চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউন্নান-কুয়োচৌমালভূমিতে ' বন শহর' বলে আখ্যায়িত কুয়েইয়াং শহর রয়েছে। এই শহরের দৃশ্য সুন্দর। শহরের অধিকাংশ জায়গায় সবুজায়ন হয়েছে। এখানে শুধু যে চার ঋতুতে বসন্তের মতো তাই নয়, জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রীতিনীতি আর বৈচিত্রময় খাবারও পাওয়া যায়।
কুয়েইয়াং চীনের প্রথম বড় নদী ইয়াংসি নদী আর তৃতীয় বড় নদী চুচিয়াং নদীর জলবিভাজিকায় অবস্থিত। শহরের চার দিকে ছোট ছোট পাহাড় আর উপত্যকা রয়েছে । সুতরাং এই ভূবৈচিত্রে সবুজায়ন খুব ভাল।
কুয়েইয়াং বন পার্ক হল চীনের প্রথমশহর বন পার্ক। এই বন পার্ক কুয়েইয়াং শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে। এই বন পার্কের আয়তন ৫৩০ একরেরও বেশী । বতর্মানে আয়তনের দিকে থেকে এটা হল চীনের সবচেয়ে বড় শহর বন পার্ক।
কুয়োইয়াং বন পার্কে প্রবেশ করলে মনে হয় আপনি গাছের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছেন। এখানে আছে চীনের প্রথম শ্রেণীর সংরক্ষিত গাছ---ঘুঘু গাছ। তা ছাড়া আরও আছে হাজারাধিক প্রজাতির গাছ । এ সব গাছ ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝখানে ছড়িয়ে রয়েছে। এই বন পার্কে হাঁটাহাঁটি করলে মানুষের চোখে পড়ে সবুজ রংয়ের বন আর প্রবাহিত পানি , কানে ঢুকে পড়ে পাখিগুলোর ডাক। যাদের ভাগ্য ভাল তারা নানা ধরনের বন্য প্রাণীও দেখতে পারেন।
আসলে এক সময় এই বন পার্ক ছিল স্থানীয় বন এক্যাডিমির পরীক্ষামূলক বন খামার । ১৯৬০ সালে যখন চীনের প্রয়াত প্রধান মন্ত্রী চৌএন লাই এখানে পরিদর্শন করেন তখন এখানকার সুন্দর দৃশ্য তাঁর নজরে পড়ে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বন খামারকে বন পার্কে রুপান্তর করার প্রস্তাব করেন। তখন থেকে এই বনের গাছ-কাটা শ্রমিকরা এই বণের রক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া, এই বন পার্ক দেশ বিদেশের পযর্টকদের একটি দেখার মতো জায়গায় পরিণত হয়েছে।
কুয়েইয়াং বন পার্ক ছাড়া, কুযেইয়াংএ পযর্টকদের কাছে উন্মুক্ত আরও কয়েকটি বন পার্ক আর বন এলাকা আছে। কুয়েচোতে ভ্রমণ করতে আসা সাংহাইএর একজন পযর্টক ম্যাডাম লিও ইয়েন সংবাদদাতাকে বললেন,
পরিকল্পনা অনুসারে আমি কুয়েচোতে দু'সপ্তাহের ভ্রমণ করবো। কিন্তু এখানে আসার পর আমার পরিকল্পনা পরিবর্তিত হয়েছে। আমি এখানে প্রায় চার সপ্তাহের মতো বসবাস করেছি। আমার ছুটি আরও দু'মাস বাড়লে ভাল হত।
ম্যাদাম লিওয়ের মত আরও অনেক পযর্টক আছে যারা গুয়েচো আসার পর এই জায়গা পছন্দ করেছেন। এখানকার বন পার্ক ছাড়া, কুয়েইয়াংএর খাবারও পযর্টকদের আকর্ষন করে। যখন সন্ধ্যায় ঘনিয়ে আসে তখন কুয়েইয়াং শহরের ছোট-বড় রাস্তার উপর নানা ধরনের খাবারের সুগন্ধ ভেসে যায়। বিভিন্ন রেস্তোঁরায় অতিথিদের ভিড় দেখা যায়। খাবার সংস্কৃতি প্রায় কুয়েইয়াংবাসীদের জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক রেস্তোঁরা মধ্য রাত পযর্ন্ত খোলা থাকে। পেইচিং থেকে আসা পযর্টক লি ডং যিনি প্রথম বার কুয়েইয়াংএ ভ্রমণ করতে এসেছেন তিনি কুয়েইয়াং শহরের খাবার খুব পছন্দ করেছেন। তিনি বললেন,
কুয়েইয়াং শহর আসার পর আমি সন্ধ্যার পর শহর পরিদশন করেছি। আমি অনুভব করেছি এই শহর মোটামুটি আধুনিক। সন্ধ্যার পর এখানে অনেক খাবার পাওয়া যায়। আসার আগে আমি শুনেছি কুয়েইয়াংএর গরুর মাংসের গুড়ি খুব ভাল। সুতরাং এখানে আসার পর আমি এই খাবার খুঁজেছে। খাওয়ার পর বুঝতে পেয়েছি এই খাবার সত্যিই সুস্বাদু। কুয়েইয়াংএর খাবারের বৈশিস্ট্য হল টক। তবে খেতে ভাল লাগে।
সত্যিই যে কোনো পযর্টক কুয়েইয়াং শহরে আসলে অবশ্যই রাতবেলায় কুয়েইয়াং লোকের জীবন উপলদ্ধি করতে চায়। তারা মনে করেন, কুয়েইয়াংএর স্থানীয় খাবার আস্বাদন না করে কুয়েইয়াংএর আসল সফর বলা যায় না। জানা গেছে, কুয়েইয়াংএ শতাধিক ঐতিহাসিক খাবার পাওয়া যায়। এ সব খাবারের মধ্যে একটি খাবারের নাম হল ' প্রেম বীনকোট'। এটা কুয়েইয়াংয়ের একটি নাম-করা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার। এ খাবারের প্রধান উপাদান হল বীনকোট। তেলে ভাজার পর সয়াসস , ভিনিগার ইত্যাদি জিনিস মিশিয়ে খাওয়া হয়। এই খাবার কুয়েইয়াংয়ে একটি খুব জনপ্রিয় খাবার। আপনি হয় হয়তো জানতে চান যে কেন এই খাবারের নাম ' প্রেম বীণকোট' ?কারণ এই খাবারের পিছনে একটি রোমেন্টিক গল্প আছে।
১৯৩৯ সালে অথার্ত দ্বিতীয় মহা যুদ্ধ চলাকালে কুয়েইয়াং কুয়েইয়াং জাপানী আক্রমণকারীদের বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। তখন গুয়েইয়াং শহরে এক দম্পতি ছিলেন। তাদের নিজস্ব শাকসবজির বাগানে কয়েকটি বীণকোট সেকার ঘর ছিল। যখন জাপানের সৈন্যবাহিনীর বোমারু বিমানগুলো বোমা বর্ষন করে তখন ঘর যাত্রীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। জাপানের সৈন্যবাহিনীর বোমারু বিমানগুলোর বোমা বষর্ণ এড়ানোর জন্যে তারা পরে নিজের বাসার সামনে এই ব্যবসা শুরু করেন।তাদের এই খাবারের দাম সস্তা বলে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠল। সাধারণত লোকেরা এই বীণকোট খাওয়ার পর এবং বিমান হামলা এড়ানোর পর তারা বাসায় ফিরে যান। কিন্তু প্রেমে পড়া যুবক-যুবতীরা এই সুযোগ নিয়ে এক সঙ্গে বসে বেশী ক্ষণ গল্প করে থাকতেন। তাদের এই বীনকোট সেকার দোকান 'প্রেমের ঘরে' পরিণত হয়। একদা এই কথা জনসাধারণের মধ্যে খুব প্রচলিত হত। আস্তে আস্তে এই দম্পতি এই সেকা-বীনকোটকে 'প্রেম বীনকোট' নামে পরিবর্তন করেন।
কুয়েইয়াং হচ্ছে প্রধান হ্যান জাতি ছাড়া নানা সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত শহর। এখানে ৩৮টি সংখ্যালঘু জাতির বাস। একটু আগে আপনারা যে সংগীত শুনলেন তা হল সংবাদদাতার রেকর্ড-করা স্থানীয় মিও জাতির উত্সব উদযানের সময় ঢাক বাজানোর আওয়াজ। সংখ্যালঘু জাতির উত্সব উপলক্ষে সাধারণত কুয়েইয়াং শহরের কেন্দ্রস্থলে নানা সংখ্যালঘু জাতি নিজ নিজ জাতির পোশাকপরে সমবেত হয়। এ প্রসঙ্গে কুয়েইয়াং পযর্টন ব্যুর্রোর কর্মকর্তা হুয়াং সেন সেন বলেছেন,
বুই জাতি, মিও জাতি আর ডং জাতি আমাদের কাছে রহস্যময়। তাদের দেখতে কি রকমরের , তাদের পরা পোশাক কি ধরনের । এ সবের উপর আমাদরে কৌতুহল আছে। তাদের জীবন যাপানের অভ্যস এবং জাতির রীতি-নীতির মাধ্যমে আমরা তাদের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে পারবো।
|