v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-04 19:27:33    
ছিংহাই হ্রদের পাখি দ্বীপ

cri
    ছিংহাই হ্রদ চীনের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ লোনাপানির হ্রদ।চীনের পশ্চিমাঞ্চলের ছিংহাই প্রদেশে এই হ্রদ অবস্থিত।এই হ্রদের উত্তর-পশ্চিম দিকে দুটো দ্বীপ আছে।এ দুটো দ্বীপের চাহারা দেখতে একেবারে ভিন্ন।দূর থেকে দেখলে এ দুটো দ্বীপ যেন দু জন যমজ বোন পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ছিংহাই হ্রদের পাশাপাশি দৃশ্য উপভোগ করার জন্য প্রত্যেক বছর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করাকেও তুচ্ছ জ্ঞান করেন।শুধু ছিংহাই হ্রদের সুন্দর দৃশ্যই নয়, এই হ্রদেরপাশে দুটো দ্বীপও এ সব পর্যটককে আকর্ষণ করে থাকে।আজকের এই আসরে আপনাদের ছিংহাই হ্রদের পাখি দেখতে নিয়ে যাবো।আসরটি উপস্থাপন করছি আপনাদের বন্ধু চিয়াং চিন ছেন।

    ছিংহাই হ্রদ ছিংহাই প্রদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। রাজধানী সিনিং থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূর। সড়কের অবস্থা এখন উন্নত হয়েছে বলে সিনিং থেকে সমুদ্র-সমতলের ৩৫০০ মিটারের বেশী উচু সুর্য ও চাঁদ পর্বত অতিক্রম করে গাড়ীতে দু ঘন্টার মধ্যে ছিংহাই হ্রদের দর্শনীয়স্থানে পৌঁছানো যায়।জনসাধারণের মধ্যে ছিংহাই হ্রদ সম্বন্ধে একটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছে । এতে বলা হয়েছে, থাং রাজবংশে অর্থাত ১৩০০ বছরের বেশী সময় আগে মধ্য চীন থেকে একজন রাজকুমারী তিব্বত যাওয়ার পথে এ জায়গা পার হয়ে যান।তাঁর বা-মা আর আতীয়স্বজনের উদ্বেগ দূর করার জন্য তিনি তাঁর সংগে নেওয়া মূল্যবান আয়না আকাশের দিকে ছুড়ে দেন।এই আয়না উপর থেকে মাটিতে পড়ার পর সুন্দর ছিংহাই হ্রদে পরিণত হয়।এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হবে, এই রাজকুমারী তিব্বতের তত্কালীণ রাজাকে বিয়ে করতে ওখানে পার হয়ে গেলেন। সুতরাং তিব্বতী জনগণের মনে ছিংহাই হ্রদ একটি পবিত্র হ্রদ।কয়েক বছর পর পর তারা ছিংহাই হ্রদের পাশে সমাবেশিত হয়ে বিরাটাকারের পুজা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।ছিংহাই হ্রদের পাশে দাঁড়ালে সংগে সংগে আপনার চোখে পড়বে সবুজ পাহাড়, হ্রদের স্বচ্ছ পানি এবং পানিতে তুষারঢাকা পাহাড়ের প্রতিবিম্ব।হ্রদের চার পাশে সবুজ প্রাকৃতিক তৃণভূমি । শ্রীষ্মকালের ঘাস সবুজ চাদরের মতো মালভূমিতে বিছানো থাকে।সোনালী রংয়ের রেপ ফলের সুগন্ধ বাতাসে ভেসে যায়। পশুপালকদের তাঁবুগুলো আড়াআড়িভাবে হ্রদের চার দিকে ছড়িয়ে থাকে।সুর্য উঠা আর অস্ত যাওয়ার সময়ে ছিংহাই হ্রদের তীর অসাধারণ সুন্দর দৃশ্যে পরিপূর্ণ।আপনাদের যে পাখির দ্বীপে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি, তা নীরবে এই সুন্দর ছিংহাই হ্রদে দাঁড়িয়ে আছে।

    এই দ্বীপেঅজস্র যাযাবর পাখি বসবাস করে বলে একে পাখির দ্বীপের নাম দেয়া হয়েছে।তবে তার আসল নাম খুব কম লোকেই জানে।হ্রদের পশ্চিম দিকের যে দ্বীপের নাম হাইসিসেন, দেখতে উটের কুঁজের মতো, আয়তন প্রায় শুণ্য দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার।পুর্ব দিকের যে দ্বীপের নাম হাইবিসি, তার আয়তন প্রায় ৪ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপের ভুমি সমতল এবং ঘনঘন ঘাসে আচ্ছন্ন।স্থানীয় লোকেরা বলেছেন, প্রত্যেক বছরের মার্চ আর এপ্রিল মাসের মধ্যে পাখিগুলো চীনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এখানে এসে জড়ো হয়।কোনো কোনো প্রজাতির পাখি হাউসিসেন নামক দ্বীপে বসবাস করতে পছন্দ করে, কোনো কোনো প্রজাতির পাখি হাইসিবি নামক দ্বীপে বসবাস করতে পছন্দ করে। এ সব পাখি এ দুটো দ্বীপেআসার পর তাদের বাসা গড়ে তুলতে মহাব্যস্ত।তখন থেকে গোটা দ্বীপে লক্ষ লক্ষ পাখি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশে উড়ে আর আকাশ থেকে নামার বিনাম নেই। আকাশ আর মাটিতে কেবল পাখি আর পাখি।কিছু দিন পর গোটা দ্বীপেপাখির বাসা ছড়িয়ে পড়ে।প্রত্যেক বছরের মার্চ আর এপ্রিল মাস থেকে অকটোবর মাস পর্যন্ত এখানে পাখির স্বর্গ।

    যখন আমরা পাখির দ্বীপে পৌঁছি তখন ছিল মে মাস।তখন যে সব পাখি তাদের বাসা বেঁধেছে, সে সব পাখি ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা দিতে শুরু করেছে।দূর থেকে দেখা যায় পাখিরা হজযাত্রার মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারি সারি দ্বীপেদাঁড়িয়ে আছে।দুরবিন দিয়ে তাদের উড়ে যাওয়া আর আকাশ থেকে নেমে আসার দৃশ্য খুব ষ্পষ্টভাবে দেখা যায়।পাখির দ্বিপে প্রবেশ করলে নানা ধরনের পাখির বাসা আর ডিম সর্বত্র দেখা যায়।পাখির দ্বিপে পর্যটকদের খুব সাবধানে হাঁটতে হবে ।কেননা যদি লোকেরা পাখির বাসার কাছে আসতে চেষ্টা করে , তাহলে আকাশে পাক দেওয়া পাখিরা বোমারু বিমানগুলোর মতো পালা করে পর্যটকদের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে।আকাশে উড়ার সময়ে পাখিদের যে ডাক শোনা যায় তা অত্যন্ত ভাল লাগে।পেইচিং থেকে আসা পর্যটক ম্যাডাম ছে ছিন মনের আবেগ সামলাতে না পেরে বললেন

    ছিংহাই হ্রদ খুব সুন্দর।এখানে অজস্র পাখি আছে।পাখির দ্বীপেআমরা লক্ষ্য করছি, মানুষের সংগে অনেক পাখির খাতির হয়েছে ।অনেক পাখি দ্বীপে ডিমে তা দিচ্ছে।আমরা অনেক ছবি তুলেছি।ছিংহাই হ্রদ সত্যই চমত্কার।পাখির দ্বীপে পাখিগুলোর বসবাস আর প্রজনন করার প্রধান কারণ হলো এখানকার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভৌগলিক শর্ত আর প্রাকৃতিক পরিবেশ।এখানকার ভূবৈচিত্র সমতল, বায়ু নাতিশীতোষ্ণ, দ্বীপের তিন পাশে জল-বেষ্টিত , নীরব পরিবেশ, হ্রদ ঘাসে আচ্ছন্ন এবং হ্রদে মাছের রকমারিতা বেশী।পাখিরা নিজেদের প্রকৃতি আর ঝোঁক অনুসারে এখানে ভিন্ন ভুবৈচিত্র আর প্রাকৃতিক পরিবেশ বেছে নিয়ে নিজেদের বাসা বাঁধে।হ্রদের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য এখানকার কর্মচারীরা অনেক অবদান রেখেছেন।উনবিংশ শতাব্দীর ৬০-এর দশকের পর , গোটা পৃথিবীর আয়ু পরিবেশের পরিবর্তন ঘটার সংগে সংগে, ছিংহাই হ্রদের পানি বছরে ১০ থেকে ২০ সেটিমিটার কমে গেছে। পাখিদের এই পবিত্র জায়গা বাঁচানোর জন্য এই হ্রদে পাখির দ্বীপ সংরক্ষণ কেন্দ্র গঠিত হয়েছে।পরিচালক চি লিয়েন মিন এই কেন্দ্রে ১৪ বছর ধরে কাজ করেছেন ।তিনি বলেছেন,

    আমরা চারটি কেন্দ্র গড়ে তুলেছি।বর্তমানে আমরা পনেরো দিন পর পর গোটা ছিংহাই হ্রদে ঘুরে ঘুরে বেড়াই।আমাদের প্রধান কাজ হলো এই হ্রদের প্রবেশ পথে পাখির প্রজাতির খোঁজখবর নেয়া ।সংরক্ষন কেন্দ্রের সকল কর্মচারীর প্রয়াসে ছিংহাই হ্রদে ভ্রমন করতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের এত সৌভাগ্য হয়েছে।তারা ছিংহাই হ্রদের এত সুন্দর পাখির দ্বীপ দেখতে পারেন।এই সুন্দর পাখির দ্বিপ যেমন পাখির আমোদ-প্রমোদের উদ্যান, তেমনি ছিংহাই-তিব্বতের একটি বিস্ময় বলেও মনে করা হয়।