এই বছরের প্রথম দিকে, চীনের পর্যটন বিভাগ চলতি বছরের পর্যটনের প্রসঙ্গ প্রকাশ করেছে, তা হচ্ছে "নতুন গ্রাম, নতুন পর্যটন, নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন ফ্যাশন"। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টাটকা বাতাস, সরল মানুষ, সাংস্কৃতিক সম্পদে-সমৃদ্ধ পুরাকীর্তি, সুন্দর প্রাকৃতিক পল্লী অঞ্চল দিনে দিনে অধিক থেকে অধিকতর শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের অভ্যন্তরীন পযর্টনের প্রথম বাছাইয়ে পরিণত হয়েছে।
পল্লী পর্যটনের অর্থ হচ্ছে গ্রামাঞ্চলকে গন্তব্য হিসেবে পর্যটন প্রকল্প। গ্রাম বলতে আপনার হয়তো গ্রামীন সংস্কৃতি, গ্রামীন জীবন এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি মনে পড়বে। কিন্তু চীনের পল্লী পর্যটন কেবল চীনের গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখা তা নয়।
সবাই জানেন, চীন পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস সম্পন্ন এক প্রাচীন সভ্যতার দেশ। তার সুদীর্ঘ ইতিহাস এক কৃষি সংস্কৃতির উন্নয়নের ইতিহাসও বটে। চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি গ্রামাঞ্চলে গভীরভাবে বিরাজমান। আধুনিককালে পাশ্চাত্য বিশ্বের শিল্পের সভ্যতা চীনে প্রবেশের পর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চল অপেক্ষাকৃতভাবে আধুনিক সভ্যতার কম আঘাতের শিকার হয়েছে, তাই সেখানকার ঐতিহ্যিক সভ্যতা আরো বেশি সংরক্ষিত হয়েছে।
চীনের বহু গ্রামাঞ্চলে প্রথা, ঐতিহ্যিক অপেরা, লোকসংগীত সহ বেসরকারী শিল্পকলা, বা প্রাচীনকালের নকশা বিশিষ্ট বাড়ীঘর, মন্দির এবং গ্রাম প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গ্রামাঞ্চলে গিয়ে ভ্রমণ করা বিদেশী পর্যটকদের চীনে গভীর পর্যটনের এক ভালো বাছাই বলা যায়।
চিন অপেরা হচ্ছে তিন শতাধিক বছর ইতিহাস সম্পন্ন এক রকম স্থানীয় অপেরা। নামকরা পেইচিং অপেরার তুলনায় চিন অপেরার ইতিহাস আরো দীর্ঘ। এখনো চিন অপেরা শানশি প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং ছুটির দিনে জনসাধারণের অন্যতম প্রধান বিনোদন মাধ্যম। শানশিতে কেবল চিন অপেরা আছে তা নয়, সেখানে প্রাচীনকালের ধনী ব্যবসায়ীদের বাড়ীঘরও সুপরিচিত, যেমন ছাও পরিবারের উঠান হচ্ছে এর অন্যতম। ছাও পরিবারের উঠান চীনে নাম করা হয়েছে, এর মূল কারণ হচ্ছে চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ই মো গত শতাব্দীর ৯০'র দশকের প্রথম দিকে এখানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চলচ্চিত্র "লাল লন্ঠন উঁচুতে লাগানো"তৈরি করেছেন।
এই বছরের প্রথম দিকে, আমাদের সংবাদদাতা বিশেষ করে ছাও পরিবারের উঠানে গিয়েছেন। একই দিনে আরো পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটক সংবাদদাতার সঙ্গে সেখানে পৌঁছেছেন। পর্যটকরা এই প্রাচীন উঠানে অতীতে সংঘটিত কিংবদন্তী কাহিনী খুঁজেছেন। ছাও পরিবারের উঠানে পরিবেশিত লোক-প্রথা ও অপেরা পর্যটকদের গভীরভাবে আকর্ষণ করেছে।
স্থানীয় পথপ্রদর্শক মা শাং সংবাদদাতাকে বলেছেন, "শানশির গ্রামীন সংস্কৃতি খুব সমৃদ্ধ। সেখানে কেবল প্রাচুর্যময় লোক-প্রথা, অপেরা, নৃত্য প্রভৃতি আছে তা নয়, বরং গ্রাচীন গ্রাম, গ্রাচীন বাড়ীঘর, প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এ সব মিলিয়ে হচ্ছে শানশি প্রদেশের পল্লী পর্যটন উন্নয়নের প্রধান সম্পদ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এক্সপ্রেস সড়কপথের নেট এবং জেলা পর্যায়ের সড়কপথের নেট দ্রুতই নির্মিত হয়েছে, এটাও পল্লী পর্যটনের জন্য সুবিধাজনক শর্ত সরবরাহ করেছে।"
চীনে শানশির মতো এমন সমৃদ্ধ "পল্লী পর্যটন" সম্পদ অধিকারী আরো অনেক জায়গা আছে। যেমন দক্ষিণ চীনের বিরাটাকারের জলসেচ প্রকল্প--- তিন-গিরিখাত প্রকল্প নির্মাণের জন্য সেখানের ঈ চাং এক জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে। গত বছর ১০ লাখের বেশি পর্যটক তিন-গিরিখাত ভ্রমণ করেছেন।
তা ছাড়া, সংখ্যালঘু জাতির লোক-প্রথা এবং গ্রামাঞ্চলের বিশেষ দৃশ্যও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থিত তিব্বত, কুয়াইচৌ, ইউন্নান প্রভৃতি অঞ্চল সর্বদাই পর্যটনের হিটপয়েন্ট , এর এক প্রধান কারণ হচ্ছে সেখানের গ্রামাঞ্চল আকর্ষণীয় । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের উত্তরাঞ্চলও তৃণভূমি ও মরুভূমির জন্য পর্যটকদের সমাদর পেয়েছে।
পল্লী পর্যটন লোকজনকে নানা নতুন অনুভব দেয়ার সাথে সাথে তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা আছে , তা হচ্ছে বিশ্রাম। শহরের নিকটবর্তী গ্রামে গিয়ে কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে পারেন, হয়তো কোন্ বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান না দেখলেও , কেবল টাটকা বাতাস গ্রহণ করেন, কৃষকের ভাত খান, অথবা শাকসব্জি ও ফল সংগ্রহের কাজ করতে পারেন, এটা বহু শহরবাসীদের বিনোদনের এক পছন্দীয় কাজে পরিণত হয়েছে।
চীনে সপ্তাহশেষে শহরের আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে গিয়ে ভ্রমণ করাকে "কৃষকের বাড়ীর আনন্দ" বলা হয়। পেইচিংয়ে প্রতি বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সুন্দর আবহাওয়ার সপ্তাহশেষে নিজের গাড়ি করে পেইচিংয়ের উপকন্ঠ বা পেইচিংয়ের প্রতিবেশী হোপেই প্রদেশে ভ্রমণ করার লোক অনেক। সড়কপথে প্রায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ি বহর লম্বা ড্রাগনের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটন এজেন্সির অনুমান অনুযায়ী, পেইচিংয়ে "কৃষকের বাড়ীর আনন্দ" ভ্রমণের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রতি বছর দশ লক্ষের বেশি।
এই প্রসঙ্গে হোপেই প্রদেশের পর্যটন বিভাগের কর্মকর্তা ছাই লি মিন সংবাদদাতাকে বলেছেন, হোপেই প্রদেশ বসন্তকালে ফুল দেখা, গ্রীষ্মকালে জমি চাষ করা, শরত্কালে ফুল সংগ্রহ করা প্রভৃতি পল্লী পর্যটন পর্যটকদের পছন্দ হয়েছে। কৃষকের বাড়ীতে থাকা, কৃষকের খাবার খাওয়া এবং কৃষি কাজ করা এমন কৃষকের জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করা এক নতুন ফ্যাশনে পরিণত হচ্ছে।"
|