v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-16 20:45:55    
একজন চীনা ভাষার বিদেশী উপস্থাপকের কাহিনী

cri
    আপনারা শুনতে পাচ্ছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের " বিদেশীদের দৃষ্টিকোণ" নামক একটি অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের অংশ বিশেষ । অনুষ্ঠানে তুং মোও হান নামে আয়ারল্যান্ডের একজন নাগরিক সাবলিল চীনা ভাষায় উপস্থাপনা করছেন । কেউই কল্পনাও করতে পারবে না যে, কযেক বছর আগে তিনি চীনা শব্দও চিনতে পারতেন না ।

    তুং মোও হান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , দৈবক্রমে তিনি চীনে এসেছেন । এর সংগে সংগে তাঁর জীবনের গতিধারায়ও কল্পনাতীত পরিবর্তন ঘটেছে ।

    আট বছর আগে মনখোলা যুবক তুং মোও হান সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছিলেন । ছুটি বিনোদনের জন্যে তিনি তার বন্ধুদের সংগে অস্ট্রেলিয়ায় গেলেন । তারা সিডনির একটি আন্তর্জাতিক আবাস ভবনে উঠলেন । সেখানে একজন উত্সাহী প্রবাসী চীনার সংগে তাঁর পরিচয় হল । এই প্রবাসী চীনার সুপারিশ অনুসারে তুং মোও হান ও তার দুজন ব্রিটিশ বন্ধু মিলে উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াও নিং প্রদেশের লিয়াও ইয়াং শহরের একটি মাধ্যমিক স্কুলে এসে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে শুরু করলেন ।

    যখন তুং মোও হান লিয়াও ইয়াংয়ে আসলেন , তখন বসন্ত আসলেও কনকনে শীত । তবে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত সিডনির আবহাওয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল । অল্প দিন পর লিয়াও ইয়াং শহরে বড় গোছের এক তুষার পড়ল । এই তুষার তুং মোও হানের মনে চীনে আসার পর প্রথম ছাপ ফেলেছিল । তিনি   বলেছেন ,

    আগে আমরা চীনের আবহাওয়া সম্পর্কে কিছু জানতাম না। বিশেষ করে মার্চ মাসে উত্তর চীনের আবহাওয়া কি রকম , সেই সম্বন্ধে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না । আমাদের মনে হতো , সেখানকার আবহাওয়া হয়তো অস্ট্রেলিয়ার মত । আমরা লিয়াও ইয়াংয়ে পৌছার পর দেখতে পেলাম , সেখানে তুষার পড়েছে । তখনকার তাপমাত্রা শূন্যের নীচে বিশ বাইশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে গিয়েছিল । আমরা ভীষণ ভয় পেলাম ।

    লিয়াও ইয়াংয়ে শিক্ষক হিসেবে কাজ করার দিনগুলো তুং মোও হানের মনে সুন্দর রেখাপাত করেছে । সেই মাধ্যমিক স্কুলের চীনা শিক্ষক হোক , তার ছাত্র হোক , সবাই এই তরুণ বিদেশী শিক্ষককে পছন্দ করেন । তার ছাত্রছাত্রীরা তার জন্যে একটি সারগর্ভ চীনা নাম দিয়েছেন । তার চীনা নামের মধ্যে মোওয়ের অর্থ হলো মরুভূমি । হানের অর্থ হলো উদারতা । তারা আশা করছেন , তাদের শিক্ষকের মন মরুভূমির মত প্রশস্ত এবং মরুভুমির জন্যে যেমন জলের দরকার , তাদের শিক্ষকের জন্যে তেমনি জ্ঞান ও উদারতারও দরকার । 

    লিয়াও ইয়াংয়ে তার বান্ধবী - একই মাধ্যমিক স্কুলের চীনা ইংরেজী শিক্ষক লি ইংয়ের সংগে তুং মোও হানের পরিচয় হলো । সময় তাড়াতাড়ি বয়ে যায় । গোড়ার দিকে তিনি চীনে মাত্র এক মাস থাকতে চেয়েছিলেন । কিন্তু অবশেষে তিনি টানা এক বছর থেকেছিলেন । শিক্ষার প্রটোকলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি আয়ারল্যান্ডে ফিরে গেলেন । তবে তার মন পুরোপুরিই সেই সুন্দর চীনা মেয়ের স্মৃতিতে ভরা ছিল ।

    ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনার পর তুং মোও হান আবার চীনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন । সেবার তিনি পেইচিং ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন এবং সেখানে সাড়ে তিন বছর ধরে চীনা ভাষা অধ্যয়ণ করলেন ।

    তুং মোও হান খুবই বুদ্ধিমান । স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ভাষা - চীনা ভাষা আয়ত্ত করেছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি একজন আফ্রিকান ছাত্রের সংগে চীনের রসাত্মক সংলাপ পরিবেশন করলেন । পরে পেইচিং টেলিভিশন কেন্দ্রের বার্ষিক বিদেশীদের নিপুনতা প্রতিযোগিতায় তুং মোও হান ও তার সংগী শিরোপা জয় করলেন ।

    চীনের রসাত্মক সংলাপে তুং মোও হানের নৈপুন্য চীনের রসাত্মক সংলাপের সুবিখ্যাত শিল্পী তিং কুয়াং ছুয়ানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । তিনি তাকে নিজের শিষ্য হিসেবে নিয়ে নিলেন । মিস্টার তিং তার এই বিদেশী শিষ্যের খুবই প্রশংসা করেন । তিনি সস্নেহে তাকে ছোট তুং বলে ডাকেন । তুং মোও হানও চীনের রেওয়াজ অনুযায়ী শ্রদ্ধাভরে নিজের মাস্টারকেতিং দাদা বলে অভিহিত করেন । তুং মোও হানের কথা উল্লেখ করলে মিস্টার তিং তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ । তিনি বলেছেন ,

    তার মনে হাস্যরসের উপাদান বেশি । তার জীবনে সর্বত্রই হাস্যরস দেখা যায় । উপরন্তু চীনাদের সংগে মেলামেশার সময়েও তিনি চীনের হাস্যরস আহরণের ওপর নজর দেন । তিনি সবসময় আয়ারল্যান্ডের হাস্যরস বিস্তৃত করার চেষ্টা করেন । তার অভিনয় দেখে দর্শকরা হা-হা করে হাসেন । তিনি সহজে দর্শকদের সংগে মিশতে পারেন । আমাদের ভাষায় অভিনয় মঞ্চের সংগে তার নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে ।

    সম্প্রতি তুং মোও হান চীন আন্তর্জাতিক বেতারের স্বদেশীয় চীনা ভাষার অনুষ্ঠান ও পেইচিং বেতারের অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের কাজ শুরু করেন । তার পক্ষে সহায়ক হয় বলে তিনি উপস্থাপকের কাজ বেছে নিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    এই দুটো অনুষ্ঠানে বেশ মজা আছে । তা আমাকে চীনের সাধারণ লোক , বিশেষ করে বড় বড় শহরের সাধারণ লোকদের জীবন জানার সুযোগ এনে দিয়েছে ।

    লিয়াও ইয়াংয়ে তুং মোও হানের সংগে পরিচিত সেই মাধ্যমিক স্কুলের সুন্দর শিক্ষিকা লি ইং এখন তার স্ত্রী হয়ে গেছেন । তাদের একটি দেড় বছরের ছেলেও রয়েছে । তাদের ছেলেকে দেখাশোনা করতে হয় বলে লি ইং সাময়িককালের জন্যে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন । অবসর সময়ে তুং মোও হান বাড়িতে বই পড়তে পছন্দ করেন । ছেলের সংগে খেলা করাই তার সবচেয়ে বড় শখ ।

    প্রতিদিন ভোর ছ'টার দিকে তিনি বিছানা থেকে ওঠে পাবলিক বাস ও সাবওয়েতে করে বেতারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তিনি প্রায়ই টিভিতে সাক্ষাতকার দেন এবং সারা দিন ব্যস্ত থাকেন ।

    অন্যরা তুং মোও হানকে বিদেশী ডাকলে , তিনি খুশী নন। চীনারা তার সংগে ইংরেজীতে শুভেচ্ছা জানালেও তিনি আনন্দিত নন । তিনি তার স্ত্রীর তৈরি চীনা খাবার খেতে পছন্দ করেন । এখন বাইরের রেস্তোঁরায় পশ্চিমা খাবার খাওয়ার সুযোগ তার খুবই কম । তিনি মনে করেন যে , যে কোনো দেশে আসলে সে দেশের রীতিনীতির সংগে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হবে । আয়ারল্যান্ডের এই যুবক বলেছেন , তিনি পেইচিংয়ে খাঁটি পেইচিংবাসীদের মত জীবন যাপন করতে চান ।