v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-19 11:37:58    
নবোদ্যমে চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জোরদার

cri

 চীনের প্রাচীন ছিন রাজবংশের আমল থেকে চীন-ভারত আদান-প্রদান শুরু হয় । চীনের পূর্ব ও পশ্চিম হান রাজবংশের সময়ে দু দেশের মধ্যে আরো ঘন ঘন বিনিময় হয়। চীনের সুই ও থাং রাজবংশের আমলে এই আদান-প্রদান তুঙ্গে ওঠে । চীনের সুং রাজবংশের সময়ে চীন-ভারত বিনিময় আরো গভীর হয় । দু'হাজারেরও বেশি বছরের চীন-ভারত আদান-প্রদানের ইতিহাসে সাংস্কৃতিক বিনিময় ছিল ভিত্তিপ্রস্তর। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে চীনে ধাপে ধাপে ভারতের বৌদ্ধধর্ম, সংগীত , নাচ , জ্যোতির্বিদ্যা, ভাষা ও সাহিত্য , স্থাপত্য, চিনি তৈরির কৌশলের প্রচলন হয় । একই সময়ের মধ্যে ভারতে চীনের কাগজ তৈরি , রেশম , চীনা মাটি , চা ও সংগীতের প্রচলন হয় । এসব ভারতের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে । চীনের " ২৪টি ইতিহাস" ও বিশিষ্ট বৌদ্ধপন্ডিত তা তের ভ্রমণ বৃত্তান্ত ভারতের প্রাচীন ইতিহাস রচনার জন্যে ভিত্তি স্থাপন করেছে । ভৌগোলিক দিক থেকে প্রতিবেশী হিসেবে চীন ও ভারতের মধ্যে আদান-প্রদানের ইতিহাস এত লম্বা হলেও দু দেশের মধ্যে যুদ্ধ ও সংঘর্ষ ছিল খুবই নগণ্য এবং কেবল বিদ্যমান ছিল সাংস্কৃতিক বিনিময় আর অধ্যয়ন ও মৈত্রীর বিস্তার । বিশ্বের ইতিহাসে এমন ঘটনা কদাচিত দেখা যায় ।

 চীন ও ভারত আলাদা আলাদাভাবে মুক্তি ও স্বাধীনতা লাভের পর দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় আবার জোরদার করে চলেছে । সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান মৈত্রী সুসংবদ্ধ করার ভিত্তি বলে দু'দেশের সরকার সংস্কৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে । দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরাট উন্নতির সংগে সংগে দু'দেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতায়ও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয় । ১৯৮৮ সালে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর চীন সফরের সময়ে দু'দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ২০০৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ীর চীন সফরকালে " চীন ও ভারত সরকারের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তির ২০০৩ - ২০০৫ সালের কার্যনির্বাহী পরিকল্পনা" স্বাক্ষরিত হয় । চলতি বছর উভয় পক্ষ চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ২০০৬-২০০৮ সালের কার্যনির্বাহী পরিকল্পনা" স্বাক্ষর করবে ।

 চীন-ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বেসরকারী ভিত্তিও বেশ ভালো । যখন দু'দেশের সম্পর্ক তিক্ত ছিল , তখনো চীনের বিশিষ্ট পন্ডিত চি সিয়ান লিন ও তার ছাত্ররা প্রাচীন ভারতের দুটো মহাকাব্য "রামায়ন" ও "মহাভারত" চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন । ১৯৮৮ সালের আগে চীন-ভারত আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ছিল না । কয়েক বছর পর পর দু দেশের মধ্যে দু'একটি শিল্পী দল বিনিময় হতো । অল্প সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা ভারতের কিছু বই অনুবাদ করে । কিন্তু বর্তমানে সাংস্কৃতিক মাস ও মৈত্রী বর্ষ প্রভৃতি তত্পরতা চালানো হচ্ছে । এই বছরের চীন-ভারত মৈত্রী বর্ষের সময়ে সংস্কৃতি প্রধান ভূমিকা পালন করবে । গত জানুয়ারী মাসে দু'দেশের মধ্যে পরামর্শের পর নির্ধারিত ৩৮টি বিনিময় কর্মসূচীর মধ্যে অর্ধেকই সাংস্কৃতিক কর্মসূচী । এই বছরে চীন ও ভারত পরস্পরের দেশে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে এবং চলচিচত্র উতসব আয়োজন করবে । চীন ভারতে পিকিং অপেরা দল পাঠাবে এবং ভারতে সান সি চালচলন শিল্পপ্রদর্শনী ও শান সি সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আয়োজন করবে । ভারত চীনে তার ঐতিহ্যিক নৃত্য দল ও বলিউড সংগীত ও নৃত্য দলকে পাঠাবে । এই বছরে ভারতের নালন্দায় চীন হিয়ানসাং স্মৃতি ভবন উদ্বোধন করবে । অপর দিকে ভারত চীনের লোও ইয়াংয়ের পাই মা মন্দিরে ভারতীয় রীতির বৌদ্ধ-প্রকোষ্ঠ উদ্বোধন করবে ।

 চীন ও ভারতের সংস্কৃতি সুপ্রাচীন ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর । দু দেশের সংস্কৃতি বিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল সভ্যতা সৃষ্টি করেছে । আজ চীন ও ভারত আবারো নতুন বিস্ময় সৃস্টি করছে । এই পটভূমিকায় চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুদূরপ্রসারী তাত্পর্য রয়েছে ।

 প্রথমত পারস্পরিক শিক্ষাগ্রহণ এবং একে অপরের সদ্গুণ আহরণ । ভারতীয়রা সহজ সরল জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত এবং উচ্চতর মানসিতায় বিশ্বাসী ও বল প্রয়োগ না করার ভাবধারার পক্ষপাতী । চীনের সমাজতান্ত্রিক মানসিক সভ্যতা গড়ে তোলা এবং সম্প্রীতিময় সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতের উপরোক্ত চিন্তাধারা খুবই শিক্ষনীয় ।

 দ্বিতীয়তঃ সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে আস্থা বাড়ানো হবে এবং সন্দেহ দূর করা হবে ।

 তৃতীয়ত: প্রাচ্যের সংস্কৃতির পুনরুত্থান হবে এবং এশিয় শতাব্দির সৃস্টি হবে । চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রাচ্যে নতুন সংস্কৃতি দেখা দেবে ।