v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-19 16:26:00    
সিনচিয়াংয়ের  উইগুর  দড়াবাজিকর

cri
    দাওয়াজি চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এক ধরনের প্রাচীন দড়াবাজি । এটিকে সাধারণতঃ রশি-হাঁটা বলে । বিস্ময়কর , বিপদজনক আর আবেগপূর্ণ খেলার নৈপুণ্যের দরুণ উইগুর জাতির লোকদের চোখে দাওয়াজিকে বীরদের খেলা বলে মনে করা হয় । আবুলহাদি মাজেন স্থানীয় শ্রেষ্ঠ দাওয়াজি শিল্পীদের মধ্যে একজন । তিনি মাটি থেকে ২৮ মিটার উঁচুতে ইস্পাতের রজ্জু বেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলতে পারেন এবং একটানা ৩৮ দিন ধরে এই রজ্জুর ওপর থাকতে পারেন । তিনি দড়া-হাঁটার ক্ষেত্রে ৭টি গিনিস বিশ্ব রেকর্ড ভংগ করেছেন ।

    মাজেনের বয়স ৩৫ বছর । দাওয়াজি আর সিনচিয়াংয়ের নাচ গান প্রসংগে তিনি খুব উচ্ছ্বসিত । তিনি আনন্দের সংগে ইটওয়াফ নামে উইগুর জাতির এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজালেন । তিনি আমাদের জন্য মোকাম নামে একটি লোক সংগীত গেয়েছেন । রিওয়াব্ উইগুর জাতির এক ধরনের জনপ্রিয় বেহালা । তার দৈর্ঘ্য ১ মিটার , বেহালার নিম্নভাগ ছাগলের চামড়া দিয়ে বাঁধানো । বেহালার সুর খুব সুমধুর ।

    সিনচিয়াংয়ে দড়াবাজির একটি খেলা হিসেবে রশি-হাঁটা খুব জনপ্রিয় , তার ইতিহাস ৩ হাজার বছরের । যুদ্ধ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার দরুণ এই খেলা প্রায় বিলুপ্তির  পথে পড়েছিল । খুশির ব্যাপার এই যে , তা সিনচিয়াংয়ের একটি বংশ প্রজন্মান্তরে ধরে রেখেছে । গত কয়েক বছরে সিনচিয়াংয়ের দাওয়াজি শিল্পীদের প্রচেষ্টায় এই প্রাচীন লোকশিল্প আবারও বিশ্ব জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে । দড়ায় নানা রকম সিস্ময়কর নৈপুণ্য দেখানোর সময় শিল্পীর কোনো আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই । বাঁশের দন্ড তার হাতে , তিনি মাটি থেকে দশাধিক এমন কি কয়েক ডজন মিটার উঁচুতে দড়ায় নানা রকম দুষ্কর প্রদর্শন করেন ।

    আবুলহাদি মাজেন ছোট বেলা থেকে বিপদজনক খেলা পছন্দ করেন । ৭ বছর বয়সে দাওয়াজি শিল্পীদের আনুষ্ঠান দেখার জন্য তিনি বাবার সংগে জেলা শহরে যেতেন । তিনি তাদের বীরত্বে খুব মুগ্ধ হন । এর সংগে সংগে তিনি একজন দাওয়াজি শিল্পী হওয়ার সংকল্প নেন ।

    যখন মাজেনের বয়স ১৭ বছর , তখন তিনি স্থানীয় দাওয়াজি দলের একজন দড়াবাজিবিদ হয়েছেন । তিনি নানা রকম দড়াবাজি শিখতে শুরু করলেন । দলের একজন প্রবীণ দাওয়াজি শিল্পীর পরিচালনায় আবুলহাদি মাজেন তার দড়াবাজি জীবন শুরু করলেন । তিনি এই প্রাচীন দড়াবাজির নৈপুণ্য সম্প্রসারিত করতে চেয়েছেন ।

    এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য মাজেন নিরন্তর অনুশীলন আর পরিবেশন করেন । তার খেলার নৈপুণ্য ক্রমাগত উন্নত হয়েছে । যত বিপদজনক , যতই কঠিন হোক না কেন , তিনি কখনো চর্চা পরিত্যাগ করেন নি ।

    সাত বছর আগে সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমচির একটি পার্কে মাজেন দড়াবাজি পরিবেশন করার অসাবধানে উপর থেকে মাটিতে একেবারে পড়ে যান । তার হাঁটু আর পায়ের কব্জির বহু জায়গায় হাড় ভেঙ্গে গেছে । তিনি তত্ক্ষনাত্ অজ্ঞান হয়ে পড়েন । ডাক্তারদের যথাসাধ্য চিকিত্সায় মাজেন মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পেয়েছেন । কিন্তু ডাক্তার বলেছেন যে , তিনি এই জীবনে আর কোনোদিন দাওয়াজি খেলতে পারবেন না ।

    সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হবার পর মাজেন তা মানেন না । তিনি তার দাওয়াজি খেলার জীবন অকালে শেষ করতে চান না । বরং তা পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেন ।

    তখন তিনি মনে করেন যে , দাওয়াজি খেলার নৈপুণ্য যত ভালই হোক না কেন , একজন দড়াবাজিকর হিসেবে অবসর নেয়া অপরিহার্য । তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিলেন যে , অবসর নেয়ার আগে তিনি কয়েকটি বিশ্ব গিনিস রেকর্ড ভঙ্গ করবেন । তিনি দড়াবাজি ব্রত আর চীনা জাতির জন্য মর্যাদা জয় করতে চেয়েছেন ।

    যদিও তার সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়েছে , কিন্তু তার হাড়ের যে যে জায়গায় ভেঙ্গে গেছে , সে সব জায়গায় মাঝে মাঝে সাংঘাতিক ব্যথা অনুভব করতেন । মেঘলা দিনে তার হাঁটুর কব্জিতে যন্ত্রণা হতো । এতে তার স্ত্রী খুব উদ্বেগ প্রকাশ করেন । তিনি স্বামীকে আবারও দাওয়াজি চর্চার বিরোধিতা করেন ।

    কিন্তু তখন মাজেন বিশ্ব রেকর্ড ভঙ্গ করাকে তার আজীবন স্বপ্ন বলে মনে করতেন । তিনি গোপনে চর্চা শুরু করেন । এক বছরে চর্চা পুনরুদ্ধার হবার পর তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে ইস্পাতের রজ্জুতে আবারও দাওয়াজি খেলতে সক্ষম হন । তার সংগীরা তার সাফল্যের জন্য উদ্দীপ্ত হয়েছেন ।

    গত বছর ছিল সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । এ উপলক্ষে আবুলহাদি মাজেন সাফল্যের সংগে দাওয়াজির বিশ্ব রেকর্ড ভংগ করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    দড়াবাজি শিল্পী দলের সংগীদের সমর্থনে তিনি ৭ বছর ধরে দাওয়াজির ৭টি বিশ্ব রেকর্ড ভংগ করেছেন । স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে একটি উপহার হিসেবে তার স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়িত হয়েছে ।

    বিশ্ব রেকর্ড ভংগ করার জন্য তিনি দড়ার ওপরে একটানা ৩৮ দিন অবস্থান করেছেন । দিনের বেলায় তিনি মাটি থেকে ২৮ মিটার উঁচুতে ইস্পাত দড়ার ওপরে নাচ করেন । রাতে দড়ার এক প্রান্তে অবস্থিত একটি ছোট কক্ষে ঘুমান ।

    সিনচিয়াং দড়াবাজিকর সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়্যু থিয়েন ইয়্যুন বিশ্ব রেকর্ডের চ্যালেঞ্জার মাজেনের দাওয়াজি খেলা দেখেছেন । তিনি স্মরন করে বলেন , ৩৮ দিনে মাজেন প্রতিদিন দড়ার ওপরে যেমন ছ'ঘন্টারও বেশি সময় হেঁটে চলেন , তেমনি রিওয়াব বাদ্যযন্ত্র বাজান । তিনি দড়ার ওপরে মাঝে মাঝে লাফাতেও পারেন । তিনি বলেছেন ,

    দড়ার ওপরে একটানা ৩৮ দিন থাকা আর হেঁটে চলা খুব কঠিন । দর্শকদের চোখে তা অত্যন্ত বিপদজনক বলে মনে হয় । বিশেষ করে রাতে তার কাছে কোনো আলোকসজ্জা আর আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছিল না ।

    বিশ্ব রেকর্ডের চ্যালেঞ্জার মাজেন বহু বাধা-বিঘ্ন কাটিয়ে উঠেছেন । এতে তিনি খুব গৌরবান্বিত বোধ করেছেন ।

    মাজেন এখনো প্রতি দিন দাওয়াজি চর্চা করে থাকেন । তিনি এই খেলার আরো বেশি কঠিন আর উত্তেজনাকর নৈপুণ্য সৃস্টি করতে চেয়েছেন ।