ফ্রান্সের গ্রামের দৃশ্য অতি সুন্দর। একের পর এক পরিষ্কার ও সুন্দর গ্রাম মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলে। নতুন জ্বালানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা ও গ্রামাঞ্চলের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা হলো ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চল এত সুন্দর দেখানোর প্রধান কারণ।
জানা গেছে, কয়েক দশক আগে ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চল প্রধানত কাঠ, কয়লা, প্রাণীদের বর্জ্য ও বিভিন্ন বাজে জিনিষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বিপুল পরিমান জিনিস জ্বালিয়ে মাত্র অল্প শক্তি পাওয়া যায় এবং পরিবেশ দূষিত হয়। ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলের জন্য টেকসই উন্নয়ন নীতি স্থাপিত হওয়ার পর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের শক্তিসম্পদ যথাযোগ্য ব্যবহার ফ্রান্স সরকারের প্রধান কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। আর গ্রামের শক্তিসম্পদ সংগঠন উন্নয়ন করা এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ফ্রান্স সরকার এ বিষয়ে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে এখন আমি শ্রোতা বন্ধুদের তা জানাবো।
প্রথমত, সরকার গ্রামাঞ্চলের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা নির্মাণের উপর অর্থ-বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তাতে ফ্রান্সের বিদ্যুত নেটওয়ার্ক সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়েছে। কৃষি শিল্পেরউপর সরকারের বিভিন্ন রকমের ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে কৃষকদের বিদ্যুত ব্যবহারের সামর্থ সুনিশ্চিত করেছে। বর্তমানে ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত হিটিং ও রান্না ব্যবস্থার প্রধান জ্বালানিতে পরিণত হয়েছে। যেমন পশ্চিম ফ্রান্সের বোদেউ অঞ্চলের গ্রামে কৃষকরা আর কাঠ ও গোবর জ্বালাবে না।
দ্বিতীয়ত, ফ্রান্স সরকার গ্রামাঞ্চলে প্রাণী-সংক্রান্ত শক্তিসম্পদ উন্নয়ন সমর্থন করে। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে ফ্রান্স সরকার মিথেন গ্যাস গ্রামাঞ্চলে উত্পাদনের ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে। বর্তমান এই ক্ষেত্রে ফ্রান্স সরকার আরো অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার ত্বরান্বিত করে প্রাণীদের বর্জ্য ও অন্যান্য বাজে জিনিস দিয়ে জৈব-শক্তিসম্পদ উত্পাদনের চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের সমর্থনে এ ক্ষেত্রে অনেক নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন হয়েছে।
তৃতীয়ত, শক্তি যোগাতে পারে এমন শস্য আরো বেশী চাষ করা। এই ব্যবস্থায় চাষের ভূমি আরো যথাযোগ্য ব্যবহার করা যায় এবং শক্তি পাওয়ার সূত্র আরো বিস্তারিত হয়। গত বছর থেকে ফ্রান্স সরকার এই পরিকল্পনা শুরু করেছে। তার লক্ষ্য হলো ২০০৭ সালের আগে ফ্রান্সের জৈব-জ্বালানির উত্পাদন পরিমান ২০০৫ সালের চেয়ে তিনগুণ বাড়ানো, তাতে ইউরোপীয় দেশের মধ্যে জৈব-জ্বালানি উত্পাদন ক্ষেত্রে ফ্রান্স প্রথম স্থানে দাঁড়াবে। তখন ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে জৈব-জ্বালানি উত্পাদনের জন্য চাষ করা শস্যের আয়োতন ১ বিলিয়ন হেক্টর হবে।
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের জীবনযাপনের ধারণা পরিণত করা এবং শহরাঞ্চলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হলো গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন নীতির প্রধান অংশ। এর মধ্যে জৈব-জ্বালানির পরিবর্তন শুধু এদের একটি পক্ষ।
ফ্রান্সে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন কিন্তু শুধু কৃষি বিভাগের কাজ নয়। গ্রামাঞ্চলের জন্য প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সামর্থের বিষয় শিল্প, শক্তিসম্পদ, যোগাযোগ, পরিবেশ ও অর্থ ইত্যাদি বিভাগের দলিলে প্রায় দেখা যায়। ফ্রান্সের কিছু সংবাদ মাধ্যম ও সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ের আলোচনা ও মতামত প্রায় দেখা যায়। এসব আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে আরো রয়েছে শহর ও গ্রামাঞ্চলের পার্থক্য বিমোচন করা, শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রক্রিয়ায় গ্রামাঞ্চলের ভূমিকা রক্ষা করা ইত্যাদি। শিল্প উন্নয়নের সাফল্য ব্যবহার করে গ্রামাঞ্চলের আধুনিকায়ন ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে ক্রমাগত ফ্রান্সের জনগণের মতৈক্য হয়েছে।
|