মানুষের জীবনে একটি তত্পরতা সারা জীবনে থাকে, তা মানুষের জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় দখল করে। আপনি জানেন তা কি? আচ্ছা, ঠিক বলেছেন, ঘুম। ঘুমের সঙ্গে স্বাস্থ্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। পর্যাপ্ত ও উচ্চ মানের ঘুম স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি ভিত্তি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঘুম সংক্রান্ত জ্ঞান ভালোভাবে জানেন না। যেমন প্রতিদিন কত ঘন্টা ঘুমালে ভাল? উচ্চ মানের ঘুম মানে কি? দুপুরে ঘুমানো ভাল কিনা?
প্রথমে ঘুম সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য আপনাদের জানাবো। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, রাতের ঘুম চার থেকে পাঁচটি পর্ব নিয়ে গঠিত হয়। প্রতি পর্বের তিন'টি ভাগ আছে। প্রথমটা হলো অগভীর ঘুম। দ্বিতীয়টা হলো গভীর ঘুম। তৃতীয় ভাগ হলো চোখের দ্রুত সঞ্চরণ। তারপর আবার অগভীর ঘুম শুরু হয়।
এই মৌলিক জ্ঞান জেনে আমরা উপরোক্ত প্রশ্নগুলো দেখি। সাধারণত প্রতিদিন কত ঘন্টা ঘুমলে যথেষ্ট? চীনের নিদ্রা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক চাং চিং সিং বলেছেন:
"ভিন্ন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ঘুমের সময় ভিন্ন। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য ৭.৫ ঘন্টা যথেষ্ট। কিন্তু ৬ থেকে ৯ ঘন্টাও স্বাভাবিক । যদি পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় সতেজ ও ঝরঝরে বোধ করে বুঝতে হবে ঘুম পর্যাপ্ত হয়েছে।"
তাহলে কিভাবে উচ্চ মানের ঘুম সুনিশ্চিত করা যায়? অধ্যাপক চাং বলেছেন,
"যদি আপনার মন ও শরীর আরামে থাকে তাহলে সহজেই গভীর ঘুম সুনিশ্চিত করা যাবে। রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়লে ভাল। মধ্যরাতের আগে মানুষের গভীর ঘুম হয়, তা আমাদের শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে জড়িত। খুব দেরি ঘুমালে গভীর ঘুমের সময় নিশ্চয় খুব কম হবে।"
তিনি আরো বলেছেন, দুপুরে কিছু ক্ষুণ ঘুমানো একটি খুব ভালো অভ্যাস। কারণ সকালে উঠা থেকে রাতে ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত এক খুব দীর্ঘ সময়পর্ব। এই সময় মানুষ শক্তি ও মনোযোগ দিয়ে অনেক কাজ করেন। দুপুরে একটু বিশ্রাম নিতে পারলে শরীরের জন্য ভাল হবে। কিন্তু বেশী সময় ঘুমানো ভাল নয়।
"এখানে মনোযোগ রাখা উচিত, দুপুরে ১০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমলে যথেষ্ট। সময় বেশী হলে গভীর ঘুম হয়, তাহলে উঠার সময়ে একটু মাথা ঘুরবে। কারণ গভীর ঘুম হলে মানুষ প্রায় বেঁহুস হয়ে পড়ে। তাই পুরোপুরি জেগে উঠতে খুব বেশি সময় লাগে।"
এবার আমরা ঘুম সম্পর্কে কিছু সমস্যার কথা বলবো। একটা হলো নাক ডাকা। জানা গেছে, চীনে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মানুষ নাক ডাকার সমস্যার সম্মুখীন। মিস্টার তেং বলেছেন:
"আমার নাক ডাকার ইতিহাস প্রায় ৬ বছর হয়েছে। আমার ঘুমের গুণগতমান ভালো নয়। দিনে মাথা ঘুরে। দীর্ঘ দিন ধরে আমার স্মরণ শক্তি কমে গেছে।"
ডাক্তার হান ফাং বলেছেন, নাক ডাকার সময়ে মানুষের শ্বাস প্রশ্বাস মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। তা এক রকম রোগে পরিণত হতে পারে। এখন শ্বাস-বন্ধের চিকিত্সা পদ্ধতি প্রধানত শ্বাস মেশন ব্যবহার করা এবং অপারেশন করা।
অনিদ্রার সমস্যাও গুরুতর। অনিদ্রা মানে ঘুমের সময় যথেষ্ট নয় বা তার মান নিম্ন বলে দিনের বেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। চীনে প্রায় ৪০ শতাংশ লোকের অনিদ্রা সমস্যা আছে। এই রোগের কারণ অনেক, যেমন মানসিক সমস্যা, পরিবেশের প্রভাব ইত্যাদি। তাই প্রথমে অনিদ্রার কারণ খুঁজে বের করতে হবে, তারপর চিকিত্সা করতে হবে। এই রোগের চিকিত্সা যত তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারলে ততই ভাল। এবং অনিদ্রা হলে নিজে ঘুমের ওষুধ কিনে খাওয়া ভাল নয়, বরং ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হয়।
|