আপনারা যা শুনেছেন , তা হচ্ছে চুয়াং জাতির একটি উত্সাহব্যঞ্জক লোক সংগীত । তা চুয়াং জাতির একটি লোক সংগীত মেলার রেকর্ডিং থেকে বাছাই করা হয়েছে । দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুয়াংশি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মাঝে মাঝে স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এই লোক সংগীত মেলা আয়োজিত হয় । সংগীত মেলায় লোকেরা লোক সংগীত পরিবেশনের সংগে সংগে নানা ধরনের চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন । আজ এই অনুষ্ঠানে চুয়াং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের উ মিং জেলায় চুয়াং জাতির সংগীত মেলা বিষয়ক সংস্কৃতি সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
কুয়াংশি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণ-মধ্যাংশে অবস্থিত উ মিং জেলা চুয়াং জাতির সংস্কৃতির অন্যতম উত্সস্থল । দীর্ঘকাল ধরে এই জেলায় চুয়াং জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোক সংগীত মেলা সম্পর্কিত সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে ।
সংবাদদাতা এই জেলার সিয়াংসান শাংইয়্যু মহাচত্বরে দেখেছেন , কুয়াংশির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রায় এক শো চুয়াং জাতির যুবকযুবতী জাতির সুন্দর নীল পোষাক পরে তিন বা পাঁচজন করে দল বেঁধে গান গাইলেন । সবার কন্ঠস্বরে মহাচত্বর গানের সমুদ্রে ডুবে গেছে ।
তাহলে চুয়াং জাতির মধ্যে কেন এত বেশি শ্রেষ্ঠ গায়ক- গায়িকা আছেন ? উ মিং জেলার চুয়াং জাতির কৃষক সু সিয়েন ছিং সংবাদদাতাকে বলেছেন , চুয়াং জাতির লোকেরা নিত্য জীবনযাপনে ভাল কন্ঠশীলন করেছেন । তারা লোক সংগীতের মাধ্যমে নিজের আবেগ ও ইচ্ছা প্রকাশে পারদর্শী ।
চুয়াং জাতির বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সারা দিন কৃষিকর্ম করে খুব ক্লান্ত । সুতরাং তারা লোক সংগীতের সাহায্যে মনের শুভকামনা ব্যক্ত করে থাকেন । অল্পবয়সীরাও একই রকম । পুরুষ ও নারীরা লোক সংগীতের মাধ্যমে তাদের আবেগ ও ভালবাসা প্রকাশ করেন । বাচ্চারা ছড়ার মাধ্যমে তাদের দুঃখ -আনন্দ প্রকাশ করে ।
প্রতি বছরের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত উ মিং জেলায় নানা রকমের লোক সংগীত মেলা আয়োজন করা হয় । তাহলে চুয়াং জাতির লোকেরা কেন এই সময়ে লোক সংগীত মেলার আয়োজন করেন ? উ মিং জেলার গানের রাজা বলে পরিচিত মুন স্যু সেন প্রতি বছর সংগীত মেলায় গান গাইতে আসেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , সংগীত মেলা আয়োজনের তারিখ স্থানীয় চুয়াং জাতির লোকদের চাষাবাদের মৌসুমের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত । তিনি বলেছেন ,
চান্দ্রবর্ষের পঞ্চম মাসের ৫ তারিখ স্থানীয় লোকেরা ধান ক্ষেতে ঘাস বাছাই করেন । তখন সংগীত মেলায় গান গাওয়ার সময় নেই । শীতকালে ফসল কাটার পর সংগীত মেলা আবারও আয়োজন করা হয় ।
সংগীত মেলার ইতিহাস প্রসংগে মুং স্যু সেন সংবাদদাতাকে একটি সুন্দর রুপ কথা বললেন । এটা অনেক আগের কথা । চুয়াং জাতির একজন প্রবীণ গায়কের মেয়ে খুব সুন্দরী , সে ভালভাবে লোক সংগীত গাইতে পারে । বৃদ্ধ একজন দক্ষ অল্পবয়সী গায়ককে তার জামাই হিসেবে বাছাই করতে চাইলেন । সেজন্য গান প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের যুবকরা এলেন । তার পর এই অঞ্চলে নিয়মিতভাবে সংগীত মেলা আয়োজন করা হয় ।
সংবাদদাতা সংগীত মেলায় দেখেছেন , লোক সংগীত পরিবেশন করা এখনো এই মেলার প্রধান বিষয় বলে মনে করা হয় । কিন্তু গান গাওয়ার সংগে সংগে চুয়াং জাতির যুবক-যুবতীদের মধ্যে রেশম বল ছুড়ে বর বেছে নেয়া , আতশবাজি পোড়ানো, বাঁশের নৃত্য প্রভৃতি এই জাতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তত্পরতাও আয়োজন করা হয় । এতক্ষণ আপনারা শুনলেন , চীনের এক ধরনের সানাইয়ের মতো ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্রে বাজানো সংগীতের তালে তালে শতাধিক যুবকযুবতীর পরিবেশিত বাঁশের নৃত্যের রেকর্ডিং ।
তা ছাড়া চুয়াং জাতির জনসাধারণের বাড়িতেও নানা রকম তত্পরতা আয়োজন করা হয় । যেমন সুস্বাদু খাওয়া-দাওয়া রান্না করা হয় এবং সুন্দর মদ ও খাবার আস্বাদন করার জন্য আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের আমন্ত্রণ জানানো হয় । উ মিং জেলার কৃষক সু সিয়েন ছিং সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
যখন সংগীত মেলা আয়োজন করা হয় , তখন বাড়িতে বাড়িতে রঙ্গিন বিনি চালের ভাত পাকানো হয় এবং অতিথিদের খাওয়ানোর জন্য হাঁস-মুরগী জবাই করা হয় । চুয়াং জাতির লোকদের মধ্যে এখনো এই রেওয়াজ সংরক্ষিত রয়েছে ।
সুন্দর খাবারের বন্দোবস্ত ছাড়া সংগীত মেলা চলাকালে মদ খাওয়াও প্রয়োজনীয় । উ মিং জেলার গানের রাজা মুং স্যু সেন সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
সংগীত মেলা চলাকালে সবাই গান করেন আর মদ খান । বাড়িতে যত বেশি অতিথি আসেন তত ভাল । অতিথিরা সবাই মদ খান , মদ খেয়ে গান করেন । ভোর না হওয়া পর্যন্ত তারা মদ খেতে খেতে গান করেন ।
এখন চুয়াং জাতির লোকদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । সুতরাং সংগীত মেলায় তাদের যোগদানের আগ্রহও অনেক বেড়েছে । আরো খুশির ব্যাপার এই যে , স্থানীয় সরকার সংগীত মেলা আয়োজনের ওপর আরো গুরুত্ব দেয় । চুয়াং জাতির কৃষক সু সিয়েন ছিং বলেছেন ,
আগে সংগীত মেলায় গান পরিবেশনের জন্য যে মঞ্চ নির্মিত হয় , তা পুরানো আর আনুষ্ঠানিক নয় । এখন সরকারের অর্থ বরাদ্দের সাহায্যে আনুষ্ঠানিক মঞ্চ নির্মিত হয়েছে , তা দর্শকদের আকৃষ্ট করে ।
গত কয়েক বছরে উ মিং জেলায় সংগীত মেলার প্রভাব নিরন্তর সম্প্রসারিত হয়েছে । তা যেমন স্থানীয় গ্রামবাসীদের তেমনি বাইরের পর্যটকদেরও আকর্ষণ করেছে । সংগীত মেলায় সবাই চুয়াং জাতির বৈচিত্র্যময় ও চিত্তাকর্ষক সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারেন । উ মিং জেলার পার্টি-কমিটির সম্পাদক সু শাও রোং বলেছেন ,
লোক সংগীত পরিবেশন করা আর সংগীত মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করা আমাদের চুয়াং জাতির একটি শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য । গত কয়েক বছরে আমাদের সংগীত মেলায় আসা হংকং , ম্যাকাও ও তাইওয়ানের অতিথি আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অতিথিদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে ।
|