ছেং চিং ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জীববিদ্যার হাইটেক কোম্পানির প্রধান গবেষক এবং আন্তর্জাতিক জীববিদ্যা প্রযুক্তি মহলের প্রভাবশালী ব্যক্তি। আট বছর আগে তিনি এক মহত্ উদ্দেশ্যে বিদেশে উচ্চ বেতন ও উত্কৃষ্ট কর্মপরিবেশ ছেড়ে দিয়ে স্বদেশে ফিরে চীনের প্রথম জীববিদ্যার হাইটেক কোম্পানি--- বোআও জীববিদ্যা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সালে বোআও জীববিদ্যা কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের 'ফোরচুন' পত্রিকায় " বিশ্বে উন্নয়নের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় জীববিদ্যা প্রযুক্তি কোম্পানি" নির্বাচিত হয়েছে।
১৯৮৮ সালে তিনি ব্রিটেনে লেখাপড়া করতে যান। ১৯৯২ সালে ব্রিটেনের স্ট্র্যাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তার পর তিনি পর্যায়ক্রমে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জীববিদ্যার হাইটেক কোম্পানিতে প্রধান গবেষক ইত্যাদি পদে নিযুক্ত হন। চীনের জীববিদ্যা প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য তিনি বিদেশের উচ্চ বেতন ছেড়ে দিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "আমি মনে করি, দেশে কাজ করার জন্য ফিরে এলে আয় কমে যাবে । কিন্তু অন্য দিকে বলতে গেলে জীববিদ্যা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের শূণ্যতা পূরণের জন্য আমি দেশে ফিরে এলাম।"
দেশে ফিরে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থনে ছেং চিং আন্তর্জাতিক মানের জীববিদ্যার চিপ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার পর তিনি চীন সরকারের কাছে জাতীয় পর্যায়ের জীববিদ্যার চিপ ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন। সরকারের আর্থিক সাহায্যে এবং অনুকূল সরকারী নীতির কল্যাণে জীববিদ্যার চিপ গবেষণা ও উন্নয়নের বোআও কোম্পানি ২০০০ সালে পেইচিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছেং চিং এই কোম্পানির প্রেসিডেণ্ট হন।
বোআও জীববিদ্যা কোম্পানির সিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার ওয়াং সিয়েন হুয়া বলেছেন, ছেং চিং তাঁর এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই তার উন্নয়নের জন্য এক দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। তার প্রধান লক্ষ্য হলো স্বকীয় মেধাস্বত্বের মূল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা,যাতে চীন বিশ্বের জীববিদ্যা প্রযুক্তির " ল্যাবরাটরীতে" পরিণত হতে পারে এবং নিছক "ওয়ার্কশপ" হবে না। ওয়াং সিয়েনহুয়া বলেছেন, "আমি মনে করি, ছেং চিংয়ের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট, বোআও কোম্পানিকে শুধু একটি ওয়ার্কশপে পরিণত করা হবে তা নয়, বরং তাকে বিশ্বের জীববিদ্যা প্রযুক্তির ' ল্যাবরাটরি' হিসেবে একটি হাইটেক কোম্পানিতে পরিণত করা হবে । মূল কথা হলো তাকে এক স্বকীয় উদ্ভাবনকারী জীববিদ্যা প্রযুক্তি কোম্পানিতে পরিণত করতে হবে ,যাতে তা বিদেশের অনুরূপ কোম্পানির সমকক্ষ হতে পারে।"
বোআও কোম্পানি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু উন্নত মানের জীববিদ্যা প্রযুক্তি ও দ্রব্য উদ্ভাবন করেছে গবেষণার সুফলকে শিল্পে বাস্তবায়ন করেছে এবং এটা এক আন্তর্জাতিক শিল্পে পরিণত হয়েছে। বোআও কোম্পানি উদ্ভাবন করেছে এক রকম জীববিদ্যার চিপ যা ওষুধের নানা উপাদান বিশ্লেষণ ও বাছাইয়ের ব্যাপারে ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানি যেমন জনসন এণ্ড জনসন কোম্পানি , ফাইজার কোম্পানি এবং মার্ক কোম্পানি এই চিপ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। বোআও কোম্পানি তার ৮টি জীববিদ্যার পেটেণ্ট-সম্পন্ন প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করেছে এবং শেয়ার হিসেবে এই প্রযুক্তি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পুঁজি বিনিয়োজক হিসেবে যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের এভিভা জীববিজ্ঞান কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে।
কোম্পানির গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন সম্পর্কে ছেং চিং বলেছেন, " বোআও কোম্পানি চীনের জীববিদ্যা প্রযুক্তির শুণ্যতা পূরণ করে নতুন ধারণাকে চূড়ান্ত উত্পাদনমূল্যে পরিণত করেছে । কোম্পানির বিগত ৫ বছরের পথ এক বেশ কষ্টকর প্রক্রিয়া। এ পর্যন্ত আমরা ৮০টি বিষয়ে পেটেণ্ট আবেদন করেছি এবং তার তিন ভাগের দু ভাগ সারা বিশ্বে আবেদন করেছি। বিদেশে আমরা ১০টি বিষয়ে পেটেণ্ট পেয়েছি, দেশে ২০টিরও বেশি পেয়েছি। তা'ছাড়া আমাদের আছে বিভিন্ন রকম চিপ, মাপযন্ত্র, সফ্টওয়্যার এবং ডাটা ব্যাংক ইত্যাদি শতাধিক দ্রব্য।"
পাঁচ বছরের অল্প সময়ে বোআও কোম্পানির বিক্রয়মূল্য তিন গুণ বেড়েছে । কোম্পানির কর্মীদের সংখ্যা কয়েক জন থেকে বেড়ে প্রায় চার শো জন হয়েছে। প্রথম দিকে শুধু গবেষক ছিলেন , এখন গবেষণাভিত্তিক উন্নয়ন, বিক্রয় আর ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মীদের সংখ্যা সুষমভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে বেশ কিছু বিদেশে ডিগ্রী অর্জনকারী রয়েছেন। তাঁদের যেমন আছে বিদেশের কোম্পানিতে চাকরি করার অভিজ্ঞতা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা, তেমনি আছে চীনা বাজার ও সংস্কৃতি ভাল জানার সুবিধা।
তাঁদের একজন বিশিষ্ট প্রতিনিধি হলেন চু সিয়াও সিয়াং । তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসা বিজ্ঞানী, এখন বোআও কোম্পানিতে বাজার উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জানিয়েছেন , বর্তমানে এই কোম্পানি ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের ড্রাগ পরীক্ষার কাজে ব্যবহার্য জীববিদ্যাগত চিপ গবেষণা ও উন্নয়ন করছে। নিষিদ্ধ ওষুধ খেয়ে ক্রীড়াপ্রতিযোগিতার ফল বাড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা তাতে ব্যর্থ হতে বাধ্য। এই কোম্পানির চিপ ড্রাগ পরীক্ষার গতি দ্রুততর করে এবং খরচও বিরাটমাত্রায় কমানো যাবে। চু সিয়াও সিয়াং দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছেন, " আমরা ২০০৮ সালে এ রকম দ্রব্য বের করবো বলে আশা করছি, এবং অলিম্পিক গেমসে ড্রাগ পরীক্ষার দায়িত্ব নেবো। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত ।"
বোআও কোম্পানির প্রেসিডেণ্ট ছেং চিং বলেছেন, " ভবিষ্যতে আমরা শুধু জীববিদ্যার চিপ নয়, বরং জীবন বিজ্ঞানের গোটা ক্ষেত্র পর্যন্ত এই কোম্পানির গবেষণা ও উন্নয়ন সম্প্রসারণ করবো,যেমন রোগ নির্ণয়, খাদ্যের নিরাপত্তা পরীক্ষা ইত্যাদি থেকে শুরু করে অবশেষে চিকিত্সার দিক পর্যন্ত বিকাশ লাভ করবো, অর্থাত্ ওষুধপত্র উন্নয়ন করবো।"
|