ছাই ছিন চীনের তাইওয়ান প্রদেশের একজন জনপ্রিয় গায়িকা । গায়িকা ছাই ছিনের গান শুধু তাইওয়ান ও চীনের মূলভূখন্ডের শ্রোতারাই পছন্দ করেন না , পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রবাসী চীনা ও বিদেশীরাও তার গানের অনুরাগী । ছাই ছিনের গাওয়া গানের আকর্ষনীয় শক্তি অতুলনীয়। তার গলার গম্ভীর ও উষ্ণ স্বর বাতাসে ভাসতে ভাসতে মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করে ।
ছাই ছিনের গলার স্বর গম্ভীর , মিষ্টি ও হৃদয়স্পশী , তাই তার গানের অনুরাগীর সংখ্যা বেশী । অনেকে বলেছেন , তার গানে আধুনিক গানগুলোর আত্মার স্পর্শ পাওয়া যায় । অনেকে তার গানকে বহু বছর সযত্নে রাখা এক পেয়ালা মদের সঙ্গে তুলনা করেন ।
অনেকে ছাই ছিনকে চীনা ভাষার গানের ' চিরসবুজ গাছ ' আখ্যা দিয়েছেন । ছাই ছিনের গান চর্চার অভিজ্ঞতা মজার । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর ছাই ছিন দেখেছেন ছাত্রছাত্রীরা গিটার হাতে নিয়ে গান করতে পছন্দ করেন । ছাই ছিনও একটি গিটার কিনতে চান । দোকানে গিটারের টা কা দেয়ার সময় হঠাত্ তিনি একটি পোষ্টার দেখেন । পোস্টারে বলা হয়েছে , একটি সিডি কোম্পানি একটি গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে । প্রতিযোগিতার প্রথম পাঁচজন বিজয়ী উপহার হিসেবে একটি গিটার পাবেন । এই খবর পেয়ে ছাই ছিন গিটার কেনার পয়সা বাচাঁনোর জন্য এই গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং উপহার হিসেবে গিটার পেয়েছেন । আসলে সিডি কোম্পানি গায়কগায়িকা নির্বাচনের জন্য গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে । এই ঘটনা সম্বন্ধে ছাই ছিন বলেছেন , আমি পয়সা বাঁচানোর জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি এই সিডি কোম্পানির একজন আনুষ্ঠানিক গায়িকা হয়েছি ।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে ছাই ছিন লোকসংগীত গাইতে শুরু করেন । আশির দশকে তিনি জনপ্রিয় গায়িকা হন । বর্তমানে সেই আমলের গায়কগায়িকারা আর গান করেন না , কিন্তু ছাই ছিন এখনও মঞ্চে বেশ তত্পর রয়েছেন । গত বিশ-বাইশ বছরে ছাই ছিন মোট চল্লিশটিরও বেশী সি ডি প্রকাশ করেছেন এবং একাধিক বার তাইওয়ানের চিং তিন পুরস্কার , সোনালী সুর পুরস্কার ও হংকংয়ের শ্রেষ্ঠ দশটি চীনা ভাষার গান পুরস্কার পেয়েছেন । তার গায়িকা জীবনের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ছাই ছিন বলেছেন , আমি মনে করি আমি খুব ভাগ্যবর্তী। আমার চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে কোনো বিষয়ে আমি দৃঢভাবে লেগে থাকতে পারি । সত্যি কথা বলতে কি , আমার সঙ্গে যারা গান চর্চা করেন , তারাও খুব ভালো কন্ঠশিল্পী । কিন্তু তারা শিল্পী মহলের প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারেন না , তাই তারা একের পর এক শিল্পী জগত ত্যাগ করেছেন । আমিও সেই ধরনের পরিবেশ পছন্দ করি না , কিন্তু আমি সহ্য করেছি এবং ধীরে ধীরে নিজের শৈলী সৃষ্টি করেছি।
১৯৮০ সালে ছাই ছিন তাইওয়ানের সুরকার লিয়ান হোং চির রচিত একটি গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন , এই গান তার প্রতিনিধিত্বকারী গান বলা যায় , এই গানের নামঃ ' তোমার মতো মিষ্টি মেয়ে ' । বিশাধিক বছর পার হয়ে গেছে , সুরকার লিয়ান হোং চি মারা গেছেন । ছাই ছিন জীবনের বেশ কয়েকবার উত্থান-পতনের পর এই গানের মর্ম আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন । তিনি বলেছেন , এই গানে সুরকার একটি নিঃসঙ্গ পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন । সুরকার নিজেকে একটি নিঃসঙ্গ দ্বীপের সঙ্গে তুলনা করেন , কোনো বন্ধু তাকে দেখতে আসেন না , শুধু পানির ঢেউ তাকে বুলিয়ে শান্তনা দেয় ।
ছাই ছিন বিয়ে করেছিলেন । তার এই বিয়ে দশ বছর স্থায়ী ছিল । কিন্তু তাদের বিয়ে ছিল নিষ্কাম ধরণের । । স্বামী-স্ত্রী এক বাসায় থাকতেন , কিন্তু একই ঘরে থাকতেন না । পরে তার স্বামী অন্য নারীর প্রেমে পড়েছেন বলে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। ছাই ছিনের পক্ষে এই ঘটনা এক গুরুতর আঘাত । তিনি দীর্ঘ দিন এই বেদনায় মূহ্যমনে ছিলেন । কিন্তু তার জীবনের আরেকটি ঘটনা তার ওপর আরো মারাত্মক আঘাত হেনেছে। একটি চেক আপে ডাক্তার তাকে বলেছেন , তিনি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । সেই সময় নিঃসঙ্গতা ও নিরাশার দরুণ ছাই ছিন সারা রাত ঘুমতে পারতেন না । গভীর রাতে বন্ধুদের টেলিফোন করতে ইচ্ছে হতো , কিন্তু তিনি বন্ধুদের ঘুম ভাঙ্গাতে চান নি । সেই সময় ছাই ছিন গাছ দেখতে পছন্দ করতেন । গাছের পাশে থাকলে তার মন শান্ত হতো । এই দুটি ঘটনার পর ছাই ছিন আগের চেয়ে অনেক পরিপক্ক হয়েছেন । তিনি আশা করেন নিজের মন বাচ্চার মতো স্বচ্ছ হতে পারে । তিনি তার গানে নিজের অনেক অনুভুতি মেশানোর চেষ্টা করেছেন ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাই ছিন জনপ্রিয় পুরানো গানগুলো গাইছেন । কিন্তু তিনি সেই সব পুরনো গানে নিজের অনেক নতুন উপলব্ধির মাত্রা যোগ করেছেন । তার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ' হয়ত শীতকালে ', ' আগামীকাল তুমি আর আমাকে ভালোবাসবে ? ' আর ' অশান্ত চিও ' ইত্যাদি সব বিখ্যাত গায়কদের গাওয়া পুরনো গান , কিন্তু তিনি এই সব গান গাওয়ার সময় নারীর মিষ্টি ও সুক্ষ্ম উপলব্ধি মিশিয়ে গানগুলোকে আরো শ্রুতিমধুর করেছেন ।
ছাই ছিন নৃত্যনাট্যের অভিনয়েও অংশ নিয়েছেন । ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার অভিনীত একটি নৃত্যনাট্য পেইচিং ও সাংহাই শহরে মঞ্চস্থ হয়েছে । এই নৃত্যনাট্যে ছাই ছিন একজন সহৃদয় ও রসিক মঠ- বাসিনীর চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তার গান শুনে দর্শকরা দীর্ঘ সময় হাত তালি দিয়ে তাদের মনের আনন্দ প্রকাশ করেন ।
|