v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-18 20:24:57    
দক্ষিণ চীনের ছোট নগন ---ঠংলি

cri
    ঠংলি নগর চীনের পূর্বাঞ্চলের চিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত। ঠংলি থেকে চীনের বিখ্যাত পযর্টন শহর---সুচৌ মাত্র দশ কিলোমিটারের পথ। এই ছোট নগরের ইতিহাস হাজারাধিক বছরের। বতর্মানে এই ছোট নগর চিয়াংসু প্রদেশে একটি সবচেয়ে অক্ষতভাবে সংরক্ষিত ছোট নগর। এই নগরের পূর্ব দিকে তাইহু হ্রদ। জালের মতো নদনদী এই ছোট নগরকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছে। সুতরাং নগরের অট্টালিকা আর রাস্তা নদীর পাশে নিমির্ত হয়।এই ছোট নগর মনে হয় পানিতে একটি মুক্তার মতো চকচক করে। স্থানীয় লোক মিষ্টার জেন ফু সেন সংবাদদাতাকে বললেন, ঠংলি নগরের ভিতরে অনেক ছোট-বড় নদী আছে, সুতরাং এখানে সেতুর অভাব নেই। তিনি বললেন,

    এ কথা বলা যায় যে, এখানে প্রত্যেক বাসা পানির পাশে এবং প্রত্যেক বাসায় নৌকায় যাওয়া যায়। এই নগরের যে কোনো জায়গায় দাঁড়ালে পানি দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের এই নগর ছোট হলেও ১৫টি ছোট নদী এই নগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত । এ সব নদী এই নগরকে সাতটি ছোট দ্বীপে ভাগ করে। ৪০টিরও বেশী প্রাচীন সেতু দিয়ে এ দ্বীপগুলোএকটি সম্পূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    জেন ঠিক বলেছেন। বিভিন্ন সময় নির্মিত এ সব সেতুর মাধ্যমে নগরের পৃথক পৃথক ভূমি এক সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। নগর নদীর পাশে নিমির্ত হয় এবং রাস্তা আর নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ।এই নগরে যদি আপনি কিছু ক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন তাহলে অজান্তেই কয়েকটি সেতু অতিক্রম করেছেন। এ সব সেতুর মধ্যে সবচেয়ে 'বয়সী' সেতুর নাম 'সিমু সেতু'। এই সেতুর বয়স ৭০০ বছরেরও বেশী। দীর্ঘ বছরের বাতাস আর বৃষ্টির আঘাত সত্ত্বেওএই সেতু অক্ষতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে সবচেয়ে সুক্ষ্ম সেতুর নাম 'পুবু সেতু'। এই সেতুর দৈর্ঘ্য দুই মিটারের কম, সেতুর প্রস্থ এক মিটারের কম। দু'জন লোক সেতুতে মুখোমুখি হয়ে পার হতে চাইলে দু'জনকে দু'পাশে ঘুরে যেতে হবে।

    গাইড হুওয়াং শিও আমাদেরকে বললেন, এ সব সেতুর মধ্যে 'ফুগুয়াং সেতু' নামে সেতু রহস্যে পরিপূর্ণ। চীনের লোক কিংবদন্তীতে বলা হয় যদি রুই মাছ স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার করে 'লংমেন জলপ্রপাত অতিক্রম করতে পারে তাহলে এই রুই মাছ ড্রাগনে পরিণত হয়ে তথাকথিত স্বর্গে প্রবেশ করবে।কিংবদন্তীতে বলা হয় , প্রাচীকালে ঠংলিতে একটি রুই মাছ ' ফুগুয়াং সেতুকে' 'লংমেন ' বলে মনে করে সেতুটি অতিক্রম করার চেস্টা করতো। গাইড হুওয়াং বললেন,

    এই সেতুতে একটি পাথর ভাস্কার্য রয়েছে। এই ভাস্কর্যে এই কিংবদন্তী লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিংবদন্তীতে বলা হয় মার্চ মাসে পিছ গাছে ফুল ফোটার সময় একটি রুই মাছ লংমেন অতিক্রম করে স্বর্গে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু যখন এই মাছ লংমেন অতিক্রম করতে প্রস্তুত তখন সেতুতে দাঁড়ানো একজন সুন্দর মেয়ে এই মাছের চোখে পড়ে। সুতরাং এই মাছ সঙ্গে সঙ্গে একটি ড্রাগনের মাথায় পরিবর্তিত হয়।

    ঠংলিতে প্রাচীন সেতু ছাড়া আরও অনেক প্রাচীন বসতবাড়ী আছে। ঠংলি নগরে ৪০ শতাংশ স্থাপত্যের ইতিহাস শতাধিক বছরের। বিশেষভাবে কোনো কোনো বড় বড় উদ্যানে কাঠ আর পাথরের ভাষ্কর্য দিয়ে সাজানো হয়। চীনের বিখ্যাত উদ্যান তত্ত্ববিদ অধ্যাপক জেন ছন চৌ এক সময় ঠংলিকে চীনের প্রাচীনকালের স্থাপত্যের জাদুঘর বলে মন্তব্য করেন। এখানে আমরা বিশেষ করে টেসইয়ান নিয়ে একটু আলোচনা করবো। এই উদ্যান ইউরেস্কোরবিশ্ব সাংস্কৃতিকউত্তরাধিকারের উদ্যানে অন্তভুর্ক্ত ।

    চীনের ছিন রাজবংশ আমলের একজন কর্মকর্তা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই উদ্যান নির্মাণ করেন। ১৯ শতাব্দীতে এই উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উদ্যান নির্মাণের সময় এই ব্যক্তি আর কর্মকর্তা নন , তাই একটি জাকজমকপূর্ণ উদ্যান নির্মাণ করার ইচ্ছাতার ছিল না। সুতরাং তারঁ এই স্থাপত্যের শৈলী দেখতে সাধাসিধে।

    টেসইয়ানের আয়তন খুব ছোট। মাত্র ০.৬ একটর। কিন্তু প্রণয়নকারীরা দক্ষিণ চীনের জলভিত্তিক গ্রামাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অনুসারে সুন্দরভাবে এই উদ্যান নির্মাণ করেন। সুতরাং যখন মানুষ এই ছোট উদ্যানে হাঁটাহাঁটি করেন তখন তিনি অনুভব করেন যে সামনের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চার দিকের দৃশ্য পরিবর্তিত হয়। পানি ঘিরে উদ্যান নির্মিত হয়। জলসীমা এই উদ্যানের অধের্ক আয়তন অধিকার করে। ছোট-বড় ভেভিলিয়ন পানির ধারে ছাড়িয়ে পড়ে। মনে হয় এ সব ভেভিলিয়ন চকচক সবুজ স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এই ছোট হ্রদের উত্তর তীরের টেসিচো ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে চার দিকের সুন্দর দৃশ্য নজরে পড়ে। উদ্যানের বিন্যাস অকৃত্রিম। এটা চীনের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি উদ্যানগুলোর অন্যতম বলা যায়।

    পযর্টক মিস লি লু আমাদের বললেন, টেসি উদ্যানে শান্ত এবং ভিতরের দৃশ্য মনোরম।উদ্যানের ভিতরে উপস্থিতথাকলে বাইরের কোলাহল এড়ানো যায়। তিনি বললেন,

    আমি দক্ষিণ চীনের কয়েকটি উদ্যান পরিদর্শন করেছি। কিন্তু আমার মনে হয় এই উদ্যান সবচেয়ে ভাল। এই উদ্যানের পরিবেশ সবচেয়ে ভাল। এখানে আমার খুব ভাল লাগে।

    এই টেসিইয়ানের রীতিনীতির মতো গোটা ঠংলি নগরও দেখতে সরল। নগরে কোনো কোলাহল শোনা যায় না। নদীতে মহিলারা কাপড়-চোপড় ধুঁচ্ছেন , বাড়ীঘরগুলোর সামনে পুরুষরা চা খেতে খেয়ে গল্প করছেন। বুঝা যায় তাদের জীবনযাত্রা আরামদায়ক। বড় শহরে মানুষের জীবনের তাল খুব দ্রুত । কিন্তু এখানে এ ধরনের দ্রুত তাল দেখা যায় না।

    শ্রোতা বন্ধুরা এতক্ষণ দক্ষিণ চীনের একটি ছোট নগর সম্বন্ধে শুনলেন। আপনারা যদি চীন সফরের সুযোগ পান তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ চীনের ছোট ছোট প্রাচীন নগর দেখতে যাবেন। ওখানে আপনারা দক্ষিণ চীনের সংস্কৃতি আর মানুষের জীবনযাত্রার রীতিনীতি ভালভাবে জানতে পারবেন।