v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-10 14:48:41    
চীনের চলচ্চিত্র যাদুঘর

cri
    চীনের চলচ্চিত্রের শততম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে তিন বছর প্রস্তুতির পর চীনের চলচ্চিত্র যাদুঘর সম্প্রতি পেইচিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে । চীনের চলচ্চিত্রের শততম বাষির্কী উপলক্ষে যাদুঘরটিতে ' চীনের চলচ্চিত্রের শত বছরের গতিপথ ' নামে একটি প্রদশর্নীআয়োজিত হয়েছে । এই যাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের নামকরা চলচ্চিত্র শিল্পী ও বিভিন্ন মহলের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন । পেইচিংয়ের মেয়র ওয়াং ছি সান অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় বলেছেন , চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রসারের সঙ্গে পেইচিং মহানগর ওতপোতভাবে জড়িত । ১৯০৫ সালে চীনের প্রথম চলচ্চিত্র ' তিং চুন সান ' পেইচিংয়ে তৈরী করা হয়েছিল , এই ছবি চীনের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সূচনা করেছে । এক শ' বছর পর চীনের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের চলচ্চিত্র যাদুঘর পেইচিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই যাদুঘর চীনের চলচ্চিত্র শিল্প উন্নয়ন আর বিদেশের সঙ্গে আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জানালা হয়ে দাড়াঁবে । এই যাদুঘর চীনের যাদুঘরের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় সংযোজন করেছে ।

    পেইচিংয়ের উত্তর-পূর্ব উপকন্ঠে অবস্থিত চীনের চলচ্চিত্র যাদুঘরের আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গমিটার , এই যাদুঘর পৃথিবীর বৃহতম চলচ্চিত্র যাদুঘর । যাদুঘরটি দেখতে একটি বৃহত্ সমচতুর্ভুজাকার কালো বক্সের মতো। এটা চলচ্চিত্র ক্যামেরা ও প্রেক্ষাগৃহের প্রতীক । দূর থেকে দেখতে গেলে যাদুঘরটির স্থাপত্য তারা ভরা আকাশের মতো দেখায় , এটা প্রচুর চিত্রতারকার প্রতীক ।

    এই যাদুঘরে ২১টি ছোট-বড় প্রদশর্নী কক্ষ আছে । প্রদশর্নী কক্ষগুলোর মোট আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গমিটার । এই যাদুঘরে প্রদর্শনী আয়োজন , ছায়াছবি দেখানো , আলোচনা সভা অনুষ্ঠান , বৈজ্ঞানিক গবেষনা , আদান-প্রদান আর বিনোদনসহ নানান ধরনের কমর্সূচী নেয়া যায় । চীনের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন অধিদপ্তরের প্রধান ওয়াং থাই হুয়া বলেছেন , চীনের চলচ্চিত্র যাদুঘরের প্রধান ভুমিকা হলো ব্যাপক জনসাধারণের জন্য চীনের চমত্কার চলচ্চিত্র সংস্কৃতি সম্পর্কিত পরিসেবা দেয়া । যাদুঘরটি বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে চীনের চলচ্চিত্র ব্রতের গতিপথ ও বিভিন্ন পর্যায়ে অর্জিত সাফল্য দর্শকদের দেখানো , চীনের চলচ্চিত্র ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি ও ব্যক্তিত্ব প্রচার করা আর চলচ্চিত্র তৈরীর রহস্য দশর্কদের দেখানো । চীনের চলচ্চিত্র যাদুঘর কার্যকরভাবে চীনের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির সাফল্য প্রচার করবে এবং চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের দ্রুত প্রসার আর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও সহযোগিতা বাড়ানোর এক নতুন প্ল্যাটফর্মযোগাবে ।

    জানা গেছে , চীনের চলচ্চিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই যাদুঘরে আয়োজিত ' চীনের চলচ্চিত্রের এক শ' বছরের গতিপথ ' নামে প্রদর্শনীতে ছয় হাজারেরও বেশী ছবি বা স্বারকবস্তু স্থান পেয়েছে । এই সব ছবি ও স্বারকবস্তু চীনের দেড় হাজারটি ছবি তৈরীর সময় সংরক্ষিত হয়েছে । এই যাদুঘরের মোট ২৬০টি রুপালী পর্দায় প্রামান্য চলচ্চিত্র দেখানোর মাধ্যমে জীবন্তভাবে চীনের চলচ্চিত্র শিল্প প্রসারের ইতিহাস আর এই শিল্পে অর্জিত সাফল্য দেখানো হয়েছে ।

    এই যাদুঘরে দর্শকরা ১৯০৫ সালে চীনের প্রথম চলচ্চিত্র ' তিন চুন সাং ' তৈরীর সময়কার সরঞ্জাম আর প্যারিসে ১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ভাইরার পৃথিবীর প্রথম চলচ্চিত্র তৈরীর দৃশ্য দেখতে পরেন । দর্শকদের চলচ্চিত্র তৈরীর ইতিহাস দেখানোর জন্য যাদুঘরের পরিচালকরা ফ্রান্স থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো চলচ্চিত্র ক্যামেরা ধার নিয়েছে । লুমিয়ের ভাইরা এই চলচ্চিত্র ক্যামেরা দিয়ে প্রথিবীর প্রথম চলচ্চিত্র তৈরী করেছিলেন । এই ক্যামেরা এক গুরুত্বপুর্ণ পুরাকীর্তি হিসেবে ফ্রান্সের যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে । থিয়েনচিন চলচ্চিত্র স্টুডিওর চলচ্চিত্র যাদুঘরকে দেয়া দুটি পুরনো চলচ্চিত্র ক্যামেরাও চীনের চলচ্চিত্র ইতিহাসের স্বাক্ষী । এই দুটি ক্যামেরা দিয়ে চীনের জনগণের জাপ আক্রমণ বিরোধী যুদ্ধ আর নয়াচীনের প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান ভিডিও করা হয়েছে ।

    চীনের চলচ্চিত্র শিল্পীরাও এই যাদুঘর পরিদর্শন করে উচ্ছসিত হন। শিল্পী ফান হোন ১৯৮২ সালে ' মধ্যবয়সী ডাক্তার ' নামে একটি কাহিনী ছবিতে এক নারী চক্ষু ডাক্তারের চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন । এই ছবিতে চীনের তখনকার মধ্যবয়সী বুদ্ধিজীবীদের জীবন চিত্রিত হয়েছে । দর্শকরা আজ পর্যন্ত শিল্পী ফান হোনের ক্লান্ত ও বেদনাদায়ক চোখ দুটি ভুলতে পারেন না । সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাত্কারে ফান হোন বলেছেন , আমি চলচ্চিত্রগুলোতে চরিত্র সৃষ্টিকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করি । আমি মোট বিশ-বাইশটি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছি । এই সব ছবির মধ্যে যে একটি ছবি চলচ্চিত্র যাদুঘরে স্থান পেয়েছে , তাতেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। এই গৌরব আমার একার নয় , এই গৌরব সব দর্শক ও চলচ্চিত্র শিল্পীর ।

    এই চলচ্চিত্র যাদুঘরে দর্শকরা চলচ্চিত্র তৈরীর গোটা প্রক্রিয়া দেখতে পারেন । দর্শকরা মোটর সাইকেল করে ডাইনোসরের আক্রমণ ঠেকাতে পারেন এবং উড়ন্ত কারপেটে বসে আকাশ থেকে পেইচিংয়ের সব দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন । তা ছাড়া দর্শকরা এই যাদুঘরে ৬০ টিরও বেশী চলচ্চিত্রের যে কোনো চরিত্রের জন্য ডাবিংও করতে পারেন । দর্শকরা নিজের প্রিয় চরিত্রের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন এবং নিজের ডাবিং করা সিডি স্মারক হিসেবে নিয়ে যেতে পারেন ।

    বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী ওয়াং থিয়ে ছেন একাধিকবার চলচ্চিত্রে চীনের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন , তার সৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের ভাবমূর্তি দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । তিনি চলচ্চিত্র যাদুঘর প্রস্তুতির কাজে অংশ নিয়েছিলেন । এই যাদুঘর পরিদর্শনের পর তিনি বলেছেন , চলচ্চিত্র যাদুঘর চীনের চলচ্চিত্রের এক শ' বছরের ইতিহাস চিত্রিত করেছে । এই এক শ' বছর চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিরলস প্রচেষ্টার এক শ' বছর এবং চীনের চলচ্চিত্র শিল্প প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের এক শ' বছর । দর্শকরা এই যাদুঘর পরিদর্শন করে অনেক তথ্য পাবেন । পরবর্তীকালে এই যাদুঘরে আরো বেশী বিনোদনের ব্যবস্থা করা উচিত । এতে দর্শকের সংখ্যা আরো বাড়বে ।