v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-05-03 20:43:01    
চীনের বিশ্বমুখী চলচ্চিত্রশিল্প

cri
    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অথর্নীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনের চলচ্চিত্রগুলোও বিদেশের দশর্কদের দৃষ্টি আকর্ষণকরেছে । গত বছর চীন পৃথিবীর বিশ-বাইশটি দেশ ও অঞ্চলে চীনের চলচ্চিত্র প্রদশর্নীর আয়োজন করেছে , চীনের এক শ'টিরও বেশী ছায়াছবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নিয়েছে , এগুলোর মধ্যে দশ-বারোটি পুরষ্কার পেয়েছে । ক্রমেই আরো বেশী বিদেশী বন্ধু চীনা চলচ্চিত্র দেখার মাধ্যমে চীনের সমাজ ও সংস্কৃতি জানতে পেরেছেন । আজকের সংস্কৃতি সম্ভার আসরে চীনের বিশ্বমুখী চলচ্চিত্র শিল্প সম্বন্ধে শ্রোতাবন্ধুদের কিছু বলছি ।

    গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে চীনে সংস্কার অভিযান শুরু হয়েছে , এই সংস্কার অভিযানের কল্যানে চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের পুনরুদ্ধার হয়েছে । এই মাত্র আপনারা ছায়াছবি ' হলদে মাটি '-র একটি অংশ শুনেছেন । এই ছবি গত শতাব্দীর আশির দশকে তৈরী করা হয়েছে। তখন চীনের সংস্কার অভিযান মাত্র শুরু হয় , মানুষের চিন্তাধারার মধ্যে বিধি-নিষেধ ধীরে ধীরে ভাঙ্গতে শুরু করে । চলচ্চিত্র কর্মীরা উন্মুক্ত মনে চলচ্চিত্রের নতুন পথ অনুসন্ধান করেছেন । চলচ্চিত্র ' হলদে মাটি ' -তে তাদের এই প্রচেষ্টা প্রতিফলিত হয়েছে । এই ছবিতে চীনের চলচ্চিত্র তৈরীর ঐতিহ্যিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে ছবির বিষয়বস্তু প্রকাশের নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে । এই ছবিতে উত্তর পশ্চিম চীনের হলদে মাটির বিস্তীর্ণ পল্লী অঞ্চলের সংস্কৃতি আর নতুন জীবনের প্রতি কৃষকদের আকাংখা প্রতিফলিত হয়েছে । ছবিতে বিস্তীর্ণ হলদে ভূমি , হোয়াংহো নদীর স্রোত , কৃষক পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠান , প্রখর রোদে দাড়িয়ে স্রষ্টারকাছে কৃষকদের বৃষ্টি প্রার্থনার দৃশ্য , কৃষকদের কোমর-ঢাক নাচ আর চীনের পল্লী অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় রীতিনীতির দৃশ্য আর ছবির চরিত্রের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা দেখে দর্শকরা স্বাভাবিকভাবেই চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সম্পর্কে অন্তর্দশর্ন করার চেষ্টা করেন । ছায়াছবি ' হলদে মাটি ' হাওয়াই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবসহ তিনটি আন্তর্জাতিক উত্সবে পুরস্কার জয় করেছে। এই সব পুরষ্কার তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দরুন দশ বছর বন্ধ থাকা চীনের চলচ্চিত্র শিল্পীদের বিরাট অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে ।

    এই ছায়াছবির ফোটোগ্রাফার হচ্ছেন চান ই মৌ আর পরিচালক হচ্ছেন ছেন খাই কে । সেই সময় তারা দুজন মাত্র পেইচিং চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক হন । তারা ইন্সটিটিউটে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে চলচ্চিত্র তৈরীতে নতুন তত্ব ও পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহী । চীনের চলচ্চিত্র বিদেশী দশর্কদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে চীনের পঞ্চম প্রজন্মের পরিচালকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। চীনের চলচ্চিত্রের শত বছরের ইতিহাসে চান ই মৌ , ছেন খাই কে , থিয়েন চুয়ান চুয়ান , উ চি নিউ আর হুয়াং চিয়েন সিংকে চীনের পঞ্চম প্রজন্মের পরিচালক বলা হয় । তারা গত শতাব্দীর আশির দশকে পেইচিং চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক হন । তারা চলচ্চিত্র তৈরীর তত্ত্ব ভালো করে জানেন এবং চলচ্চিত্র তৈরীর ঐতিহ্যিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে সাহসের সঙ্গে নতুন স্টাইলের ছায়াছবি তৈরী করতে চান । গত বিশ-বাইশ বছরে চীনের পঞ্চম প্রজন্মের পরিচালকরা অনেক ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন , এই সব ছবি দেশবিদেশে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করেছে ।

    চান ই মৌকে চীনের পঞ্চম প্রজন্মের পরিচালকের প্রতিনিধি বলা যায় । ' হলদে ' মাটি 'র পর তিনি ফোটোগ্রাফার থেকে পরিচালকের কাজ করতে শুরু করেন । ১৯৮৭ সালে তার পরিচালিত প্রথম ছায়াছবি ' লাল সরগম ' চীনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । এই চলচ্চিত্র একটি অদ্ভুত প্রেমের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । চীনের জাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এই ছবি সেই বছর বার্লিনে সোনালী ভল্লুক পুরষ্কার পেয়েছে । ১৯৯০ সালে চান ই মৌর পরিচালিত কাহিনী ছবি ' চু তৌ ' চীনের প্রথম ছায়াছবি হিসেবে অস্কার পুরষ্কার উত্সবে অংশ নিয়েছে । ১৯৯২ সালে চাং ই মৌর পরিচালিত ছবি ' ছিউ চুর মামলা দায়ের ' ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবে সোনালী সিংহ পুরষ্কার পেয়েছে । ১৯৯৪ সালে তার পরিচালিত ছবি ' বেঁচে থাকা ' ফ্রান্সের গানা চলচ্চিত্র উত্সবে বিচারক কমিটির পুরষ্কার পেয়েছে । একথা বলা যায় যে চাং ই মৌকে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের সাংস্কৃতিক বীর বলা যায় । তার পরিচালিত ছবিগুলোতে জীবন্তভাবে চীনা জাতির সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়েছে । তিনি ইন্সটিটিউটে আলোকচিত্র শিল্প শিখেছেন বলে তার তৈরী ছবিগুলোর দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর ।

    চাং ই মৌ ছাড়া ছেন খাই কেও পঞ্চম প্রজন্মের পরিচালক । ১৯৯৩ সালে তার পরিচালিত ' রাজার উপপত্নী বিদ্যায় ' –তে একদল পিকিং অপেরা অভিনেতা অভিনেত্রীর সুখ-দুঃখ বণর্না করা হয়েছে । এই ছবি তার সুন্দর দৃশ্য ও মমর্স্পশী কাহিনীর জন্য ফ্রান্সের ' সোনালী তাল ' পুরস্কার পেয়েছে ।

    ২০০২ সালে চাং ই মৌ ' বীর ' নামে একটি কুংফু ছবি তৈরী করেন । এই ছবিতে দুহাজার বছর আগের যুদ্ধমান রাজ্যসমুহের আমলের একটি কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । ২০০৪ সালে তিনি ' ছুরি ছোড়া সম্প্রদায় ' নামে আরেকটি কুং ফু ছবি পরিচালনা করেন । এই দুটি কুং ফু ছবি বিদেশে দেখানোর সময় অজস্র বিদেশী দশর্কদের ভীড় জমে । ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে চীনা কুং ফু ছবি ' বীর ' দেখানোর প্রথম দিন টিকিটের আয় ছিল ৮৬ লক্ষ মার্কিন ডলার ।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব এশিয়া গবেষনা কেন্দ্রের প্রফেসার স্টেলি রোসেন বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা ছায়াছবির জনপ্রিয়তা আছে । বিশেষ করে ' বীর ' , ' ছুরি ছোড়া সম্প্রদায় ' আর ' কুং ফু '-র মতো ছবি দর্শকরা দেখতে পছন্দ করেন । কারণ এই সব ছবি বিখ্যাত পরিচালক তৈরী করেছেন এবং ছবিতে অভিনেতা- অভিনেত্রীও পরিচিত তারকা । চাং ই মৌয়ের পরিচালিত ছায়াছবি বিদেশী দশর্কদের আকাংখা পূরণ করেছে , তারা মনে করেন , ভালো চীনা ছবি ' বীর '-এর মতো চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছবি হওয়া উচিত ।

    একই সময় চীনা ছায়াছবি এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও সমাদৃত হয়েছে । চীনের প্রতিবেশী দেশ জাপানে পরিচালক হো চিয়েন ছির পরিচালিত ছবি ' ঊষ্ণ ' মমতা দিয়ে দশর্কদের মুগ্ধ করেছে । এই ছবি জাপানের ষষ্ঠদশ টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে ' সোনালী কিলিন ' পুরষ্কার পেয়েছে । তার আর একটি ছবি ' ঐ পাহাড় , মানুষ ও কুকুর 'ও দশর্কদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । এই ছায়াছবিতে পারিবারিক সম্পর্ক , বিশেষভাবে বাবা ও ছেলের সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে । একজন জাপানী বন্ধু চীনে এসে এই ছবির ভিসিডিতে স্বাক্ষর করতে পরিচালক হো চিয়েন ছিকে অনুরোধ করেন। তিনি পরিচালক হো চিয়েন ছিকে বলেছেন , জাপানের পুরুষরাও বাবার পিঠ দেখে বড় হয় , তাই এই ছবির কাহিনী তাকে মুগ্ধ করেছে ।

    বর্তমানে চীনের নতুন প্রজন্মের পরিচালক অর্থাত্ ষষ্ঠ প্রজন্মের পরিচালকরা বেশ তত্পর রয়েছেন । তারা গত শতাব্দীর ষাটের দশকে জন্মগ্রহন করেন , তাদের তৈরী ছায়াছবিগুলোতে গত বিশ-বাইশ বছরে চীনের পরিবর্তন আর সাধারণ চীনা নাগরিকদের জীবন প্রতিফলিত হয়েছে । তাদের বেশ কয়েকটি ছায়াছবিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে পুরষ্কার পেয়েছে ।