v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-19 11:46:12    
বিশ্ব ভারতীর চীনা ভবনঃ দুই প্রাচীণ সংস্কৃতির মিলন-মোহনা

cri

 ভারতে যারা চীনের সংস্কৃতি গবেষণার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বা চীনা ভাষা শিখছেন , তাদের কাছে শান্তি নিকেতনের চীনা ভবনের নাম সুপরিচিত । এই বিদ্যালয় হচ্ছে চীন-ভারত সংস্কৃতির যোগসূত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু এবং চীনা ভাষা আয়ত্তকারীদের গড়ে তোলার একটি দোলনা ।

 কলকাতা থেকে ট্রেনে করে উত্তর-পশ্চিম দিকে তিন ঘন্টা চললে শান্তিনিকেতনে যাওয়া যাবে । বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা এই জায়গার এই নাম দিয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার জয়লাভের পর এখানে সুবিখ্যাত বিশ্ব ভারতী প্রতিষ্ঠা করেন ।

 শান্তিনিকেতন অনেকটা চীনের সাধারণ জেলা শহরের মত । তার বাজার খুবই সরগরম হলেও বিশ্ব ভারতী ও তার আশেপাশের জায়গায় সবসময় এক রকম শান্ত পরিবেশ বিদ্যমান থাকে ।

 যখন আমাদের সংবাদদাতা বিশ্ব ভারতীর চীনা ভবনে গেলেন , তখন দেখতে পেলেন , দুজন ভারতীয় ছাত্রী শিক্ষা ভবনের সামনের মাঠে চীনের থাং রাজবংশের কবিতা আবৃত্তি করছেন । তারা আমাদের সংবাদদাতাকে এই ভবনের অধ্যক্ষের অফিসে নিয়ে গেলেন । অধ্যক্ষ নজিস বলেছেন , ১৯৩৭ সালের ১৪ এপ্রিল চীনা ভবন চালু হয় । এই ভবন ছিল বিশ্ব ভারতীর শিক্ষা ভবনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভবন । প্রায় ৭০ বছর পরও বিশ্ব ভারতীতে চীনা ভবনের স্থান অদ্বিতীয় ।

 অধ্যাপক নজিস বলেছেন , চীনা ভবনের জন্ম ছিল চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের একটি ফলশ্রুতি । রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই চীনের সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহ বোধ করতেন । চীন ও ভারতের মধ্যে আবার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সেতু নির্মাণ ছিল তাঁর বহু বছরের স্বপ্ন । প্রবাসী চীনা পন্ডিত থান ইয়ুন শানও ঠাকুরের মত একই স্বপ্ন দেখতেন । তখন তিনি বিশ্ব ভারতীতে শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন । রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে তিনি চীনা ভবন খোলার উদ্যোগ নিলেন । তিনি চীন ও ভারতের মধ্যে বহুবার আসা-যাওয়া করে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ভারতীতে চীনা ভবনটি চালু করেন ।

 চীনা ভবনের প্রতিষ্ঠা চীন-ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে এবং তখন থেকে চীন ও ভারতের মধ্যে পরস্পরের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার এক উত্তাল জোয়ার বয়ে যায় । থান ইয়ুন শান ছিলেন চীনা ভবনের প্রথম অধ্যক্ষ । তিনি এই বিদ্যালয়ের জন্যে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন , তা হলো : চীন ও ভারতের বিদ্যা নিয়ে গবেষণা চালানো , চীন-ভারত সংস্কৃতির যোগাযোগ সুগম করা , চীন-ভারত ভাবানুভূতি সম্পৃক্ত করা ,চীন-ভারত জাতিকে যুক্ত করা , মানবজাতির জন্যে শান্তি প্রতিষ্ঠাকরা এবং বিশ্ব সম্প্রীতি ত্বরান্বিত করা । থান ইয়ুন শানের পরিচালনায় চীনা ভবন চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ।

 চীনা পন্ডিতদের মধ্যে যারা ভারতের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী , তারা এখানে পড়তে পছন্দ করেন । চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী ভারতীয় পন্ডিতরাও এখানে পড়তে ভালোবাসেন । সুতরাং চীনা ভবনের বিদ্যাগত পরিবেশ খুবই ভালো । এই ভবনের অধ্যাপক ডক্টর ইয়ু তে সোও আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , চীনের সুবিখ্যাত পন্ডিত ও চিত্রকর সুই চি মোও , সুই পেই হুং , থাও সিং চি ,চাং তা ছিয়ান , ছাং রেন সিয়া, চিন কে মু, উ সিয়াও লিং , তিং সি লিন , চেং চেন তে ও চৌ আর ফু পর পর শান্তিনিকেতনের চীনা ভবনে সফর করেছিলেন বা স্বল্পকালীন কাজ করেছিলেন । তাদের মধ্যে চীনের সুপরিচিত চিত্রকর সুই পেই হুং এখানে এক বছর ধরে কাজ করেন এবং রবীন্দ্রনাথের সংগে সুগভীর মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন । সেখানে তিনি ঠাকুরের জন্যে বিপুল সংখ্যক ছবি এঁকেছিলেন। চীন ও ভারতের সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে তাঁদের মৈত্রীর কাহিনী সবার মুখে মুখে প্রচলিত ।

 চীনা ভবনের শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্যে সবচেয়ে অবিস্মরনীয় ঘটনা ছিল , ১৯৫৭ সালের ৩০ জানুয়ারী চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ও মার্শাল হো লুং ভারতে তাঁদের রাষ্ট্রীয় সফরকালে শতব্যস্ততার মধ্যেও বিশেষভাবে চীনা ভবন পরিদর্শন করতে যান । বিশ্ব ভারতী প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইকে অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে । স্বদেশে ফিরার পর প্রধানমন্ত্রী চৌ এই ভবনকে দশ হাজারেরও বেশি বইপত্র উপহার দিয়েছেন। এই বইপত্র এখনো চীনা ভবনের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে ।