চীনে মাইদোনাল্ডস ও কে এফ সির মত পশ্চিমা কুইক ফুড দিন দিন জনসাধারণের মধ্যে সমাদর পাচ্ছে । একই সংগে এর বিরোধিতার আওয়াজও প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে । মাইদোনাল্ডসের সমর্থকরা বলছেন , এই খাবার ছেলেমেয়েদের জন্যে সুস্বাদু ও আনন্দদায়ক ছেলেবেলা যুগিয়ে দিয়েছে । কিন্তু অন্য কিছু সংখ্যক লোক বলছেন , বাস্তবে মাইদোল্ডস শিশুদের জন্যে একটি মোটা ও রোগগ্রস্ত ছেলেবেলা যুগিয়ে দিয়েছে । চীনের কোনো কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি পশ্চিমা কুইক ফুডজনিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন । তারা প্রয়োজনীয় উপায় দিয়ে পশ্চিমা কুইক ফুডের সম্প্রসারণে হস্তক্ষেপ করার আহবান জানিয়েছেন । আককের অনুষ্ঠানে এই সম্বন্ধে কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।
চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত একটি মাইদোল্ডসে আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন , যারা এখানে খেতে এসেছেন , তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিল ছেলেমেয়ে । আমাদের সংবাদদাতা দুজন ছোট খদ্দেরের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । একজন বলেছে ,
বাবা আমাকে মাইদোল্ডসে নিয়ে আসলে আমি খুশী হবো । কেন না , এখানকার খাবার সুস্বাদু ও মিষ্টি। মাঝেমধ্য খেলনাও উপহান দেয়া হয় ।
অন্য একজন ছোট খদ্দের বলেছে , আমার বেশ ভালো লাগে । কারণ এই খাবারের মধ্যে মুরগির পাখা আছে । আমি মুরগির পাখা খেতে খুব পছন্দ করি । মাইদোল্ডসে মাখনও আছে । এই দুটোই আমার প্রিয় খাবার ।
এসব ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া ব্যস্ত জীবনে বসবাসকারী তরুণ তরুণীরাও প্রায় মাইদোল্ডস ও কে এফ সির মত পশ্চিমা কুইক ফুডের দোকানে আসেন । কিছু সংখ্যক মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্র এবং প্রেমিক প্রেমিকারা এসব দোকানে খাওয়ার সংগে সংগে গল্প করতে পছন্দ করেন । সেজন্যই চীনের বহু পশ্চিমা কুইক ফুডের দোকানের ব্যবসা বেশ সরগরম রয়েছে ।
এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, গত বছরের শেষ নাগাদ চীনে মাইদোল্ডসের সংখ্যা ৭০০টিতে উন্নীত হয়েছে । ২০০৪ সালের শেষ নাগাদ চীনে কে এফ সির সংখ্যা ১ হাজার দু শ' ছাড়িয়ে গেছে । তার পাশাপাশি চীনে পিজাহাট ও ওরিজিন্যালের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে ।
চীন ও অন্যান্য দেশে এসব পশ্চিমা কুইক ফুড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সংগে সংগে মাইদোল্ডসের জন্মভূমি- যুক্তরাষ্ট্রের মুওগেন নামক একজন যুবক মাইদোল্ডসের বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন ।
২০০৪ সালে এক মাসের মধ্যে মুওগেন প্রতিদিন কেবল মাইদোল্ডসের খাবার ও পানীয় খেতেন । এক মাসের মধ্যে তাঁর ওজন ১২ কিলোগ্রাম বেড়েছে এবং তাঁর শরীরের সামর্থ্যে এলোমেলো অবস্থা দেখা দিয়েছে । মুওগেন তাঁর শরীরের এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে ভিত্তি করে একটি প্রামান্য চিত্র তৈরি করেছেন । তিনি এই চিত্রের মাধ্যমে সকলকে জানাতে চান যে, আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত কুইক ফুডও জনসাধারণের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে তুলছে । তাঁর এই চিত্র একটি সুবিখ্যাত আন্তর্জাতিক চলচিত্র উত্সবে বড় পুরস্কার লাভ করেছে ।
চীনে মুওগেনের মত মাইদোল্ডস-বিরোধী লোকদের সংখ্যাও বাড়ছে । চীনের অন্যতম গণতান্ত্রিক পার্টি- গণতান্ত্রিক দেশগঠন সমিতির চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য চাং চিয়াও ও চীনের পুষ্টি সমিতির উপমহাসচিব ইয়াং ইউ সিন হচ্ছেন তাদের মধ্যে দুজন ।
২০০৩ সালের গোড়ার দিকে চাং চিয়াও টেলিভিশন থেকে একটি ছোট মেয়ের কাহিনী দেখেছেন । মাইদোল্ডসের একটি পুরস্কার লাভের জন্যে এই মেয়ে পুরো এক মাস ধরে হ্যামবার্গার খেয়েছে । মিস্টার চাং বলেছেন ,
এই পুরস্কার দানের উপায় হলো নির্দিষ্ট পরিমাণের খাবার খেলেই কেবল একটি হাতঘড়ির বেল্ট পাওয়া যাবে । কতকগুলো বেল্ট পেলেই কেবল একটি হাতঘড়ি পাওয়া যাবে ।এই ছোট মেয়ে এমন একটি ঘড়ি পেতে খুবই উদ্গ্রীব । তাই সে প্রাণপণে পশ্চিমা কুইক ফুড খেতে শুরু করেছে ।
ম্যাডাম ইয়াং ইউ সিন বহু বছর ধরে পুষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আসছেন । তিনি মনে করেন , পশ্চিমা কুইক ফুড আসলে বর্জ্য খাবার । তিনি বলেছেন ,
আমি কেন পশ্চিমা কুইক ফুডকে বর্জ্য খাবার বলছি । তার কারণ , মাইদোল্ডস, কে এফ সি ও পিজাহাটের খাবারগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত হিট খুয়ানটিটি , চর্বি ও প্রোটিন রয়েছে । তাছাড়া এসব খাবারের প্রকার সংখ্যাও খুবই সীমিত । যারা যতবার পশ্চিমা কুইক ফুডের দোকানে যান , তাতদের ততবার মোটা হওয়ার সুযোগ বেশি হবে ।
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী চীনে মোটা লোকদের অনুপাত উর্ধমুখী । পেইচিংয়ের রাস্তায় আমরা সহজে দেখতে পাই , মোটা মোটি ছেলেমেয়েরা বহুকষ্টে চলাফেরা করছে । ইয়াং ইউ সিন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, মাইদোল্ডসের পশ্চিমা কুইক ফুড চিরকাল শিশু-কিশোরদের খাওয়া-দাওয়ার স্বাদের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং খুব সম্ভবত কোনো কোনো ছেলেমেয়ে চিরকাল মোটা রোগের কালো ছায়ায় জীবন যাপন করবে ।
১৯৯৫ সালে ইয়াং ইউ সিন পশ্চিমা কুইক ফুডের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন । তারপর গত ১১ বছর ধরে তিনি বরাবরই এই মনোভাব পোষণ করছেন যে, এসব খাবার স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকীস্বরুপ । তবে পশ্চিমা কুইক ফুডের ফলাও বিজ্ঞাপনের তুলনায় ইয়াং ইউ সিনের আওয়াজ খুবই নগণ্য ।
ম্যাডাম ইয়াং মনে করেন , মাইদোল্ডসের সম্প্রসারণ রোধের জন্যে আইন প্রণয়নের ওপর নির্ভর করতে হবে । তিনি জানতে পেরেছেন , অস্ট্রেলিয়া ও বৃটেনে টেলিভিশনের সুবর্ণ সময়ে অতিরিক্ত হিট খুয়ানটিটি ও চর্বিবিশিস্ট কুইক ফুডের বিজ্ঞাপনের প্রচার নিষেধ করার জন্যে আইন জারি করেছে । তবে চীনে এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই ।
চীনের গণ রাজনৈতিক পরমর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য চাং চিয়াও বলেছেন, পশ্চিমা কুইক ফুড শিশু ও কিশোরদের স্বাস্থ্যের ওপর দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে । সেই খাবারগুলোর ওপর সরকারী সংস্থার তত্ত্বাবধান জোরদার করর উচিত । তিনি বলেছেন ,
আমাদের শিশু ও কিশোরদের ওপর পশ্চিমা কুইক ফুডের প্রভাবের ওপর উচ্চতর গুরুত্ব দিতে হবে । বিশেষ করে এই সমস্যা সম্বন্ধে সরকারী সংস্থাকে আগেভাগে সতর্ক থাকতে হবে ।
এতক্ষণ পশ্চিমা কুইক ফুডজনিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শুনলেন ।
|