v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International Thursday Apr 10th   2025 
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-08 10:12:26    
একটি বিশেষ ভালবাসার ক্লাস

cri
    চীনে এখন মোট ৭৬ হাজার শিশুদের বাবামা এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনাথ হয়ে গেছে। তারা সুস্থ থাকলেও কিছু লোকের সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের অভাবের কারণে তারা সমাজে এমনকি স্কুলেও বৈষম্যের সম্মুখীন হয়। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্যচীনের শিক্ষা বিভাগ ও কিছু সামাজিক সংস্থা ও সংগঠন চেষ্টা করছে। আজকের বিজ্ঞান বিচিত্রা অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের নিয়ে পেইচিংয়ের একটি বিশেষ ক্লাসে যাবো। সেখানে আপনারা জানতে পারবেন, এসব অনাথদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করার জন্য পেইচিংয়ে শিশুদের বিভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

    সম্প্রতি পেইচিংয়ের একটি শিশু ভবনের নাট্যশালায় একটি বিশেষ ভালোবাসার ক্লাস শুরু হয়। পেইচিংয়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের এক হাজার শিক্ষক ও ছাত্র ক্লাস শুনেছেন।

    "শিক্ষকঃ কি অবস্থায় আমরা এইডস রোগে আক্রান্ত হবো না?

    ছাত্রঃ স্বাভাবিক মেলামেশা করে আমি এই রোগে আক্রান্ত হবো না।

    শিক্ষকঃ স্বাভাবিক মেলামেশার অর্থ কি?

    ছাত্রঃ যেমন একসঙ্গে নাস্তা খাওয়া, সাঁতার কাটা, হাত মিলানো ও আলিঙ্গন করা।

    শিক্ষকঃ ঠিকই বলেছো।

    ছাত্রঃ সার, এই জ্ঞান জেনে আমার আর কোনো ভয় নেই। আমি জেনেছি সাধারণভাবে মেলামেশার মাধ্যমে এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে সব ছাত্র আমাদের স্কুলে আসবে, তাদের বাবা মা এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তারা খুব দুর্ভাগী। আমাদের তাদের যত্ন নেয়া উচিত।

    আরেকজন ছাত্রঃ সার, আজ বাড়ি ফিরে আমি এগুলো জ্ঞান আমার বাবা মাকে বলবো। আমিও বুঝেছি , এইডস রোগের জন্য যেসব শিশু তারা সত্যিই খুবই নিরীহ।

    ছাত্রঃ এই নতুন ছাত্রদের স্বাগতম জানানোর জন্যে আমরা একটি গান গাইবো। কেমন?

    শিক্ষক ও ছাত্রঃ ঠিক আছে।

    শ্রোতা বন্ধুরা, আপনি সবেমাত্র "আশাআকাংক্ষা" নামক একটি নাটক শুনেছেন। পেইচিংয়ের একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক একসঙ্গে তা অভিনয় করেছেন। এই নাটকের বিষয় হলো কয়েকজন নতুন ছাত্রছাত্রী স্কুলে এসেছে। তাদের বাবা মা এইডস রোগে মারা গেছেন। স্কুলের ছাত্ররা এইডস রোগের জ্ঞান না জানার কারণে তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না। শিক্ষকের ব্যাখ্যায় তাদের ধারণার পরিবর্তন হয় এবং নতুন ছাত্রদেরপ্রতি সহানুভুতি ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।

    এই নাটক উপস্থিত সকল দর্শককে মুগ্ধ করেছে। পেইচিং প্রাথমিক স্কুলের একজন ছাত্র আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে, এই নাটক দেখে তার ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।

    "তার বাবা মা এইডস রোগে আক্রান্ত হলেও সে আক্রান্ত হয়নি। তার বাবা মা মারা গেছেন বলে সে খুবই নিসংগ। তার কোনো অসুবিধা হলে আমি নিশ্চয় তাকে সর্বাত্মক সাহায্য করব।"

    "আমি তার সঙ্গে খেলবো।"

    চীনে এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাবে প্রভাবিত শিশুদের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে যেসব শিশুর বয়স ১৫ বছরের নীচে থাকে, এবং এইডস রোগে তাদের বাবা মার মধ্যে একজন মারা গেছেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ৭৬ হাজার। তাদের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারে থাকে। তাদের দুরবস্থা শহরাঞ্চলের শিশুরা কল্পনাও করতে পারে না।

    এবারকার তত্পরতার উদ্যোক্তা-পেইচিং হুয়াশিয়া দাতব্য তহবিল সংস্থার পরিচালক ওয়াং বিং বলেছেন, যদিও সরকার ও বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা আর্থিক,জীবন ও শিক্ষার দিক থেকে এসব অনাথকে সাহায্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সমবয়সীদের বৈষ্যম্যের কারণে তাদের সবসময় একা একা লাগে। এই প্রেক্ষিতে তারা এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এইডস সংক্রান্ত জ্ঞান ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে।

    "এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পেইচিংয়ের শিশুরা এইডস রোগী পরিবারের শিশুদের জীবনাবস্থা এবং তাদের আশা-ভরসা ভালোভাবে উপলব্ধ করেছে। বর্তমান সুখী জীবনকে আরো সযত্নে রাখা, অন্যদের ওপর আরো বেশী নজর দেয়া। এবং তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ আরো বাড়ানোর পক্ষে এসব তত্পরতা সহায়তা করবে। আসুন, আমরা মিলিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে সম্প্রতিময় সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখি।"

    বর্তমানে চীনের বহু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল তাদের দৃষ্টি নিছক শিশুদের পরীক্ষার ফলাফল থেকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে রেখেছে। কিছু স্কুল ভালবাসা সংক্রান্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে, কিছু স্কুল রোগীদের ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের কাছে চাঁদা দেয়ার তত্পরতার আয়োজন করে, কোনো কোনো স্কুল স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা গঠন করে। চীনের একটি স্কুলের হেড মাস্টার জেং রুই ফাং বলেছেন, ভালবাসার শিক্ষা ক্রমাগত ছাত্রছাত্রী ও তাদের বাবা মার প্রশংসা পেয়েছে।

    "এগুলো তত্পরতার মাধ্যমে শিশুরা ছোটবেলা থেকে বুঝতে পারে যে, অন্যদের সাহায্য করা উচিত। তা তাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।"

    নাটক অভিনয়ের সেইদিন এইডস রোগী পরিবারের ৭জন শিশুও মঞ্চে উপস্থিত ছিল। ১২ বছর বয়স্ক আ চুয়েন প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস পাঁচে পড়ে। কয়েক বছর আগে তার বাবা মা দুজনই এইডস রোগে আক্রান্ত হন। সম্প্রতি তার বাবা মারা গেছেন। সে বলেছে সে আর মাকে হারাতে চায় না।

    "আমি অতি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করব। ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হতে চাই। তখন সকল এইডস রোগীকে উদ্ধার করবো।"

    অভিনয় শেষে ছোট শিল্পীরা শিশু দর্শকদের কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছে, তারা যেন এইডস পরিবারের শিশুদের সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন করে তাদের সমবয়সী অনাথদের কিছু বই দেয়। দর্শকরা এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে তাদের প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

    "এইডস রোগের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে কত সূখী পরিবারে আর হাসি শোনা যায় না, কত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিলিন হয়ে যায়। কিন্তু হারানো ভালবাসা আবার অনুসন্ধান করা যায়। আমরা ভালবাসা ও সাহায্য দিয়ে তাদের জন্য আরেক আরামদায়ক বাড়ি গড়ে তুলবো। ভালোবাসা এখান থেকে শুরু হোক, শ্বপ্ন এখান থেকে উড়ুক।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China