটি একটি ভাল সুযোগ । ফলে তিনি ইংরেজী ও উর্দু শিখতে শুরু করেন এবং এই দুটো ভাষা নিপুণভাবে আয়ত্তকরতে চেষ্টা করেন । তিনি বলেছেন ,
তার একটিমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে , সিনচিয়াংয়ের উইগুর চিকিত্সার পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ আর সম্প্রসারিত করা , যাতে আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপায়ে সারা পৃথিবীতে উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতি প্রচলিত হয় ।
ভাষার আনুকূল্যের ওপর নির্ভর করে মেমেটি হাসিমু এশিয়া , ইউরোপ , উত্তর আমেরিকা আর আফ্রিকার বহু দেশ সফর করেছেন । তিনি চিকিত্সার আদান প্রদান এবং বিদেশে উইগুর চিকিত্সার পদ্ধতি জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ।
এখন মেমেটি হাসিমু চিকিত্সক মহলের একজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞে পরিণত হয়েছেন । তার সুচিকিত্সায় প্রচুর রোগীর সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়েছে । এর জন্যে রোগীরা অশেষ কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন । এজিজ মুহাম্মেদ বলেছেন ,
ডাক্তার মেমেটি আমার স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন । তার চিকিত্সার পদ্ধতি অসাধারণ আর কার্যকর । আমি তার সুচিকিত্সা আর প্রযত্নের ওপর খুব আস্থাবান ।
মেমেটির বেশ কয়েকজন সহকর্মী বিদেশে চাকরি করেন । তাদের আয় খুব বেশি । বন্ধু-বান্ধবরাও মেমেটিকে বিদেশে ডাক্তারী করতে পরামর্শ দিয়েছেন । কিন্তু তিনি এই পরামর্শ গ্রহণ করেন নি । তিনি মনে করেন যে , সিনচিয়াং তার জন্মস্থল । এই জন্মভূমিতে থাকা আর চিকিত্সা ব্রতে অবদান রাখার দায়িত্ব তার আছে ।
সিনচিয়াংয়ের চিকিত্সক মহলে তিনি অন্যদের উইগুর চিকিত্সার পদ্ধতি শেখাতে আগ্রহী । তিনি বহু ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষাদান করেছেন এবং বেশ কিছু অল্পবয়সী উইগুর চিকিত্সক লালন পালন করেছেন । গুলিনাজি আবদুরামান তাদের মধ্যে একজন । তার চোখে মেমেটি হাসিমু একজন ভাল ডাক্তার । তিনি একজন যোগ্য শিক্ষকও। তিনি বলেছেন ,
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিমা চিকিত্সা পদ্ধতি শিখেছি । স্নাতক হবার পর প্রথমে উইগুর চিকিত্সা সম্বন্ধে বেশি জানতাম না । এই দুটো চিকিত্সা পদ্ধতির মধ্যে ব্যাপক পাথর্ক্য আছে । শিক্ষক মেমেটি আমাকে খুব সহিষ্ণুতার সংগে শেখান । বাস্তব অনুশীলনে আমি ধীরে ধীরে উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতি আয়ত্ত করেছি । এখন উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতির প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেড়েছে ।
বর্তমানে মেমেটি আর অন্যান্য উইগুর চিকিত্সা বিশেষজ্ঞদের প্রচেষ্টায় সারা পৃথিবীতে উইগুর চিকিত্সা পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়েছে । ডাক্তার মেমেটি আরো বেশি রোগীর আরোগ্য সাধনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।
|